হবিগঞ্জ-৪

নির্বাচনী এলাকায়ও তুমুল জনপ্রিয় ব্যারিস্টার সুমন

সালাহ উদ্দিন জসিম
সালাহ উদ্দিন জসিম সালাহ উদ্দিন জসিম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হবিগঞ্জ থেকে ফিরে
প্রকাশিত: ১০:৪৫ এএম, ১৫ অক্টোবর ২০২২
ব্যারিস্টার সুমন ও নির্বাচনী এলাকায় তার নির্মিত সেতু

জনগণের সমস্যা যেখানে ব্যারিস্টার সুমন সেখানে। নিজ এলাকা কিংবা এলাকার বাইরে- সবখানে সরব তিনি। বিশেষ করে নানামুখী সমস্যা নিয়ে ফেসবুক লাইভের কল্যাণে সারাদেশের মানুষ তাকে চেনেন। হাইকোর্ট, খেলার মাঠ, ভাঙা ব্রিজ, রাস্তার মাঝের খুঁটি কিংবা হাঁটুজলে নেমেও লাইভে যাওয়ার বাতিক তার। শুধু লাইভে গিয়েই শেষ নয়, নিজের অর্থ খরচ করে অনেক সমস্যার সমাধানও দেন তিনি। যার প্রমাণ মিলেছে তার নির্বাচনী এলাকা ঘুরেও। এর বাইরে একটি ফুটবল একাডেমি রয়েছে তার। সারাদেশে এরই মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে তার একাডেমি।

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরেজমিনে হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট ও মধাবপুর) ঘুরে দেখা যায় সুমনের নানান কীর্তি। সাধারণ মানুষ বলছে, ‘যদি স্বতন্ত্র থেকেও নির্বাচন করেন ব্যারিস্টার সুমনই পাস করবেন।’

জানা যায়, আসন্ন নির্বাচনে এই আসনে বর্তমান এমপি, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এবং চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকবর হোসেন জিতু মনোনয়ন চান।

এ বিষয়ে কথা হয় ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমি গত দুবার মনোনয়ন চেয়েছি। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে অনেক দিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছি। আমি মূলত তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করি। আমাকে দিলে লোকজন এটা মনে করে যে, সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে পাস করবো। তারপরও আপনারা এলাকা ঘুরে দেখেন। তাহলেই প্রকৃত তথ্য পাবেন।’

কারও বিপদে এভাবেই লাইভে চলে যান সুমন

ভোটের হিসাব-নিকাশ নিয়ে চায়ের আড্ডায় কথা হয় চুনারুঘাটের পানছড়ির কাছে ঢেউয়াতলী বাজারে একদল নবীন ও প্রবীণ ভোটারের সঙ্গে। ফার্নিচার ব্যবসায়ী সুভাষ দেবনাথ, কৃষক আবদুর রহমান, ফার্নিচার মিস্ত্রি ওসমান গণি, ড্রাইভার মানিক মিয়া, গাছি (লাকড়ি কুড়ায়) আব্দুস সোবহান ও বাবুর্চি মো. রুবেল মিয়া খোলামেলা আলাপ করেন এ নিয়ে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির অবস্থান, প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা ও এলাকায় সম্পৃক্ততা নিয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে।

আলোচনায় তারা বলেন, এখানে সব সময় নৌকা পাস করে। ব্যক্তির চেয়ে নৌকার জনপ্রিয়তা বেশি। তবে তারা মনে করেন, এখানে নৌকার বাইরে একজনই পাস করতে পারেন, তিনি ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। এলাকায় কাজ করে তিনি তুমুল জনপ্রিয়।

ফার্নিচার ব্যবসায়ী সুভাষ দেবনাথ বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বর্তমান এমপি মাহবুব আলী বছরে দু-একবার আসেন। প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান, পরে আর কাজ দেখি না। কিন্তু সুমন ভাই (ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন) যা বলবেন নিজেই গোড়াত থাকি (স্পটে থেকে) করেন।’

সুভাষ দেবনাথ একটা কাজের স্মৃতিচারণ করে করে বলেন, ‘এক বছর আগে রাজাবাজারে একটা বাচ্চা বাঁশের সাঁকো থেকে পড়ে মারা যায়। সুমন ভাই আমাকেসহ গিয়ে ওখানে ব্রিজ করে দিয়েছেন। ভয়ে কেউ যায় না, নামে না। উনি নিজে নেমে কাজ করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে আগুনে ১০টি ঘর পুড়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে সুমন ভাই চলে আসেন। ওখানে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সহযোগিতায় ঘর করে দেওয়ার কথা। বিভিন্নজন বিভিন্ন জিনিস দেওয়ার কথা বলছে। বাকি ছিল টিন। সুমন ভাই বলছেন, টিন আমি দিয়ে দেবো।’

‘এলাকায় তিনি তরুণদের নিয়ে ব্রিজ-কালভার্ট নিজের টাকায় করেন। তরুণদের নিয়ে খেলেন, তাদের পুরস্কার দেন। এ কারণে সবার কাছে এখন প্রিয় হয়ে গেছেন সুমন ভাই।’ যোগ করেন এই ব্যবসায়ী।

