৭ খুন মামলা : ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠন


প্রকাশিত: ০৭:১৫ এএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের দুটি মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে আদালত। সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে চার্জ গঠন করা হয়। মামলায় ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

এর আগে ৭ খুনের দুটি মামলায় গ্রেফতার হওয়া প্রধান আসামি নূর হোসেন ও র্যাবের চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন, এমএম রানাসহ ২৩ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে সাত খুনের দুটি মামলার চার্জ গঠন করেছে আদালত। শুনানির সময় ১২ জন অনুপস্থিত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধেও চার্জ গঠনের ফলে তাদের অনপুস্থিতিতেই বিচার কাজ চলবে।

এদিকে সকালে নূর হোসেন ও র্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ ২৩ জনকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। চার্জ গঠনে আসামি পক্ষে সরকারি দলের আইনজীবীসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী অংশগ্রহণ করেন।  
 
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি এসএম ওয়াজেদ আলী খোকন সাংবাদিকদের জানান, আদালত দুটি মামলার চার্জ গঠন করেছে এবং আগামী ২৫ তারিখ থেকে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ ও বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে। আদালতে চার্জ গঠনের সময়ে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা অব্যাহতি আবেদন করেছিল। রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধিতার কারণে আদালত ৩৫ জনকেই অভিযুক্ত করে চার্জ গঠন শুরু করেছে।

তিনি আরও জানান, চার্জ গঠনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিসহ সব আমামিদের উপস্থিতিতে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। আর নূর হোসেনের পরিকল্পনায় ৭ জনকে অপহরণের পর হত্যা করে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়া হয়।
 
মামলায় আসামি পক্ষে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, প্রাক্তন পিপি সুলতানুজ্জামান, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমএ রশিদ ভূইয়া, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক অ্যাডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আশরাফউজ্জামানসহ অর্ধশত আইনজীবী।

বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, ৭ খুনের মামলায় ৩৫জনকে অভিযুক্ত করে চার্জ গঠন করা হয়। উভয় পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করে চার্জ গঠন শেষ করেন। আর আসামি পক্ষের লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় নিহতের পরিবার এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
 
নারায়াণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান জানান, সোমবার সকালে কঠোর নিরাপত্তায় ২৩ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।
 
যে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন :
সাত খুনের দুটি মামলায় নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জন কারাগারে আটক রয়েছেন। নূর হোসেন ছাড়া বাকিরা হলেন- সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত ও র্যাব-১১ সাবেক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, র্যাব-১১ এর স্পেশাল ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানির ক্যাম্প কমান্ডার এমএম রানা ও মেজর আরিফ হোসেন, র্যাব সদস্য এসআই পূর্ণেন্দু বালা, এএসআই বজলুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ, হাবিলদার এমদাদুল হক ও নাসির উদ্দিন, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন ও বাবুল হাসান, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া, বেলাল হোসেন, ল্যান্স কর্পোরাল রুহুল আমিন, সিপাহী আবু তৈয়ব, নুরুজ্জামান ও আসাদুজ্জামান নূর এবং নূর হোসেনের সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী ও আবুল বাশার।
 
এছাড়া পলাতক রয়েছেন ১২ জন। তারা হলেন- নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম ও শাহাজহান এবং সানাউল্লাহ সানা, জামাল উদ্দিন ও র্যাবর কর্পোরাল লতিফুর রহমান, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সি এবং আল আমিন শরিফ, আব্দুল আলী ও তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, এসিসট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর কামাল হোসেন, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান।
 
প্রসঙ্গত, গত ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
 
সাত খুনের ঘটনায় নিহত কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও চন্দন সরকারের জামাই বিজয় কুমার পাল পৃথক দুটি মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আদালতে ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মামনুর রশিদ মন্ডল। মামলায় সাক্ষী দেখানো হয়েছে ১১৭ জনকে।
 
শাহাদাত হোসেন/এসএস/এসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।