হবিগঞ্জ-৩
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে ৪ জন, এগিয়ে আবু জাহির
হবিগঞ্জ-৩। জাতীয় সংসদের ২৪১ নম্বর আসন। সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটিতে নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। বেশ সক্রিয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। জনগণের পাশাপাশি নিজ দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন নেতারা। তিনবারের এমপি আবু জাহিরের দাপট বেশি। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন সাংবাদিকসহ আরও তিনজন।
জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র সব জায়গায় পড়ছে এর আঁচ। সক্রিয় হচ্ছেন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতা আছে শিল্পাঞ্চলখ্যাত হবিগঞ্জেও।
হবিগঞ্জ-৩ আসন (সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা) ঘুরে নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে ফের মনোনয়ন চাইবেন টানা তিনবারের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু জাহির। নেতাকর্মীরা বলছেন, এখানে দলীয় অবস্থান ও আধিপত্য তারই। মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাও তারই বেশি।
আবু জাহিরের বাইরেও এখানে মনোনয়ন চান পৌর আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোতাচ্ছিরুল ইসলাম। তিনিই এখানে আবু জাহিরের বাইরে শক্ত বলয় গড়েছেন। উপজেলায় নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছেন তিনি।
এই আসনে মনোনয়ন চান আবু জাহিরের সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা প্রবীণ নেতা আবুল হাশেম মোল্লা মাসুম। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের দুবারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা নারী এবং শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি)। আবুল হাশেম মোল্লা মাসুম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি নৌকার প্রার্থী। আমাকে দিলেও আমি আছি, না দিলেও আছি। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকা দেবেন, তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো।’
এছাড়া নানা কারণে আলোচিত সাংবাদিক সুশান্ত দাসগুপ্তও এই আসনের মনোনয়ন চান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি গতবারও প্রার্থী ছিলাম। এবারও প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ আছে।’ তবে তিনি লন্ডনে বার অ্যাট ল’ করছেন। তার নিজস্ব টিম এলাকায় কাজ করছে। ২০২৩ সালের জুনে দেশে এসে অ্যাকটিভ হবেন বলে জাগো নিউজকে জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট আবু জাহির জাগো নিউজকে বলেন, আমি ৪২ বছর এই জেলার নেতৃত্বে। ছাত্রলীগে ১২ বছর, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ১০ বছর, সাধারণ সম্পাদক ১০ বছর এবং দুই মেয়াদে (প্রায় ১০ বছর) সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। পাশাপাশি গত প্রায় ১৪ বছর আমি এই হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি। এই ৪২ বছর আমি আমার সহযোদ্ধা সহকর্মীদের নিয়ে জনগণের পাশে ছিলাম।
‘জাতীয় সরকারের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে মানুষকে আকৃষ্ট করতে আমি কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, যেগুলো এরই মধ্যে বাস্তবায়নও করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী দিনেও এই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। মানুষ এখন আবার নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব। মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রাখে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আওয়ামী পরিবার ঐক্যবদ্ধ আছি। দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ নামের খ্যাত হবিগঞ্জ ২০০১ সালেও চারটি আসন আওয়ামী লীগকে দিয়েছে। এখনো এই ধারা অব্যাহত আছে, আগামী দিনেও থাকবে।’
স্থানীয়রা বলছেন, এই আসনে সবকিছুতেই এমপির আধিপত্য। উপজেলা প্রশাসন, থানাসহ সব অফিস এমপির ইশারায় চলে। এখানে অন্য কারও হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৬ হাজার ৫৯৩। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯৯ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৯৪। গত একাদশ (২০১৮ সালে) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের আবু জাহির ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৩ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির জি কে গউস ৬৮ হাজার ৭৮ ভোট পান।
২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ১০ম সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আবু জাহির ৯৮ হাজার ১৫৫ ভোট পান। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান। তিনি লাঙল প্রতীকে পান ২০ হাজার ৮৩৭ ভোট।
২০০৮ এর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৭০ শতাংশ এবং বিএনপি ২৭ শতাংশ ভোট পায়। ২০০১ এ আওয়ামী লীগ পায় ৪৭ শতাংশ এবং বিএনপি ৩৯ শতাংশ ভোট।
ভোটের হিসাবে এখানে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান আছে। তবে বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছিল নানা সময়।
এসইউজে/এএসএ/এমএস