দ্বিতীয় দিনেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে জাপা নেতাদের বক্তব্য
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছোটভাই জিএম কাদেরকে তার উত্তরসুরি ঘোষণার পর দলে নয়া মেরুকরণ শুরু হয়েছে। সরকারপন্থি বলে পরিচিত বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদপন্থি নেতারা এ ঘোষণায় নড়েচড়ে বসেন ২৪ ঘণ্টা না যেতেই। শুরু হয় নানা তৎপরতা।
পরের দিন রওশন এরশাদের বাসায় জরুরি বৈঠকে বসেন তারা। বৈঠকে রওশন এরশাদকে তারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব করেন। এ বিষয়ে রওশন এরশাদের তেমন সম্মতি না পেলেও বৈঠক শেষে বেরিয়ে দলের মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলু রওশনকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন।
তবে এ ঘোষণা অবৈধ বলে রংপুর থেকেই প্রতিক্রিয়া দেন এরশাদ। সোমবার দুপুরে ঢাকায় ফিরেই জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিবের পদ থেকে অব্যাহতি এবং সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব করার ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ।
দুই ঘণ্টার ব্যবধানে আবারও দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে। বিকেলে সংসদীয় দলের পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে এরশাদ অংশ নেবেন না এমনটিই ভেবে নিয়েছিলেন রওশনপন্থি এমপিরা। কিন্তু এরশাদ নবঘোষিত মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে নিয়ে ওই বৈঠকে উপস্থিত হন। দলীয় চেয়ারম্যান হিসেবে তার সিদ্ধান্তের বিষয়ে কড়াবার্তা দেন নেতাদের।
বৈঠক সূত্র জানায়, প্রথমে রওশন এরশাদ জিয়া উদ্দিন বাবলুর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, তুমি আমাকে কীভাবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানাও। আমি তো তোমাকে এটা বলিনি। বাবলু জবাবে বলেন, ম্যাডাম এটা নিয়ে মিডিয়া বেশি বাড়াবাড়ি করেছে। এরপর চুপ হয়ে যান বাবলু। বৈঠকে এরশাদ থাকা পর্যন্ত বাবলু আর কোনো কথা বলেননি।
রওশন আরও বলেন, দলের চেয়ারম্যান যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হয় না। এসময় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, উনি (এরশাদ) এভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
তখন এরশাদ বলেন, আমি এর আগে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তখন কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। এখন কেন প্রশ্ন উঠবে? আর বাবলুর কীভাবে সাহস হয়, আমি বেঁচে থাকতে আরেকজনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার।
এরশাদ বলেন, আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সে সিদ্ধান্তই সঠিক থাকবে। এ নিয়ে কেউ ভিন্ন কিছু করতে চাইলে, তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। আর আমার জানামতে, দল থেকে বহিষ্কার করলে কেউ এমপি-মন্ত্রী থাকতে পারেন না। এরশাদের এই বক্তব্যের পরই চুপসে যান সবাই।
বৈঠকের এক পর্যায়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপিদের নিয়ে যৌথসভা ডাকার। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে করণীয় ঠিক করার। এরপর বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে হাওলাদারকে নিয়ে বৈঠক ত্যাগ করেন এরশাদ। বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয় বরাবর নিচে বিশেষ দূতের কার্যালয়ে গিয়ে বসেন তারা।
এদিকে রওশনের নেতৃত্বে বৈঠক চলতে থাকে বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত। বৈঠক শেষে বিরোধীদলের হুইপ শওকত চৌধুরী বলেন, এরশাদের সিদ্ধান্তই সঠিক। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা সবাই তার সঙ্গে একমত। বৈঠক শেষ করে সংসদ থেকে বেরিয়ে যান তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, এরশাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে সংসদীয় দল। এসময় তার পাশে উপস্থিত ছিলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়া উদ্দিন বাবলু, মশিউর রহমান রাঙ্গা ও মুজিবল হক চুন্নু।
এ বক্তব্য শুনেই বিশেষ দূতের কার্যালয়ে তাজুলকে ডেকে আনেন এরশাদ। এ ধরনের বক্তব্য দেয়ার জন্য তিনি তাজুল ইসলামকে ধমক দেন। পরে তাজুল বলেন, স্যার সাংবাদিকরা আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করেছে। তখন এরশাদ বলেন, আবার সঠিক বক্তব্য দিয়ে আসো।
এসময় তাজুলকে সঙ্গে নিয়েই সংসদ থেকে বের হন এরশাদ। বাইরে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সামনে প্রথমে কথা বলেন তাজুল। তিনি বলেন, আমি এটা বলিনি। সাংবাদিকরা প্রতি উত্তরে বলেন, আমাদের কাছে রেকর্ড আছে।
এসময় এরশাদ পাশ থেকে বলেন, আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অটল থাকবো।
এএম/বিএ