কিবরিয়া হত্যা মামলা : সময় বাড়ানোর আবেদন


প্রকাশিত: ০২:০৩ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০১৬
ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলা নিয়ে দীর্ঘ সূত্রিতা কাটছে না কিছুতেই। তদন্তে শেষে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্নের ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে দীর্ঘ সূত্রিতা। নির্ধারিত সময়েও শেষ হয়নি বিচার কাজ।

আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে সময় বাড়ানো না হলে ট্রাইব্যুনাল বিচার কাজ চালতে পারে না। এ কারণে চলতি মাসের শুরুতে আলোচিত এই হত্যা মামলার বিচার সম্পন্নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করেছেন সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি কিশোর কুমার কর।

এখন মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য আদালতেও আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে বুধবার সাক্ষ্য গ্রহণের নির্ধরিত তারিখে সাক্ষ্যগ্রহণ করেননি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক।

জানা যায়, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে কার্যক্রম শুরুর ১৩৫ কার্য দিবসের মধ্যে মামলার কাজ শেষ করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ১৩৫ কার্যদিবস পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি কিবরিয়া হত্যা মামলার বিচার কাজ। তাই এই মামলার বিচারের মেয়াদকাল বাড়ানোর আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

চলতি সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এ আবেদন করেন সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট কিশোর কুমার কর। তিনি জানান, আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করবে।

কিশোর কুমার কর বলেন, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা সম্পন্নের সময়সীমা নির্ধারিত থাকলেও কিছু চাঞ্চল্যকর মামলার ক্ষেত্রে তা হ্রাস করা হয়। যেমন একুশে আগস্টের মামলার ক্ষেত্রে এই বিধান রহিত করেছেন উচ্চ আদালত। কিবরিয়া হত্যা মামলার বিচারের ক্ষেত্রেও এমনটি হতে পারে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করতে না পারা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসামি ও সাক্ষীদের অনুপস্থিতিসহ নানা কারণে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে।

এদিকে মন্ত্রণালয় থেকে সময়সীমা বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসার পূর্ব পর্যন্ত এই মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্যও বুধবার সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার টাইব্যুনালে আবেদন করেছেন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি কিশোর কুমার কর।

এই আবেদনের ফলে বুধবার এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত থাকলেও সাক্ষ্যগ্রহণ করেননি সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মকবুল আহসান।

সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি কিশোর কুমার কর জানান, বুধবার কারান্তরীণ ১৪ আসামিদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ছাড়া হুজির শীর্ষ জঙ্গি মুফতি হান্নান, হবিগঞ্জের নব নির্বাচিত পৌর মেয়র জিকে গউসসহ ১২ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু বিচারের সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ায় সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি।

তিনি আরও জানান, কিবরিয়া হত্যা মামলার ৩২ আসামির মধ্যে আটজন জামিনে, ১৪ জন কারাগারে ও ১০ জন পলাতক রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, টানা ৯ দফা চার্জ গঠনের তারিখ পেছানোর পর গত ১৩ সেপ্টেম্বর সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জ (অভিযোগ) গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। মামলার কারান্তরীণ ও জামিনে থাকা সকল আসামির উপস্থিতিতে মোট ৩২ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জ গঠন করা হয়।

এরপর, গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার বাদী হবিগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ খান। ওইদিন সাক্ষগ্রহণের মধ্যদিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে এ পর্যন্ত বার দফা আসামি অথবা সাক্ষী হাজির না থাকার কারণে ১২ দফা সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পেছানো হয়েছে। আর বুধবার মামলার নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।

অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিসিকর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জিকে গউছ, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান অন্যতম প্রমুখ।

এর আগে গত ২১ জুন, ৬, ১৪ ও ২৩ জুলাই এবং ৩, ১০, ১৮, ২৫ আগস্ট ও ৬ সেপ্টেম্বর নয় দফা আলোচিত এই মামলার চার্জ গঠনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সকল আসামি আদালতে হাজির করতে না পারায় চার্জ গঠনের তারিখ পিছিয়েছিল।

প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে জনসভায় গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ পাঁচজন নিহত হন। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অর্থমন্ত্রী ছিলেন কিবরিয়া।

এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাংসদ আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন।

তিন দফা তদন্তের পর এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সিলেট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুন নেছা পারুল ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর আরিফুল, গউছ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১১ জনের নাম যোগ করে মোট ৩২ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন।

হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মো. আতাবুল­াহ মামলাটি বিচারের জন্য গত ১১ জুন সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেন।

এদিকে, গত ৫ জানুয়ারি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত বিস্ফোরক মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন হবিগঞ্জ বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ আদালত।

ছামির মাহমুদ/এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।