অবসরের পর লেখা রায় নিতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি


প্রকাশিত: ০৮:০১ এএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

অবসরে যাওয়ার পরও লেখা পূর্ণাঙ্গ রায় ও স্বাক্ষর গ্রহণ করার জন্য প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছেন সদ্য অবসরে যাওয়া আপিল বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। আজ রোববার সকালে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাঠানোর পর বিচারপতি মানিক নিজেই বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

অবসরের পর রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থি- প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলার মধ্যেই বিচারপতি মানিক অবসরের পর তার লেখা রায় গ্রহণ করতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠিটি দিলেন। এরআগেও প্রধান বিচারপতিকে চিঠি পাঠানোর বিষয় নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল।

আপিল বিভাগের সাবেক সদস্য বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর অভিযোগ, যেসব রায় লেখা বাকি ছিল, অবসরে যাওয়ার পর সেগুলোতে তাকে আর স্বাক্ষর করতে দেওয়া হচ্ছে না। আর তার ফলে সেগুলো আইনের দৃষ্টিতে রায় হিসেবে গণ্য হবে না।

Letterগত বছরের ১ অক্টোবর অবসরে যান বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। অবসরে যাওয়ার পরপরই তার সব সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তার। রায় লেখার পর জমা দিতে গেলেও তা নেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

এসব অভিযোগ করে সাবেক এ বিচারপতি বলেন, যেহেতু প্রধান বিচারপতি তাকে নির্দেশ দিয়েছেন, কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রায় লিখতে পারবেন না। সে কারণেই আমার লেখা রায় গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগের অপর সিনিয়র সদস্য বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা। তিনি বলেছেন, যেহেতু এটা প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, এটা অমান্য করা কঠিন।

অবসরের পর রায় গ্রহণ না করার বিষয়ে প্রধান বিচারপতির বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত তার বক্তব্যের পর রাজনীতির মাঠে ঝড় তুলতে সক্ষম হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখন কিছু না করলেও নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত তার এ মন্তব্যকে নিয়ে এগোবে। আমার কাছে তথ্য আছে, তারা নির্বাচনের আগেভাগে এটা চ্যালেঞ্জ করে একটা রিট করে এ সরকারকে বেকায়দায় ফেলবে। এ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যই প্রধান বিচারপতি সিনহা এসব কথা বলেছেন।’

‘আমি যে মামলাগুলোতে বিচারক ছিলাম, সেগুলোতে আমি যদি সই না করি, সেই রায়গুলো তো রায় হবে না। এখন প্রধান বিচারপতি সিনহা যদি গায়ের জোরে পাঠিয়ে দেন এবং আমার স্বাক্ষর ছাড়াই রায় হিসেবে গণ্য করার আদেশ দেন, এগুলো চ্যালেঞ্জ হবেই।’

তবে এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, অবসরে যাওয়ার সময় সাবেক এ বিচারপতির কাছে ১৯৬টি মামলার রায় লেখার অপেক্ষায় ছিল। এমনকি হাইকোর্টে থাকাকালীন যেসব রায় দিয়েছিলেন তার মধ্যেও কিছু রায় লেখার অপেক্ষায় ছিল অবসরে যাওয়ার পরে। অবসরে যাওয়ার পরে রায় লেখা ছাড়াও বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তার মতানৈক্য দেখা দেয়। এ নিয়ে এর আগে একাধিকবার প্রধান বিচারপতিকে চিঠিও দেন শামসুদ্দিন চৌধুরী। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে টিভি টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে নানা কথা বলেছেন, যা বিচার বিভাগের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে মন্তব্য বিশিষ্ট আইনজীবীদের।

গত বছর অক্টোবরের শুরুতে বিচারপতি এইএইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর অবসরের মধ্য দিয়ে আপিল বিভাগে শুন্য পদের সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচটিতে।

এফএইচ/এমজেড/এনএফ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।