‘বিদেশি হস্তক্ষেপ চেয়ে ফখরুলের চিঠি সংবিধান অনুযায়ী অপরাধ’
দেশের বিরুদ্ধে বিদেশি হস্তক্ষেপ চেয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল যে চিঠি পাঠিয়েছেন, সেটি সংবিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় দলের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. সেলিম বলেন, বিএনপি এবং তার সহযোগী কিছু ব্যক্তিবর্গ বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সাম্প্রতিককালে এই ষড়যন্ত্র প্রকাশিত হওয়ায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন। শেখ হাসিনা সরকারের শক্তিশালী তৎপরতায় ষড়যন্ত্রকারীরা পিছু হটতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, ষড়যন্ত্র তখনই সফল হয়, যখন ষড়যন্ত্রের কথা গোপন থাকে। যখন ষড়যন্ত্র প্রকাশিত হয়ে যায়, সেটি ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশের ভেতরে এবং বহির্বিশ্বে শেখ হাসিনার শক্তিমত্তা ও গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে ষড়যন্ত্রকারীদের কোন ধারণা নেই। তাই তারা ষড়যন্ত্রে এতো সময় ব্যয় করছে। ইতিহাস কখনো ষড়যন্ত্রকারীদের ক্ষমা করে না।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বলেন, মির্জা ফখরুল নিজে স্বাক্ষর করে যেসব চিঠি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছেন, তার মর্মার্থ হচ্ছে- বিএনপি এবং তার সহযোগীরা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অৰ্থনীতি এবং এদেশের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চাইছে। এমনকি তারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিতেও কুণ্ঠিত নন। মির্জা ফখরুলের চিঠিতে সেই ইঙ্গিতই রয়েছে। এসব চিঠিতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ চেয়ে তিনি যে অপরাধ করেছেন, সেটি আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ক (১) (খ) এর বিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ অপরাধ। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এর চেয়ে বড় অপরাধ আর হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, মির্জা ফখরুল তার চিঠিতে একটি বিদেশি শক্তিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করেছেন। এই ধরনের কাজ সর্বোচ্চ রাষ্ট্রদ্রোহিতা। মির্জা ফখরুলের লেখা পড়ে মনে হচ্ছে তিনি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বিশেষভাবে বাংলাদেশে মার্কিন স্বার্থ নিয়েই বেশি চিন্তিত। তিনি কি মার্কিন রাজনীতিবিদ? তার কাছে কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্বের কোনো মূল্য নেই?
ড. সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার দেশে-বিদেশে অবস্থানকারী এই ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠীকে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করতে পেরেছে। এই ষড়যন্ত্রের সব নথিপত্র এবং তথ্য প্রমাণ সরকারের হাতে রয়েছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এজেন্সিগুলো এবং আন্তর্জাতিক একাধিক সংস্থা ইতোমধ্যে অধিকতর তদন্তে নেমেছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং সর্বাধিক গুরুত্বপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ। লবিস্ট নিয়োগ এবং এজাতীয় ট্রাঞ্জেকশন গুলোতে যেসব বাংলাদেশি এবং তাদের এজেন্ট জড়িত, তাদের সবারই তথ্য বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে পেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। দেশে-বিদেশে তাদের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং অন্যান্য তথ্যাদি ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে আরও কারা কারা জড়িত সে বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ চলছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-বিরোধী এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকারের বিশেষ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দায়িত্বরত বাংলাদেশের শুভাকাঙ্খীরা। ইতোমধ্যে তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
ড. সেলিম আরও বলেন, বিএনপি এবং তার সহযোগীদের উদ্দেশ্য সরকার পরিবর্তন হলেও তাদের এই কর্মকাণ্ডের মাসুল দিতে হবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে এবং তার জনগণকেই। কারণ কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন হলেই সেই দেশে সরকার পরিবর্তন হয় না। বর্তমানে ৩১টি দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন রয়েছে। কিন্তু এসব স্যাংশনের কারণে কোনো রাষ্ট্রেই সরকার পরিবর্তন হয়নি। এই ধরনের পরিস্থিতিতে তাহলে কে ক্ষতিগ্রস্ত হবে? ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ এবং তার জনগণ। তাদের এই রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে এদেশের ১৭ কোটি মানুষ বিপদে পড়তে পারে। মুখ থুবড়ে পড়তে পারে এদেশের অর্থনীতি।
‘মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই রকম ষড়যন্ত্র সফল হতে দিতে পারি না। ষড়যন্ত্রকারীরা এটি বারে বরে ভুলে যায় যে, প্রায় ১০ বছর ধরেই তারা লবিস্টের মাধ্যমে বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাদের প্রতিটি ষড়যন্ত্রই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নস্যাৎ করে দিয়েছেন। এবারও তিনি ষড়যন্ত্রের ওপর আঘাত হেনেছেন। ষড়যন্ত্রকারীরা ইতোমধ্যে পিছু হটতে শুরু করেছে।’
ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটি বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে উদ্ভাবনীমূলক নানা পদ্ধতিতে রাষ্ট্রবিরোধী নানা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। তিনি এই টিমকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী সব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য জাকিয়া পারভীন খানম এমপি, প্রফেসর ড. অসীম সরকার, ব্যারিস্টার সৌমিত্র সর্দার, আমেনা কোহিনুর, সৈয়দ আবু তোহা, প্রফেসর ড. শামসুর রহমান, অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক আসিফ, সাজ্জাদ হোসেন চিশতী, সাঈদ খান শাওন, নুরুল ইসলাম মজুমদার, আরিফ সোহেল, দিলরুবা ইয়াসমিন, রায়হান কবির, ড. শবনম জাহান, জামান সিকদার, মোয়াজ্জেম হোসেন কাওসার, ফাহিম শাহরিয়ার প্রমুখ।
এসইউজে/কেএসআর/এএসএম