হবিগঞ্জ-১
বিএনপির ভরসা শেখ সুজাত, ‘গলার কাঁটা’ জেলায় বিভক্তি
নবীগঞ্জ উপজেলা ও বাহুবল উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৩৯তম আসন হবিগঞ্জ-১। স্বাধীনতার পর আটবারের নির্বাচনে এই আসনে পাঁচবারই জয়ী আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি, জাসদ ও বিএনপিরও জয়ের রেকর্ড রয়েছে। বিএনপি থেকে এ আসনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা শেখ সুজাত মিয়া। তৃণমূলেও তার জনপ্রিয়তা আছে। বাধা শুধু দলের মধ্যে বিভাজন। আবার জোট হলে মনোনয়ন পেতে পারেন গণ অধিকারের ড. রেজা কিবরিয়া। তৃণমূলের নেতারা মনে করছেন এমনটা।
আওয়ামী লীগের ঘাঁটিখ্যাত এ আসনে বিএনপিতে শেখ সুজাত মিয়ার বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি বলে মনে করেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। উপ-নির্বাচনে ২০১১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন। অপরদিকে, দেওয়ান ফরিদ গাজীর মৃত্যুর পর এ আসনে আওয়ামী লীগের কেউ সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি। আবার গণ অধিকার পরিষদের ড. রেজা কিবরিয়ারও জনপ্রিয়তা রয়েছে।
জেলা বিএনপিতে বিভাজন
দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, জেলা বিএনপির চেইন অব কমান্ড ভেঙে গেছে। জেলা বিএনপির কোনো কার্যালয় নেই। সাধারণ সম্পাদক জি কে গউছ শহরের শায়েস্তানগরে তার ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালান। তিন পক্ষ আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করে। এই তিন পক্ষের নেতৃত্বে যথাক্রমে জি কে গউছ, এনামুল হক ও আমিনুর রশিদ এমরান। প্রথম দিকে এনামুল ও এমরান একসঙ্গে ছিলেন, পরে তারাও বিভক্ত হন।
তিন অংশই দলীয় কর্মসূচি পালন করে, তবে আলাদাভাবে। জি কে গউছের ডাকা সভা-সমাবেশে অন্য দুই অংশের নেতা-কর্মীদের দেখা যায় না। জেলা বিএনপির তিন ধারার প্রভাবে যুবদল ও ছাত্রদলও বিভক্ত।
স্থানীয়রা বলছেন, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপিতে ত্রিমুখী বিভাজন রয়েছে। এর প্রভাব রয়েছে পুরো এলাকাজুড়ে। সত্যিকার অর্থে বিএনপি যদি বিভাজন কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে তাহলে জয়ের মালা তাদের হবে।
সম্প্রতি আসনটির মিরপুর ইউনিয়নের মিরপুর বাজারে নুরুল আমিন নামে এক প্রবাসীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এ আসনে বিএনপির শেখ সুজাত মিয়া ছাড়া অন্য কেউ নেই। এখানে তার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। আমাদের এখানে ভোটকেন্দ্রে নৌকা পাস করে। আগামীতে ফলাফল ভিন্নও হতে পারে।
বাজারের চা দোকানি জব্বার বলেন, শেখ সুজাত পাস করতে পারেন। সুজাত ফ্রেশ মানুষ। সবার সঙ্গে বোঝাপড়া আছে। জামায়াতেরও দাপট আছে এখানে, সেটাও কাজে লাগবে তাদের। জোটের প্রার্থী তো গেলোবার ছিলেন রেজা কিবরিয়া। তারও এখানে জনপ্রিয়তা আছে। বাবার (শাহ এম এস কিবরিয়া) মতো ব্যক্তিত্ব ও সততার কারণে তিনিও এলাকার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য।
যা বলছেন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা
নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরফরাজ আহমেদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা কেন্দ্রের নির্দেশমতো কাজ করছি, আন্দোলন সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট আর সঠিক প্রার্থী হলে জয়ের ব্যাপারে এ আসনে আমরা শতভাগ আশাবাদী।
তিনি বলেন, এই আসনে বিএনপির একমাত্র প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া। তবে যদি জোটের প্রার্থী গণধিকারের রেজা কিবরিয়াও হন জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
