ননী ও তাহেরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নেত্রকোনার মো. ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর মামলার রায় ঘোষণার জন্য মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায়ের এই দিন ধার্য করেন।
এর আগে উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ১০ জানুয়ারি মামলার রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল আটক এই দুই আসামির বিরুদ্ধে মোট ছয়টি অভিযোগের ওপর বিচারকার্য পরিচালিত হয়েছে। ননী ও তাহেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছয়টি হলো-
প্রথম অভিযোগ:
১৯৭১ সালের ১৭ আগস্ট তাহের ও ননীর নেতৃত্বে রাজাকাররা নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার বাউসী বাজার থেকে ফজলুল রহমান তালুকদারকে অপহরণ করে জেলা পরিষদ ডাক বাংলোয় নির্যাতনের পর ত্রিমোহনি ব্রিজে হত্যা করে। একই সঙ্গে ৪শ` থেকে ৪৫০টি দোকানের মালামাল লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ:
একাত্তরের ৪ অক্টোবর জেলার বারহাট্টা রোডের শ্রী শ্রী জিউর আঁখড়ার সামনে থেকে তাহের ও ননী কৃতী ফুটবলার দবির হোসেনকে অপহরণ করেন। নির্যাতনের পর মোক্তারপাড়া ব্রিজে গুলি করে হত্যা করা হয় দবিরকে।
তৃতীয় অভিযোগ:
১৯৭১ সালের ১৯ অক্টোবর তাহের ও ননীর নেতৃত্বে বারহাট্টা থানার লাউফা গ্রাম থেকে মশরফ আলী তালুকদারসহ ১০ জনকে অপহরণ করে ঠাকুরাকোনা ব্রিজে নিয়ে ৭ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
চতুর্থ অভিযোগ:
ননী ও তাহের মলয় বিশ্বাস ও অ্যাডভোকেট শীষ চন্দ্র সরকারের বাড়ি দখল করে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে পরিবারসহ তাদেরকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেন।
পঞ্চম অভিযোগ:
১৫ নভেম্বর তাহের ও ননী বিরামপুর বাজার থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বদিউজ্জামান মুক্তসহ ৬ জনকে অপহরণ করে লক্ষীগঞ্জ খেয়াঘাট ও মোক্তারপাড়া ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।
ষষ্ঠ অভিযোগ:
তাহের ও ননী চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামিনী চন্দ্র চক্রবর্ত্তীসহ ২৭ জনকে নেত্রকোনা জেলগেট থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেন।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ওবায়েদুল হক তাহের (৫৫) নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার ভোগাপাড়ার শুনই এলাকার মৃত মঞ্জুরুল হকের ছেলে। নেত্রকোনা পৌর শহরের তেরী বাজারে ব্যবসা করেন তিনি। অন্যদিকে আতাউর রহমান ননী (৫৮) একই জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কচন্দরা এলাকার মৃত আহছান আলী ওরফে আছান আলী ওরফে হাছেন আলীর ছেলে। ননী পৌর শহরের মোক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং সাবেক ফুটবলার।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আসামিরা ‘পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষা’র বিশ্বাস থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করেন।
আসামি তাহের রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হলে অপর আসামি ননীসহ আরো অনেকে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন।
এরপর শহরের মোক্তারপাড়ায় মলয় বিহারী বিশ্বাসের বাড়ি দখল রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করেন তারা। এছাড়া ১৯৭১ সালে নেত্রকোনা জেলার সদর এলাকা ও বারোহাট্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলেন তারা।
এফএইচ/আরএস/এমএস