চাকরিই অবৈধ : তবুও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ


প্রকাশিত: ০৭:১৫ এএম, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

উচ্চ আদালতে অবৈধ ঘোষিত জাতীয় সংসদের এক কর্মকর্তাকে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সংসদে আত্তীকরণসহ নানা দুর্নীতিতে জড়িত সিরাজুল ইসলাম বাদশা নামের ওই কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আরো দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়।
 
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে ২১ জনকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে আত্তীকরণ করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর ক্ষমতায় এসে তাদের পদোন্নতি দেয় আওয়ামী লীগ। অথচ উচ্চ আদালত ওই আত্তীকরণকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন। মামলাটি এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন। দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সিরাজুল ইসলাম এদেরই একজন।

জানা যায়, সিরাজুল ইসলাম বাদশার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কমিটি শাখার সিনিয়র কর্মকর্তা হলেও এখন তিনি দায়িত্ব পালন করছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পিএস হিসেবে। আবার তিনি এই কমিটির কমিটি অফিসারও। যা নজিরবিহীন।

গত বছরের অক্টোবর মাসে চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও প্রভাব খাটিয়ে আরো দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া উচ্চ আদালতে অবৈধ ঘোষিত এই কর্মকর্তাসহ অন্যান্য আত্তীকরণরা আন্ডারটেকিং নিয়ে বেতন-ভাতা তুলছেন।

তবে আপিল বিভাগে যদি তাদের চাকরি অবৈধ ঘোষণা হয় তাহলে সব বেতনভাতা ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন তারা। এ অবস্থায় এদের একজনকে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংসদের অনেক কর্মকর্তা।
 
জানা যায়, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন সময়ে ১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। বিদেশ সফরের নাম করে সরকারি কোষাগার থেকে এই টাকা নিয়েছিলেন তিনি।
 
হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী যতবারই বিদেশ সফর করেছেন ততবার ব্যবসায়ী পাসপোর্টে তার সফর সঙ্গী হন সিরাজুল ইসলাম বাদশা। ওই সময়ের ৪ বছরে ২৫টি দেশ সফর করেন তিনি। আর এ খাতে ব্যয় হয় ১ কোটি টাকা।

নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেকবার সরকারি সফর শেষে ব্যয় ভাউচার সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দিতে হয়। কিন্তু ব্যয় ভাউচার হারিয়ে গেছে জানিয়ে খরচের লিখিত তালিকা জমা দেন তিনি। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে ওই শাখা থেকে বদলির হুমকি দেয়া হয়।
 
সাবেক স্পিকারের সরকারি একান্ত সচিব হওয়ার আগে পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের পর তার ব্যবসায়ী পাসপোর্ট জমা দেননি। পরে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তাকেসহ ২১ জনকে সংসদে আত্তীকরণ করে। এভাবেই সংসদের কর্মকর্তা বনে যান সিরাজুল ইসলাম বাদশা।

সূত্রে আরো জানা যায়, নিউইয়র্কে তার একটি বাড়ি রয়েছে। সেখানে তার স্ত্রী থাকেন। এছাড়া ঢাকা ও সিলেটে বিলাসবহুল বাড়িও আছে তার।

এদিকে অভিযোগ পাওয়ার পর বেশ কয়েকদিন বাদশার কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। সেখানকার দায়িত্বরত কর্তারা জানান, তিনি বেশিভাগ সময়ই বিটিসিএলের কার্যালয়ে থাকেন। সেখানে নানা ধরনের তদবির করেন। সংসদে গেলেও কোনো দিন ১১টার আগে কার্যালয়ে আসেন না তিনি।
 
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী গত দুই বছরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কমপক্ষে ২৪টি বৈঠক করার কথা থাকলেও মাত্র ১২টি বৈঠক করেছেন। আর এই কর্মকর্তার প্রভাবে বৈঠক করতে পারছেন না সদস্যরা। কমিটির সভাপতিকে বৈঠক আহ্বান করা থেকে বিরত রাখেন তিনি।
 
এসব ব্যাপারে বেশ কয়েকবার কথা হয় সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ সম্পর্কে তিনি বলেন, তাদের চাকরি অবৈধ নয়। আর চাকরি শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ একটি নোবেল প্র্যাকটিস বলে অভিহিত করেন তিনি।

বিটিসিএলে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ওই অফিস কোথায় আমি চিনিই না’। এক কোটি টাকা আত্মসাৎ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এসব বিরোধীদের বানানো কথা’।
 
কমিটির বৈঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও চান না কমিটির সদস্যরা ঢাকায় থাকুক। শেখ হাসিনা গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে সবার প্রতি নজর রাখছেন, কোন এমপি এলাকায় কী কী কাজ করছেন। তাই মিটিং ডাকা হলেও এমপিদের অনুরোধে আবার স্থগিত রাখা হয়।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদীয় কমিটিগুলো শক্তিশালী করার জন্য মাসে কমপক্ষে একটি করে বৈঠক করার উপর বিভিন্ন সময় জোর দিয়ে আসছেন।
 
এইচএস/আরএস/এআরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।