উড়লো ভুবন চিল ও লক্ষীপেঁচা
তিনি চিত্র নায়ক সালমান শাহ’র মামা আলমগীর চৌধুরী কুমকুম। সিলেটে সবাই তাকে কুমকুম মামা বলে ডাকেন। তার বাসাতেই গড়ে ওঠেছে প্রাণিদের সেবার জন্য ‘প্রাণি আশ্রম’। এই আশ্রমটি গড়ে তোলার পেছনে লুকানো রয়েছে এক বাবার প্রথম ছেলে হারানোর যাতনা, হৃদয় নিঙড়ানো ভালোবাসা। এই প্রাণি আশ্রমে সেবা পেয়ে আকাশে ডানা মেললো বিরল প্রজাতির একটি ভুবন চিল ও একটি লক্ষীপেঁচা।
শুক্রবার বিকেলে সিলেট নগরীর দারিয়াপাড়া এলাকায় ‘সালমান শাহ্ ভবন’-এর সামনে ভুবন চিল ও লক্ষীপেঁচা অবমুক্ত করার মাধ্যমে এ প্রাণি সেবা আশ্রমের উদ্বোধন করা হয়।
পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশ-এর আশরাফুল কবির জানান, সম্প্রতি তিনি একটি গুলিবিদ্ধ ভুবন চিল এবং প্রাণি অধিকার বিষয়ক সংগঠন প্রাধিকার-এর মনজুর কাদের চৌধুরী একটি আহত লক্ষীপেঁচা আলমগীর চৌধুরী কুমকুম মামার কাছে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। প্রায় দুই সপ্তাহ খাবার ও চিকিৎসা নিয়ে পাখি দুটি সুস্থ হয়েছে। শুক্রবার পাখি দুটি প্রকৃতিতে অবমুক্ত করে দেয়া হয়।
‘আলিজা প্রাণি সেবা আশ্রম’ সম্পর্কে জানা গেল, ১৯ বছরের জন্মদিনে বাস্কেটবল খেলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় কুমকুম মামার প্রথম ছেলে আলিজা’র। সময়টা ছিল ২০০০ সাল। বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান আলিজা পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরীতে থাকতেন। মৃত্যুর দেড় দশক পর আলিজা’র স্মরণে বাবা আলমগীর কুমকুম ‘আলিজা প্রাণি সেবা আশ্রম’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।
প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র মামা আলমগীর কুমকুম প্রবাস থেকে ফিরে নিজ বাসভবনে ভাগ্নে সালমান শাহ’র স্মৃতি সংরক্ষণাগার গড়ে তোলেন। পাশাপাশি অবৈধ পাখি বিক্রেতাদের কাছ থেকে বক, কালিম, টিয়া, সরালি হাঁস ইত্যাদি দেশি ও বিদেশি পাখি কিনে গড়ে তোলেন ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা। তার এই চিড়িয়াখানাকে আরও সুচারু কাঠামোয় আনার ক্ষেত্রে পরিবেশবাদীরাও তাকে উৎসাহ দিচ্ছেন।
পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম জানান, দেশি-পরিযায়ী পাখি ও অন্যান্য যে কোনো বন্যপ্রাণি বন্দিদশায় প্রতিপালন না করে উন্মুক্ত করে দেয়ার অনুরোধ করি কুমকুম মামাকে। তিনি তাতে সম্মত হন। একই সঙ্গে তিনি যে কোনো আহত প্রাণিকে সাময়িক আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ইচ্ছায় ‘প্রাণি সেবা আশ্রমকে আরও সুন্দর করে গড়ে তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
পরিবেশ কর্মীরা জানালেন, সিলেট বিভাগে শ্রীমঙ্গলের সিতেশ বাবুর ‘বন্যপ্রাণি সেবাকেন্দ্র’` এমন একটি প্রতিষ্ঠান। লোকালয়ে ধৃত বিভিন্ন বন্যপ্রাণি ও অবৈধ পাখি উদ্ধার হলে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করে দেয়াই নিয়ম। কিন্তু অনেক সময় সেই প্রাণিটি চলাফেরা বা উড়ে যাওয়ার অবস্থায় থাকে না। এ অবস্থায় এদের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে এসব প্রাণি সেবা প্রতিষ্ঠান খুবই উপকারী।
পাখি অবমুক্তকালে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা, প্রাধিকার, ভূমিসন্তান-বাংলাদেশ ও গ্রীন এক্সপ্লোর সোসাইটির কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ছামির মাহমুদ/ এমএএস/পিআর