তদন্তে এসআই রতনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি


প্রকাশিত: ০১:০৯ পিএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আদাবর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রতন কুমার হালদারের বিরুদ্ধে আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হয়রানি ও নিপীড়নের অভিযোগ অসমর্থিত বলে জানিয়েছে তেজগাঁও বিভাগ পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তের বক্তব্যের ফারাক এবং প্রযুক্তিগত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। তবে প্রতিবেদনে অভিযুক্ত এসআই রতনের আচরণকে অপেশাদার বলে উল্লেখ করা হয়।
 
ঘটনার পর গঠিত দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে রোববার রাতে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন। দাখিলকৃত প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার।
 
এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি আশা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ফারাহানা আক্তার অভিযোগ করেন, আগের দিন ৩১ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটার দিকে আদাবর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শকের (এসআই) রতন কুমার হালদার অনৈতিক কাজের প্রস্তার শারীরিকভাবে হেনস্তার চেষ্টা করে।
 
তিনি অভিযোগ করেন, মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় হেনস্তা করা হয়। রিকশা থেকে জোর করে নামিয়ে একটি দোকানের ভেতরের নেয়া হয়। পরে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানানোর অপচেষ্টাও চলে। দেয়া হয় অনৈতিক কাজের প্রস্তাবও। শুধু তাই নয়, পুলিশ মামলা নেয়নি অভিযোগ তুলে আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন ওই ছাত্রী।
 
অভিযোগের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পেরেই অভিযুক্ত এসআইকে প্রথমে প্রত্যাহার ও পরে সাসপেন্ড করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার।
 
ছাত্রী ও অভিযুক্ত এসআইয়ের বক্তব্যে গড়মিল পায় তদন্ত কমিটি। পৌনে এক ঘন্টা ধরে ওই ছাত্রীকে রাস্তায় আটকে নিপীড়ন করার অভিযোগ করা হলেও এসআই রতন তা অস্বীকার করেন। রয়েছে ঘটনার সত্য মিথ্যে নিয়ে নানা প্রশ্ন।
 
এরপর ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের লক্ষ্যে ২ সদস্য বিশিষ্ট একটি মিটি গঠন করে তেজগাঁও বিভাগ পুলিশ। এডিসি হাবিবুন্নবী আনিছুর রশিদ ও সহকারী কমিশনার হাফিজ আল ফারুক ঘটনার তদন্ত করে গত রোববার রাতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
 
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তদন্ত কমিটির সদস্য এডিসি হাবিবুন্নবী আনিছুর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, আমি তদন্ত করেছি। তদন্ত শেষে উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে গতরাতে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। এর বেশি কিছু তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বলার এখতিয়ার আমার নেই।
 
তবে তিনি বলেন, আমরা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত কাজ করছি। অভিযোগকারী ওই ছাত্রী সহযোগিতায় অবহেলা করেছেন। তবে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে একাধিকবার যোগাযোগ করে তার জবানবন্দী নেয়া হয়েছে। আদালতে করা মামলার পর এখন পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করেনি কিংবা কোনো চিঠি আসেনি বলেও জানান তিনি।
 
পরে সোমবার বিকেলে তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, অভিযোগকারী ওই ছাত্রী এসআই রতনের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তা অসমর্থিত। প্রত্যক্ষদর্শী, ঘটনাপ্রবাহ, অভিযোগকারী ও অভিযুক্তের বক্তব্যে গড়মিল এবং প্রযুক্তিগত তথ্য উপাত্ত দ্বারা অভিযোগের সত্যতা মেলেনি।
 
তিনি বলেন, ওই ছাত্রী অভিযোগ করেন তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে শিয়া মসজিদের দিকে গেছেন। সময় অনুযায়ী প্রযুক্তিগত তথ্যে এর প্রমাণ মেলেনি। তখন তিনি অন্য রুট ব্যবহার করে শিয়া মসজিদ যান।
 
শিয়া মসজিদ সংলগ্ন দোকানদার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউই অভিযোগকারীর বক্তব্যের ন্যায় সাক্ষ্য দেননি। শুধু তাই নয়, রিকশা থেকে টেনে চার্জ করা এবং জোরপূর্বক দোকানের ভেতরে নিয়ে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দেয়াও অভিযোগেরও এক শতাংশ সত্যতা মেলে না। তবে এসআই রতন ওই ছাত্রীকে রিকশা থেকে ডেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলেন।
 
তদন্তে জানা গেছে, অভিযোগকারীর স্বামী ইয়াবা ব্যবসায়ী। সম্প্রতি অভিযোগকারীর বিরুদ্ধেও ইয়াবা ব্যবসা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া স্বামী সজিব আহমেদ বিস্ফোরক মামলার আসামি।
 
“তদন্তে উঠে এসছে এসআই রতন কোনো অপরাধ করেননি তবে একজন আসামির স্ত্রীকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে কথা বলাটা পুলিশ সদস্য হিসেবে অপেশাদার আচরণ হয়েছে”। তদন্ত প্রতিবেদন ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

জেইউ/এসকেডি/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।