দলের অভ্যন্তরীণ বিভেদ আগামী আন্দোলন সংগ্রাম অথবা নির্বাচনে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে- এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, আন্দোলন-কর্মসূচি ঘোষণা হলে এসব বিভেদ কমে যাবে।
একই ধরনের মন্তব্য উপজেলার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান চৌধুরীর শেফুর।
বাহুবল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম বলেন, দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কর্মসূচি পালন করছি। সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এ আসনে ধানের শীষ শতভাগ জয়লাভ করবে।
তিনি বলেন, এ আসনে আগামীতে বিএনপির একমাত্র প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া। আর জোটগত নির্বাচন হলে গণ অধিকারের ড. রেজা কিবরিয়া রয়েছেন। তবে রেজা কিবরিয়া মনোনয়ন পেলে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা হতাশ হবেন।
জেলা বিএনপির বিভক্তির প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপিতে কোনো বিভক্তি নেই। কোনো ধারা নেই। একটাই ধারা যার নেতৃত্বে রয়েছেন জি কে গউছ। আর যেসব ধারার কথা বলা হয় সেগুলো ব্যক্তিপর্যায়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার একটা চেষ্টা।
এই আসন সম্পর্কে শেখ সুজাত মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এই আসনে আমিই একমাত্র বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। এছাড়া আমাদের দলের আর কেউ নেই এ আসনে।
জেলা বিএনপির যে ত্রিমুখী বিভাজন, জাতীয় নির্বাচনের ভোটের ক্ষেত্রে তার কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন তিনি। দলের পাশাপাশি নিজের ব্যক্তি ইমেজের ওপরে আস্থাশীল শেখ সুজাত মিয়া।
তিনি বলেন, আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি। আমি জনগণের খুব কাছেই আছি। দল বাদেও মানুষ আমাকে পছন্দ করে। আগামীতে ধানের শীষ নিয়ে এ আসনে অবশ্যই শতভাগ পাস করার সম্ভাবনা আছে।
নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা নিয়ে জাতীয় সংসদের ২৩৯ আসন হবিগঞ্জ-১। এখানে মোট ভোটার ৩, লাখ ৬৪ হাজার ৯৭৭ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৪৯ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৮৪ হাজার ১২৮ জন।
ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৮) আওয়ামী লীগের গাজী মো. শাহনেওয়াজ মিলাদ ১ লাখ ৬০ হাজার ১৬৭ ভোট এবং নিকটতম বিএনপি জোটের রেজা কিবরিয়া ৮৫ হাজার ৮৮৫ ভোট পেয়েছে।
ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৮) আওয়ামী লীগের গাজী মো. শাহনেওয়াজ মিলাদ ১ লাখ ৬০ হাজার ১৬৭ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি জোটের রেজা কিবরিয়া ৮৫ হাজার ৮৮৫ ভোট পান।
১০ম সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) মহাজোটের প্রার্থী আবদুর মোনেম চৌধুরী লাঙল প্রতীক নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন।
৯ম সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ৫২ হাজার ৮০ ভোট পান। বিএনপির শেখ সুজাত মিয়া পান ৭৯ হাজার ৪৮৮ ভোট।
৮ ম সংসদ নির্বাচনে (২০০১) আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী ৭৪ হাজার ৬৯৩ ভোট পেয়ে জয়ী হন। বিএনপির শেখ সুজাত মিয়া পান ৬৬ হাজার ১৩৭ ভোট।
৭ম সংসদ নির্বাচন (১৯৯৬) আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী ৫২ হাজার ৯৪০ ভোট পেয়ে জয়ী হন। জাতীয় পার্টির খলিলুর রহমান চৌধুরী পান ৪৪ হাজার ১১৩ ভোট।
৫ম সংসদ নির্বাচন (১৯৯১) জাতীয় পার্টির খলিলুর রহমান চৌধুরী লাঙ্গল প্রতীকে ৪১ হাজার ৯৫৭ ভোট পেয়ে জয়ী হন। আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী পান ৩৮ হাজার ৯২৭ ভোট।
কেএইচ/এএসএ/জিকেএস