‘সময়ের প্রয়োজন মেটাতেই ছাত্রলীগের এগিয়ে চলা’


প্রকাশিত: ০৩:৪৯ পিএম, ০৩ জানুয়ারি ২০১৬

শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাঙালী জাতির পিতা, বাঙালী জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে গড়া সংগঠন, তাঁর জীবন ও যৌবনের উত্তাপে শুদ্ধ সংগঠন, তাঁর সোনার বাংলা বিনির্মাণের কর্মী গড়ার পাঠশালা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

বিদ্যার সঙ্গে বিনয়, শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা, কর্মের সঙ্গে নিষ্ঠা, জীবনের সঙ্গে দেশপ্রেম এবং মানবীয় গুণাবলির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতিক্রম করেছে পথ চলার ৬৮ বছর। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি সময়ের দাবিতে জন্ম হয়েছিল প্রিয় এ সংগঠনের। সময়ের প্রয়োজন মেটাতেই এগিয়ে চলা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। জন্মের প্রথম লগ্ন থেকেই ভাষার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাঙালীর স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধের গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি স্বাধীনতা ও স্বাধিকার  আন্দোলনের ছয় দশকের সবচেয়ে সফল সাহসী সারথী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধাবী ছাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় রাজ পথে ছিল সদা সোচ্চার। উর্দুর বিপক্ষে ধর্মঘটে তিনি ও তাঁর বন্ধুদের কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ছাত্রলীগই প্রথম বাংলা ভাষার জন্য ১০ দফা দাবি উত্থাপন করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আন্দোলন জোরালো করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের ভূমিকা প্রণিধানযোগ্য।

১৯৬২ সালের তৎকালীন আইয়ুব খান সরকার কর্তৃক গঠিত শরিফ কমিশন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর লক্ষ্য ও স্বার্থের অনুকূলে একটি গণবিরোধী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিল। সেই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল প্রধান প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গণ-আন্দোলন ও গণজাগরণ তৈরী করে। সেই বাষট্টির রক্তঝরা দিনগুলিতে রক্ত ঝরেছে অসংখ্য ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর।

বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সনদ ‘৬-দফা’ বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  আস্থা রেখেছিলেন তরুণ ছাত্রনেতাদের উপরে। তিনি সে সময়কার ছাত্রনেতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন জেলায় জেলায় অবস্থান সুদৃঢ় করে ‘৬-দফা’র ব্যাপক প্রচারণা চালাতে। ‘৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানেও  বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ছিল রাজপথের প্রমিথিউস।

একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও  সাফল্যের দীর্ঘ পথ চলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হারিয়েছে তার সহাস্রাধিক নেতা-কর্মীকে। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ, বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের সমাবেশে বলেছিলেন, ‘‘ দানবের সঙ্গে লড়াইয়ে যে কোন পরিণতিকে মাথা পেতে বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত। তেইশ বছর রক্ত দিয়ে এসেছি। প্রয়োজনবোধে বুকের রক্তে গঙ্গা বহাইয়া দিব। তবু সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও বাংলার বীর শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করব না।’’ তাইতো মুক্তিযুদ্ধে আমাদের প্রাণের সংগঠনের ১৭,০০০ (সতের হাজার) বীরযোদ্ধা তাঁদের বুকের তাজা রক্তে এঁকেছেন লাল-সবুজের পতাকা, এঁকেছেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ কিলোমিটারের এক সার্বভৌম বাংলাদেশের  মানচিত্র। সেই সব বীরযোদ্ধারাই আমাদের অনুপ্রেরণা, আমাদের শক্তি, আমাদের সাহস।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীর মধ্যে আছে তরুণ মুজিবে নান্দনিকতা ও আদর্শ, আছে কাজী নজরুলের বাঁধ-ভাঙ্গার শৌর্য, আছে ক্ষুদিরামের প্রত্যয়, আছে সুকান্তের অবিচল চেতনা। তাইতো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শিক্ষার অধিকার রক্ষার পাশাপাশি জাতীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বার্থ সুরক্ষায় সবসময় মঙ্গল প্রদীপের আলোকবর্তিকা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে চার দিগন্তে।

