অবসরের পরে লেখা রায় জমা দেবেন বিচারপতি শামসুদ্দিন


প্রকাশিত: ০৭:৫৪ পিএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার সম্মতি পাওয়ার পরে অবসরে থাকা বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর লেখা রায় জমা দিতে পারবেন বলে জানা গেছে। রোববার সারাদিন নানা নাটকীয়তা শেষে অবসরের পর নিজের লেখা রায় জমা দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি রোববার রাতে বলেন, তার লেখা রায় ও আদেশ গ্রহণ করতে আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ‘সম্মতি জানিয়েছেন’।

বিচারপতি শামসুদ্দিন অবসরে যাওয়ার আগে আপিল বিভাগে একই বেঞ্চে আরও ছিলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ও বিচারপতি শামসুদ্দিন। তখন সেই বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা।

অবসরের পর বিচারকদের রায় লেখার বিরোধী প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নির্দেশনার পর বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা তার লেখা রায় গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন বলে সকালেই অভিযোগ করেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী।

অবসরের পর তার লেখা ১৫টির মতো রায় এবং আদেশ নিতে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার প্রতি চিঠি লেখার কথা জানান। সেইসঙ্গে প্রধান বিচারপতির আচরণকে ‘সংবিধানপরিপন্থিও’ বলেন তিনি।

অবসরে থাকার পরেও রায় লেখার অনুমতি দিতে প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি পাঠানো এবং রায় না নেয়ার অভিযোগ তুলে বিচারপতি শামসুদ্দিন সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তার কিছুক্ষণ পর রোববার বিকেলের দিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রসাশনের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রারের এক বিজ্ঞপ্তি আসে। তাতে প্রধান বিচারপতি চার মাস আগে অবসরে যাওয়া বিচারপতিকে রায় নিয়ে গণমাধ্যমে কথা না বলার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি তার কাছে থাকা ‘অনিষ্পত্তিকৃত’ রায়ের মামলার ফাইলগুলো সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিসে জমা দেবেন বলেও প্রত্যাশা করেন প্রধান বিচারপতি।

এরপর সন্ধ্যায় বিচারপতি শামসুদ্দিন রায় জমা দিতে পারছেন জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞার সঙ্গে আগে মৌখিক কথা হয়েছিল, রায় ও আদেশ গ্রহণ করা নিয়ে, তখন বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন। তাই এগুলো জমা দেয়ার কোনো প্রশ্নই আসেনি।”

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারক বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেন যে সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী তার কাছে লিখিত রায় কিংবা আদেশ গ্রহণ করার জন্য জমা দেননি।”

গত অক্টোবরে অবসরে যাওয়া শামসুদ্দিন রোববার সকালে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অবসরে যাওয়ার পর যেসব রায় ও আদেশ তিনি লিখেছেন, তা জমা দিতে চাইলেও প্রধান বিচারপতির ‘নির্দেশনার কারণে’তা নেয়া হয়নি।

বিচারপতি শামসুদ্দিনের বক্তব্য অনুযায়ী, অবসরের পর তার ১৫টির মতো রায় লেখার বাকি ছিল, সেই সঙ্গে ছিল ৭০টির মতো আদেশ। সবই লেখা ইতোমধ্যে শেষ করেছেন তিনি।

বিচারপতি এসকে সিনহা তার প্রধান বিচারপতি হিসেব দায়িত্ব নেয়ার বছর পূর্তিতে গত মাসে দেয়া এক বাণীতে বিচারকদের অবসরের পর রায় লেখা ‘সংবিধানপরিপন্থি’ বলার পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়। বিচারপতি শামসুদ্দিনকে কেন্দ্র করে তার ওই বক্তব্য ছিল ধরে নিয়ে আইনপ্রণেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিচার বিভাগের ‘কোন্দল’ প্রকাশ্যে এনে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য বিচারপতি এসকে সিনহার সমালোচনাও করেন।

আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় যুদ্ধাপরাধের মামলার আপিলের শুনানি নিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিনের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির টেলি-কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ গত বছর প্রকাশ হওয়ার পর তা নিয়ে শুরু হয়েছিল আলোচনা। এরপর অবসরে যাওয়ার আগে গত সেপ্টেম্বরে বিচারপতি শামসুদ্দিন তার পেনশন আটকে দেয়ার অভিযোগ তুলে প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে একটি চিঠি দিলে তা নিয়েও ব্যাপক আলোচনা ওঠে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে আলোচিত বেশ কয়েকটি মামলার বিচারক শামসুদ্দিন চৌধুরী ২০০১ সালের জুলাই মাসে হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে দুই বছরের মেয়াদ শেষে স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হয়নি তাকে। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের পর ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ তিনি হাইকোর্টে স্থায়ী হন। ২০১৩ সালের ৩০ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী। গত বছর ১ অক্টোবর অবসরে যান তিনি।

গত ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি পদে দায়িত্ব নেয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, কোনো কোনো বিচারপতি অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধানপরিপন্থি।

এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধান বিচারপতি বাণীতে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বাংলাদেশের সংবিধান, আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের শপথ গ্রহণ করেন। কোনো বিচারপতি অবসর গ্রহণের পর তিনি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে গণ্য হন বিধায় তার গৃহীত শপথও বহাল থাকে না। এই বক্তব্যের সূত্র ধরে আইন অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়।

এফএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।