ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাষ হচ্ছে বেগুন
রোগবালাই ও পোকার সংক্রমণ থেকে বেগুন রক্ষায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে শুরু হয়েছে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তির ব্যবহার। চীন থেকে বিশেষ ধরনের এই ব্যাগ আমদানি করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বেগুন উৎপাদনে একদিকে যেমন ক্ষতিকারক কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ হবে, সেই সঙ্গে মানুষ পাবে নিরাপদ ও বিষমুক্ত সবজি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রানীহাটি ইউনিয়নের বহরম গ্রামের জালাল উদ্দীন লাভবান হয়েছেন ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করে।
জালাল উদ্দীন জানান, নাচোল উপজেলা থেকে ঘিওন বেগুনের চারা এনে বাড়ির সামনে নিজ জমিতে লাগায়। বেগুন বড় হওয়ার পর তিনি লক্ষ্য করেন পোকা লাগছে এবং ফেটে যাচ্ছে। এসময় কৃষি বিভাগের এক মাঠ কর্মীর পরামর্শে প্রাথমিকভাবে ১৫০টি বেগুনে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি শুরু করেন তিনি। এ পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করে পোকার আক্রমণ কম হচ্ছে এবং কীটনাশকও কম ব্যবহার করতে হচ্ছে।
তিনি জানান, প্রায় ১৫ কাঠা জমিতে বেগুন চাষ করতে তার খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। এর মধ্যেই তিনি ১৫ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। সামনে চৈত্র মাসের শেষ পর্যন্ত আরো ১৫ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। বিষমুক্ত হওয়ায় তার এ বেগুনের চাহিদাও অনেক বেশি। বাজারে নিয়ে যেতে হয়না, জমি থেকেই বেগুন বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
কথা হয় বেগুন কিনতে আসা ওই গ্রামের রুহুল আমিন ও মোমেনা বেগমের সঙ্গে। তারা জানায়, কীটনাশক কম ব্যবহার করায় তারা এ বেগুন কিনেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দীন জানান, বেগুনের প্রধান শত্রু ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য কৃষকেরা মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। শুধু তাই নয় এতে বেগুনের উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। এই সমস্যাটি সমাধানে ব্যাগিং প্রযুক্তি প্রয়োগ করে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে বেগুনকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
একটি বেগুনের বয়স দুই থেকে তিন দিন হলেই ব্যাগটি পরানো উচিত। বেগুনের বয়স যত বেশি হবে পোকায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ততই বাড়বে। বিভিন্নজাতে ভিন্ন মেয়াদে (৮/১২ দিন) ব্যাগের মধ্যে বেগুনকে থাকতে হয়। ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে এক কেজি বেগুন উৎপাদনে খরচ হবে ১.৫০-২.৫০ টাকা যা ব্যবহৃত বালাইনাশকের খরচের চেয়ে কম এবং তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
মুহাম্মদ আব্দুলাহ/এআরএ/পিআর