ইমেজ সংকটে বিএনপি-জামায়াত: শ ম রেজাউল
দেশে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিএনপি-জামায়াত ইমেজ সংকটে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
তিনি বলেছেন, আবার যদি কেউ সেই চেষ্টা করে তাহলে দেশের মানুষই তাদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও আপস করেননি। কাজেই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ বা সরকারকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। জনগণের ম্যান্ডেট না নিয়ে যেনতেন উপায়ে বিএনপির ক্ষমতায় আসার দুঃস্বপ্ন কখনো সফল হবে না। কারণ, নেতৃত্ব ও আদর্শহীন বিএনপির ওপর মানুষের আস্থা নেই।
মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) খুলনা শিপইয়ার্ডে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্য শিপইয়ার্ডের নবনির্মিত ইলিশ গবেষণা জাহাজ হস্তান্তর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শ ম রেজাউল বলেন, এ দেশটা আইনসঙ্গতভাবে চলবে। দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান। সংবিধানে যা নেই সেরকম কোনো আবদার মেনে নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। অসাংবিধানিক কোনো দাবী আইনের শাসনের পরিপন্থি। বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সংবিধানসম্মত নয়। তাই এ দাবি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের নতুন গবেষণা জাহাজ ইলিশ উৎপাদনে ব্যাপক সক্ষমতা বাড়াবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। অতীতের চেয়ে এখন বেশি ইলিশ উৎপাদন হচ্ছে। তবে ইলিশের সাময়িক উৎপাদন বাড়ানো নয়, বরং গবেষণার মাধ্যমে আমরা ইলিশ উৎপাদনে স্থায়ী সক্ষমতা বাড়াতে চাই। উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি ইলিশের গুণগত মান নিশ্চিত করতে চাই। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে কখনো যেন ইলিশ বিপন্ন না হয় সেজন্য আমাদের গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে, বিভিন্ন ল্যাবরেটরি রয়েছে। ইলিশ গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষণা জাহাজ বড় ধরনের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমরা চাই, নদীমাতৃক বাংলাদেশে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু ইলিশ পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। খুলনা শিপইয়ার্ডে গবেষণা জাহাজ তৈরি আমাদের সক্ষমতার পরিচয়। জাহাজ নির্মাণে ভবিষ্যতে আমরা বিদেশের ওপর নির্ভর করবো না। প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলেন। আজ দেশের মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক চাহিদা পূরণ সম্ভব হয়েছে। এরইমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বিশ্বের বিস্ময় হবে বাংলাদেশ।
শ ম রেজাউল বলেন, করোনার সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দরজা একদিনের জন্যও বন্ধ ছিল না। কারণ এ মন্ত্রণালয়ের কাজ স্থবির হয়ে গেলে মানুষের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা মেটানো মাছ, মাংস, দুধ, ডিমের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। এ খাতে কাজ করা মানুষ বেকার হয়ে যাবে। এ খাতের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতকে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের দিকে নিয়ে এসেছি।
খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর খন্দকার আক্তার হোসেনের সভাপতিত্বে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও অতিথি হিসেবে ছিলেন- বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)-এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন, খুলনা নেভাল এরিয়া কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার, বিএফআরআই-এর ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের পরিচালক মো. আবুল বাশার এবং বিএফআরআই ও খুলনা শিপইয়ার্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড এ গবেষণা জাহাজ নির্মাণ করেছে। ৮৬ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১৯ দশমিক ৬৮ ফুট প্রস্থের এ জাহাজে ফিশ ফাইন্ডার, ইকো-সাউন্ডার, নেভিগেশন এবং অত্যাধুনিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জামাদি, আধুনিক ইলিশ গবেষণা ল্যাবরেটরি, নেটিং সিস্টেম, পোর্টেবল মিনি হ্যাচারিসহ অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে। জাহাজটি দিয়ে নদী এবং সাগরের মোহনায় ইলিশের প্রজনন এবং বিচরণক্ষেত্রের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ এবং নতুন নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। এছাড়া ইলিশের সর্বোচ্চ সহনশীল উৎপাদন, ইলিশের গতিবিদ্যা, জীবনচক্র ও উৎপাদনশীলতার ওপর পরিবেশ ও জলবায়ুগত প্রভাব নির্ণয় সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালনা করা হবে।
আইএইচআর/এমকেআর/এএসএম