সুভাষ দেবনাথের কথায় সুর মিলিয়ে সুলতানপুরের আবদুর রহমান জানান, তিনিও সুমনের সঙ্গে শ্রম দিয়ে ব্রিজ করেছেন।

ব্যারিস্টার সুমনের ফুটবল টিম

ফার্নিচার মিস্ত্রি ওসমান গণি বলেন, ‘একেকটা কাঠের ব্রিজে করতে দেড় দুই লাখ টাকা লাগে। সব সুমন সাহেব দেন। যে লোক ভালো তারে তো মার্কা দেওয়া হয় না।’

পাশ থেকে ড্রাইভার মানিক মিয়া বলেন, ‘ব্যারিস্টার সুমন মার্কা ছাড়া খাঁড়াইলেও পাস করবে। তাইনে (তিনি) খাঁড়াইলে কোনো মার্কাই পাস করবে না।’

চুনারুঘাটের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ব্যারিস্টার সুমনের কর্মযজ্ঞ চোখে পড়ে। রামগঙ্গা চা বাগান পার হওয়ার সময় চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ। সাইনবোর্ডে লেখা- রামগঙ্গা বাগানবাসীর জন্য ৩৬তম ব্রিজ উপহার, সৌজন্যে ব্যারিস্টার সুমন।

স্থানীয়রা জানান, এভাবে বিভিন্ন এলাকায় পাকা বা কাঠের ব্রিজ করে দিয়েছেন তিনি। মানুষের বিপদ-আপদে ডাকলেই পাওয়া যায়।

তবে নিজের অবস্থান নিয়ে আশাবাদী বর্তমান এমপি মাহবুব আলী। তিনি মনে করেন, তিনি এলাকায় ভালো কাজই করেছেন। সে কারণে গত দুবার যেভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছেন, আগামীতেও পারবেন।

তার দাবি, গত মাসেই চার-পাঁচবার এলাকায় গেছেন। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকে এরচেয়ে বেশি তো যেতে পারেন না।

এদিকে, চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকবর হোসেন জিতুও মনে করেন তিনি এই আসনে মনোনয়নের হকদার।

তিনি বলেন, ‘এই আসনে মনোনয়নে আমি হকদার। গতবারই তো পাইতাম। ২০০১ সাল থেকে মনোনয়ন চেয়েছি। নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) আমাকে ২০০১ সালেই চিঠি দিয়ে বলেছেন আমাকে দেবেন। তখন এনামুল হক মোস্তফা শহীদ সাহেবকে মনোনয়ন আর আমাকে চিঠি দিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছেন। বলেছেন, ভবিষ্যতে আপনাকে মূল্যায়ন করা হবে।’

চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৪২ নম্বর আসন হবিগঞ্জ-৪। এতে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৭ হাজার ৫২৫। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৩ হাজার ও ২৯৪ নারী ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ২৩১।

এ আসনটিতে স্বাধীনতার পর দুবার জাতীয় পার্টির এমপি ছিল। পরে আওয়ামী লীগের হাতে এলে আর হাতছাড়া হয়নি। ’৯১ থেকে চারবারের এমপি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ। তার মৃত্যুর পর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী গত দুবারের এমপি। ভোটের হিসাবে এখানে সব সময় আওয়ামী লীগ এগিয়ে, বিএনপি ৪০ শতাংশ ভোট পেলে আওয়ামী লীগ পায় ৫০ শতাংশ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৮) আওয়ামী লীগের মাহবুব আলী পান ৩ লাখ ৮ হাজার ৭২৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট শরিক খেলাফত মজলিশ মহাসচিব আহমেদ আব্দুল কাদের ৪৬ হাজার ১৮৩ ভোট পান।

চায়ের আড্ডার আলোচনায়ও থাকে সুমনের নাম

১০ম সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) আওয়ামী লীগের মাহবুব আলী নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ২২ হাজার ৪৩৩ ভোট পান। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ তানভীর আহমেদ তালা প্রতীকে পান ১৪ হাজার ৭৬০ ভোট।

৯ম সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) আওয়ামী লীগের এনামুল হক (মোস্তফা শহীদ) নৌকা প্রতীকে পান ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৯৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সাল ধানের শীষ প্রতীকে পান ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৮৮ ভোট।

৮ম সংসদ নির্বাচনে (২০০১) আওয়ামী লীগের এনামুল হক (মোস্তফা শহীদ) নৌকা প্রতীকে পান ১ লাখ ৭ হাজার ৩৭৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সাল ধানের শীষ প্রতীকে পান ৯৩ হাজার ৩১ ভোট।

৭ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬) আওয়ামী লীগের এনামুল হক (মোস্তফা শহীদ) নৌকা প্রতীকে ৭০ হাজার ২৪০ ভোট পান। বিএনপির সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সাল ধানের শীষ প্রতীকে পান ৫৯ হাজার ৬৬৬ ভোট।

৫ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১) আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক (মোস্তফা শহীদ) নৌকা প্রতীকে পান ৬৭ হাজার ৮৪৭ ভোট। তার নিকটতম বিএনপির সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সাল পান ৫১ হাজার ৬৯৪ ভোট।

এসইউজে/এএসএ/এএসএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।