বিএনপি’র কূটনৈতিক তৎপরতা আন্দোলন নাকি নির্বাচনমুখী?

খালিদ হোসেন
খালিদ হোসেন খালিদ হোসেন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪২ পিএম, ২৮ জুলাই ২০২২
গত ১২ জুলাই জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা-ফাইল ছবি

জাতীয় নির্বাচনের এখনও দেড় বছরেরও বেশি সময় বাকি। এখন থেকেই নির্বাচনী রাজনীতিতে সোচ্চার কূটনীতিক মহল। এরই মধ্যে বিদেশি কূটনীতিকরা বিএনপি এমনকি ইসির সঙ্গেও বৈঠক করেছে। তবে বিএনপির সঙ্গে তাদের একাধিক বৈঠক ও দেশের বৃহৎ এ রাজনৈতিক দলটির সাম্প্রতিক তৎপরতা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সরকারি দলকেও এ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করতে শোনা গেছে। সবমিলে বলা যায় এ ইস্যুতে নির্বাচনী রাজনীতি বেশ জমে উঠেছে।

সম্প্রতি ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক কূটনৈতিক কর্মকর্তাসহ ইউরোপীয় বেশ কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ফলে দলটির শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মাঝে চাঙ্গাভাব দেখা যাচ্ছে। এই কূটনীতিক দৌড়ঝাঁপ নতুন কোনো আন্দোলনমুখী না আসন্ন ২০২৩ সালের নির্ধারিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন তা নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে এবং জনমনে তৈরি হয়েছে ব্যাপক কৌতূহল।

আগামী নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হতে পারে, সেই ‘পরিবেশ’ তৈরির লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিয়মিতই বৈঠক করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধি বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে দলটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

এসব বৈঠকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যে কোনো সহযোগিতারও আশ্বাস দিচ্ছেন বিদেশি কূটনীতিকরা।

কূটনীতিকদের সঙ্গে দুটি বৈঠককে বিএনপি’র নীতি-নির্ধারকরা রুটিন বৈঠক হিসেবে আখ্যা দিলেও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আগামী আন্দোলন এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশ উৎসাহ জোগাচ্ছে।

বিএনপির সূত্রমতে, ক’দিন আগে জার্মান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে গোলমাল পাকিয়ে ফেলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং কূটনৈতিক বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এছাড়া অতীতের দুটি নির্বাচনে কূটনৈতিক সমর্থন লাভে ব্যর্থ বিএনপি কূটনৈতিক তৎপরতা নিয়ে এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ সতর্কতায় আছে। চলতি মাসেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ একাধিক নেতার কয়েকটি দেশ সফরের কথা আছে। ওই সফরে বিএনপি’র কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার হবে। যার প্রতিফলন আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে ঢাকার রাজনীতিতে দেখা যাবে। সেক্ষেত্রে রাজপথে আন্দোলনে না গিয়ে নির্বাচনমুখী হতে পারে বিএনপি।

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতা বিএনপির নেতাকর্মীরা কীভাবে দেখছে জানতে চাইলে পল্টন থানা বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফিরোজ আলম পাটোয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ভোটাধিকার ফেরত চাই, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। এই দাবিতে আন্দোলন করছি। বিদেশিরাও আমাদের দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। নির্বাচন প্রশ্নে আমাদের চাওয়া তাদের চাওয়ায় অমিল নেই। আমাদের দাবির প্রতি বিদেশিদের সমর্থন আমাদের আরও উজ্জীবিত করবে। আমরা যত বেশি উজ্জীবিত হবো সরকার তত বেশি চাপে থাকবে।

বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু বলেন, দেশে কোনো নির্বাচন নেই, মানুষ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়, কূটনীতিকরাও দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। সেক্ষেত্রে দেশের মানুষ এটাকে ইতিবাচক ভাবেই নিচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকার তো এমনিতেই চাপে আছে, মন্ত্রীদের কথা শুনলে বোঝা যায়, নির্বাচন কমিশনেরও কথা শুনলে বোঝা যায়।

বিএনপি’র কূটনৈতিক তৎপরতা আন্দোলন নাকি নির্বাচনমুখী?

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের রুদ্ধদ্বার বৈঠক-ছবি সংগৃহীত

দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, অনেক আগে রাষ্ট্রপতি তখন বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন বিদেশি কূটনীতিদের তৎপরতায় তিনি বলেছিলেন তারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। তাদের টাকা নিতে পারলে মতামত নেওয়া যাবে না কেন? এখন হয়তো কূটনৈতিক তৎপরতা আওয়ামী লীগের ভালো লাগছে না। তবে আমার মনে হয় দেশের মানুষের ভালো লাগছে। মানুষ দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। বিদেশি কূটনীতিকরাও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছেন।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষ মুক্তি চাচ্ছে। এই মুক্তির আশায় তারা অপেক্ষা করছে। যারা গণতন্ত্রকামী মানুষ যারা মুক্তিকামী মানুষ, তারা তাদের অধিকার ফিরে পেতে চায়, তারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সাংবিধানিক অধিকার পেতে চায়। তখন জনগণের পক্ষে যদি কেউ কথা বলতে চায়, কাজ করতে চায় তখন মানুষ তো স্বাগত জানাবেই। সবসময় স্বাগত জানিয়েছে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে স্বাগত জানিয়েছে, এছাড়া বিভিন্ন সময় আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে তখনও স্বাগত জানিয়েছে। গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করলে তখন স্বাগত জানাবে, এটাই স্বাভাবিক।

কেএইচ/এসএইচএস/জেআইএম

অনেক আগে রাষ্ট্রপতি তখন বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। বিদেশি কূটনীতিদের তৎপরতায় তিনি বলেছিলেন তারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। তাদের টাকা নিতে পারলে মতামত নেওয়া যাবে না কেন? এখন হয়তো কূটনৈতিক তৎপরতা আওয়ামী লীগের ভালো লাগছে না। তবে আমার মনে হয় দেশের মানুষের ভালো লাগছে। মানুষ দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। বিদেশি কূটনীতিকরাও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছেন।

আমরা ভোটাধিকার ফেরত চাই, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। এই দাবিতে আন্দোলন করছি। বিদেশিরাও আমাদের দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। নির্বাচন প্রশ্নে আমাদের চাওয়া তাদের চাওয়ায় অমিল নেই। আমাদের দাবির প্রতি বিদেশিদের সমর্থন আমাদের আরও উজ্জীবিত করবে। আমরা যত বেশি উজ্জীবিত হবো সরকার তত বেশি চাপে থাকবে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।