জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে আওয়ামী লীগের : খালেদা
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। সরকারের দুই বছর পূর্তিতে ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উল্লেখ করে জনসভাটির আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পর্ক রয়েছে কারণ তারা ক্ষমতায় আসলেই জঙ্গিবাদের উত্থান হয়। সংখ্যা লঘুদের উপর নির্যাতন বেড়ে যায়।
চলমান সংকট সমাধানে সরকারকে ফের সংলাপের আহ্বান জানিয়ে খালেদা বলেন, যা করেছেন ভুল করেছেন। ভুল স্বীকার করে নেন। ভুল স্বীকার করলে কারো বিরুদ্ধেই রাগ ক্ষোভ কোন কিছুই থাকবে না।
তিনি বলেন, গুম খুন বন্ধ করে সঠিক পথে আসুন। জনগণ কখন জেগে উঠবে বলা যায় না। তাই এখনো সময় রয়েছে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসুন।
খালেদা বলেন, যেভাবে নেতাকর্মীদের নির্যাতন করা হচ্ছে তা বন্ধ করুন। অনেক করেছেন এবার বন্ধ করতে হবে। দেশ ও জনগণের সমৃদ্ধির জন্য সবাই মিলে একত্রে কাজ করতে চান বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছোট দেশ। সবাই মিলেমিশে কাজ করলে সুন্দর দেশ উপহার দিতে পারবো। তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারবো।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। যেটা সদ্য শেষ হওয়া পৌরসভা নির্বাচনে আবারো প্রমাণিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে উপজেলা নির্বাচন ও তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকারের অনিয়ম ও কারচুপির কথা উল্লেখ করেন খালেদা।
তিনি বলেন, জনপ্রিয়তা দেখানোর জন্য তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট নেয়া উচিত। তাহলেই প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে। এসময় তিনি আমারদেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি দাবি করেন তিনি।
দেশের জনগণ জেগে উঠলে জোর করে আর ক্ষমতায় থাকা যাবে না উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, জুলুম নির্যাতন বন্ধ করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিন। কথায় কথায় নতুন আইন করা হয় শুধুমাত্র বিরোধী দলকে বন্দী করে রাখার জন্য।
বর্তমান সরকার ও সংসদকে অবৈধ দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আজকে যারা ক্ষমতায় আছে তারা কোন বৈধ সরকার না। তারা যা করছে তাও বৈধ না। নির্বাচন কমিশনে যারা আছে তারা অথর্ব, মেরুদণ্ডহীন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন হাসিনার কাছে সাহায্য চায়। তারা নাকি অসহায়। অসহায় হলে পদত্যাগ করুক। এই নির্বাচন কমিশন দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি’র নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। তুলে নিয়ে গুম করা হচ্ছে। এই গুম-খুন করে জনগণকে দমিয়ে রাখা যাবে না।
অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে খালেদা বলেন, যেহেতু এখন আপনারা (আওয়ামী লীগ) সরকারে আছেন, নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়ার দায়িত্ব আপনাদেরই।
তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ, দেশের মানুষ চায় আমরা একসঙ্গে কাজ করি। আমরাও তা-ই চাই। দেশের প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এদেশের মানুষ টকশো দেখে। সেখান থেকে মানুষ অনেক কিছু জানতে পারত। কিন্তু সেগুলো এখন নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বললেই তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষকদের অবহেলা করার সুযোগ নেই। তাদের যথাযোগ্য সম্মান দিতে হবে। শিক্ষকসহ সব ক্যাডারকে অবহেলা করা হচ্ছে। দু-একটা ক্যাডারকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এভাবে বৈষম্য বাড়ানো হচ্ছে। এভাবে শান্তি আসবে না।
বিএনপি নেত্রী বলেন, তারা জিততে পারবে না বলেই নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েই কিভাবে দখল করবে সেই ব্যবস্থা করে রাখে। একইভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবে নির্বাচন দিয়ে জয়ী হতে পারবে না বলেই জোর করে দখল করে নেয়।
তিনি বলেন, বিগত সিটি নির্বাচনে বিএনপি মেয়র প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা দেখে ভয় পেয়ে আওয়ামী লীগের গুন্ডারা জাল ভোট দিয়ে নিজেদের প্রার্থীদের জয়ী করে নেয়।
খালেদা জিয়া বলেন, “একদলীয় শাসন কায়েম করার বহু চেষ্টা করেছেন। এখন আবার করছেন। মানুষ গুম করে, খুন করে রাজতন্ত্র কয়েম করার যে চেষ্টা আপনারা করছেন, আমার মনে হয় তা কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না।
তিনি বলেন, হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার হাত রক্তে রঞ্জিত। সারা জীবন পরিষ্কার করতে চাইলেও পরিষ্কার হবে না।
এমএম/এএম/এমএস