মুদ্রানীতির সাড়া নেই পুঁজিবাজারে
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন ২০১৬) মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দিতে ব্যাংকিং খাতে সুদ হার কমানো হয়েছে। একইসঙ্গে মুদ্রানীতি ও রেগুলেটরি সমর্থন টেকসই পুঁজিবাজার উন্নয়নেও সহায়ক হবে বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো চিত্র।
মুদ্রানীতি ঘোষণার পর প্রথম সপ্তাহেই নেতিবাচক ধারায় দেশের পুঁজিবাজার। কমেছে সূচক ও টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণ। দর হাড়িয়েছে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের। একই সঙ্গে হ্রাস পেয়েছে পিই রেশিও ও বাজার মূলধনও।
আস্থার সংকটের কারণে নানা পদক্ষেপ ও প্রণোদনা দেওয়া সত্ত্বেও পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। একইসঙ্গে বাজারে নতুন নতুন কোম্পানির শেয়ার আসলেও নতুন বিনিয়োগকারী আসছে না। ফলে থমকে আছে দেশের পুঁজিবাজার। এছাড়াও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাজার সহায়ক যে নীতি গ্রহণ করেছে তা সুফল সময় সাপেক্ষ বলেও মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
গত ১৪ জানুয়ারি সতর্ক, সংযত ও সমর্থনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। এ সময় গভর্নর বলেন, দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। একটি টেকসই পুঁজিবাজার উন্নয়নেও ভবিষতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে যতটুকু সহায়তা করা দরকার তা অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দিতে ব্যাংকিং খাতে সুদ হার কমানো হয়েছে। একইসঙ্গে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগ নীতিমালায় পরিবর্তন করেছে। এসব সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক।
এছাড়াও পুঁজিবাজারের সূচকগুলো স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। তার পরও বাজার ঘুরে না দাঁড়ানোর এক মাত্র কারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা। যা কাটাতে না পারলে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না বলে জানান তিনি।
নীতি সুদহার কমানোর এ পদক্ষেপ ইতিবাচক তবে এর প্রভাব শেয়ারবাজারে দ্রুত পড়বে না বলে মনে করছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় অনুষদের ডিন ড. মোহাম্মদ মুসা।
তিনি বলেন, আমাদের বাজার অতটা সংহত নয়, যে এত দ্রুত প্রভাব পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশে এটা রাতারাতি হয়। কেন না, মার্জিন লোনের রেট না কমলে বাজার প্রভাবিত হবে না। আমাদের দেশে যে কোনো পলিসির প্রভাব সময় সাপেক্ষ।
এদিকে ঘোষিত মুদ্রানীতি টেকসই পুঁজিবাজার উন্নয়নে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পুঁজিবাজার উন্নয়নে বেশ কিছু প্রদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মিউচুয়াল ফন্ডের বিপরীতে ব্যাংকের যে প্রভিশন সংরক্ষণ নীতিমালা রয়েছে তা সহজ করা। বিকল্প বিনিয়োগ তহবিলে ২শ’ কোটি পুঁজিবাজারের আওতার বাহিরে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো যখন হিসেব করে তখন ২শ’ কোটি হিসেবের বাইরে রাখে।
এছাড়াও সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগ নীতিমালায় পরিবর্তন করেছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা হিসাবের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সহযোগী কোম্পানিকে (মার্চেন্ট ব্যাংক/ব্রোকারেজ হাউজ) দেয়া মূলধন এই সীমার বাইরে থাকবে। আগামী জুনের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে যে এক্সপোজার নামিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশণা রয়েছে তা এই সার্কুলারের ফলে নামিয়ে আনা সহজ হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি পুঁজিবাজারের দায়িত্ব না নিলেও এর অনেক নীতি পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজার সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি প্রদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে বাজার স্থিতিশীলতায় ফিরেছে বলে দাবি করেন তিনি।
এসআই/আরএস/এমএস