কক্সবাজার জেলা আ.লীগের সম্মেলন আজ


প্রকাশিত: ০৩:৪৯ এএম, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

দীর্ঘ এক যুগ পর আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের কাঙ্খিত ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল। সম্মেলন সফল করতে ইতোমধ্যে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে আয়োজকরা।

এদিকে, কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে আগামীর নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ আর পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে কক্সবাজার শহর। চলছে মিছিল সমাবেশও। এ যেন এক উৎসবের নগরী। ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোও রয়েছে উৎসবের আমেজে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় নেতাদের কক্সবাজার আগমনকে স্বাগত জানিয়ে শনিবার বিকালে শহরে মিছিল করেছে জেলা ছাত্রলীগ।

পাশাপাশি এ সম্মেলনে যাতে চাঁদপুরের মতো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও। বিশেষ করে কক্সবাজারে এখন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের খেলা চলছে। তাই সম্মেলন নিয়ে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলে জানায় জেলা পুলিশ।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, রোববার দুপুরে কক্সবাজার শহরের পাবলিক লাইব্রেরি ও ইন্সটিটিউটের শহীদ দৌলত ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশন। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। উদ্বোধক থাকবেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। প্রধান বক্তা হয়ে আসছেন যুগ্ম সাধারণ সমম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর উশৈশিং ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদসহ ডজনাধিক কেন্দ্রীয় নেতা সম্মেলন উপস্থিত হবেন।

coxbazer

ইতোমধ্যে সম্মেলনে অংশ নিতে কক্সবাজারে এসে পৌঁছেছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সম্মেলনের উদ্বোধক গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। আজ (রবিবার) বিমানযোগে আসবেন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর, মীর্জা আযম ও প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদসহ ডজনখানেক কেন্দ্রীয় নেতা।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমদ হোসেন জানান, ইতোমধ্যে জেলা কমিটির আওতাধীন ১১টি সাংগঠনিক উপজেলা কমিটির ৩২০ জন কাউন্সিলরের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই তালিকা প্রত্যেক উপজেলা কমিটির কাছে পৌঁছানো হয়েছে। প্রস্তুতি হিসেবে ভোটের জন্য ব্যালেট পেপারও ছাপা হয়েছে।

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন কাউন্সিলের জন্য সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন বিয়াম একাডেমি মিলনায়তনকে নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কাউন্সিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব কে পালন করবেন তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। সম্মেলন ও কাউন্সিলে আসা কেন্দ্রীয় নেতারা এটা ঠিক করবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তবে কাউন্সিল ভোটের মাধ্যমে না হয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করতে পারে বলে মনে করছেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট একে আহমদ হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ দিন পর অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। কিন্তু নেতৃত্ব প্রত্যাশী প্রার্থীর তালিকা দীর্ঘ হতে থাকায় সম্মেলন শেষে কাউন্সিল না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

coxbazer

তিনি জানান, কেন্দ্র থেকেই জেলা আওয়ামী লীগের নতুন নেতাদের নাম ঘোষণা করা হতে পারে। তারপরও কাউন্সিল করার সমস্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কেন্দ্র চাইলে নেতৃত্ব পছন্দ করে দিতে পারে। গঠনতান্ত্রিকভাবে সেই ক্ষমতা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের রয়েছে। তবে আমি চাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটেই নতুন কমিটি হোক।

একই দাবি অন্যতম সভাপতি প্রার্থী জাফর আলম, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রাশেদুল ইসলামের। এদের মত অধিকাংশ কাউন্সিলরই চান প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচন করতে। তাহলে কাউন্সিলরদের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে।

এদিকে সম্মেলন ও কাউন্সিলকে ঘিরে নেতৃত্ব প্রত্যাশী নেতাদের ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ও তোরণে ছেঁয়ে গেছে কক্সবাজার শহরসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো। নেতা-কর্মীদের মাঝে আলোচনার হিসাব নিকাশ চলছে, কারা আসছে জেলা আওয়ামী লীগের হাল ধরতে তা নিয়ে।

সূত্র জানায়, আসছে সম্মেলনে সভাপতি পদে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট একে আহমদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কানিজ ফাতেমা মোস্তাক ও চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন।

coxbazer

অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য কাউন্সিলরদের আস্থা পেতে লড়ছেন কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য রাশেদুল ইসলাম, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্দু, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুল আলম, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাশেদুল হক রাশেদ ও রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল।

সাধারণ সম্পাদকের তালিকা দীর্ঘ হলেও আলোচনায় রয়েছে রাশেদুল ইসলাম, মুজিবুর রহমান ও মাশেদুল ইসলাম। ভোট হলে তাদের মাঝ থেকে যে কেউ একজন উঠে আসতে পারেন।
 
জানা যায়, গত ২৬ জানুয়ারি চাঁদপুরে সম্মেলন নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ ঘটে। কক্সবাজারে এ ঘটনার পূনরাবৃত্তি হোক তা আওয়ামী লীগের উচ্চ মহল চায় না। ফলে এবারের সম্মেলন হবে কড়া নিরাপত্তার মাঝে। বিশেষ করে কক্সবাজারে এখন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের খেলা চলছে। তাই এখানে সম্মেলন নিয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার মতো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে চাচ্ছেন তারা। এরই অংশ হিসেবে সম্মেলনে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলে জানায় জেলা পুলিশ।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালে ২০ ডিসেম্বর। উক্ত সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা একেএম মোজাম্মেল হক সভাপতি ও সালাহউদ্দিন সিআইপি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল একেএম মোজাম্মেল হক মৃত্যুবরণ করলে সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করায় পরে তাকে সরিয়ে অ্যাডভোকেট একে আহমদ হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। সেই সময় থেকে ঢিমেতালে চলছে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। নতুন সম্মেলন সম্পন্ন হলে সংগঠনে গতিশীলতা ও চাঙ্গাভাব আসবে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা।

সায়ীদ আলমগীর/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।