যখন বাঙালি জাতি, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছিল। ঠিক তখনই বাঙ্গালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে উজ্জ্বলতম নক্ষত্রটিকে নিভিয়ে দিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হিংস্র হায়নার বীভৎস চিৎকারে গর্জে উঠলো ফারুক, রশিদ, মহিউদ্দিন, বজলুল হুদাদের মরণাস্ত্র। পেছনে  থেকে প্রত্যক্ষ মদদ দিল খন্দকার মোশতাক আর বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ পরবর্তী বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাগ্যাকাশে যে কালো মেঘ গ্রাস করেছিল সেই মেঘ সরাতে প্রত্যাশার সূর্য হাতে ১৯৮১ সালে প্রত্যাবর্তন করলেন আমাদের প্রাণের নেত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনা। সেদিন প্রিয় নেত্রীর পাশে ভ্যানগার্ডের ভূমিকায় ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

সামরিক শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৮৩ সালে শিক্ষা আন্দোলন ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের দশ দফা তৈরীতে নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। শিক্ষার অধিকার প্রসারে শামসুল হক ও অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর কমিশনের রিপোর্ট তৈরীতে ছাত্রসমাজের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ।

১৬ কোটি বাঙালির প্রাণের স্পন্দন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুনিপুণ কারিগর, বিশ্বজয়ী নেত্রী, বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত, নারী মুক্তির পথপ্রদর্শক দেশরত্ম শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ১৯৮৮ সালের ভয়বহ বন্যার ক্ষতি মোকাবেলায় পালন করেছে অগ্রণী ভূমিকা। উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের বন্যাসহ সকল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একই কার্যক্রম নিয়ে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল ছাত্রলীগ। ২০০২ সালের ২৩ জুলাই বিএনপি’র পেটোয়া পুলিশ বাহিনী ও ছাত্রদলের নেতারা গভীর রাতে শামসুন্নাহার হলে ঢুকে ছাত্রীদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সেদিন শামসুন্নাহার হলের ছাত্রীবোনদের সম্ভ্রম রক্ষায় ও দোষীদের বিচারের দাবীতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছিল। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বিতর্কিত সেনা শাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে আটক আমাদের প্রিয় নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনে আমাদের নেতা-কর্মীরা জীবন বাজি রেখেছিল।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার মতই

‘‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ তূর্য’’

আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি  দুস্থ শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকার বিতরণ, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, রক্তদান, বৃক্ষরোপণ, পথ শিশুদের জন্য ভ্রাম্যমাণ পাঠদান কর্মসূচি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দীর্ঘ দিনের চর্চা।

১৯৭৩ সালের ৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘‘শেখ মুজিবুর রহমানকে বেটে খাওয়ালেও বাঙালা সোনার বাঙলা হবে না যদি বাংলাদেশের ছেলে আপনারা সোনার বাঙলার  সোনার মানুষ পয়দা করতে না পারেন।’’ তাইতো বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মী সোনার মানুষ হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে প্রতিটি দিন  শুরু করে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাঁর সোনালী অতীত ন্যায় সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়বে। আর সে জন্যই দেশরত্ম শেখ হাসিনা’র নেতেৃত্ব ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মী তাঁদের  মেধা ও শ্রম দিয়ে সর্বোচ্চ অবদান রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।‘রূপকল্প ২০২১’ ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে প্রযুক্তি দক্ষ ছাত্র সমাজ তৈরীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজ করছে ও করবে। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ১৯ দফা দাবি পেশ করেছে। ভবিষ্যতেও ছাত্রলীগ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ শিক্ষা সেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তাকল্পে কাজ করবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।

নবীনদের মেধা দেশ গড়ার কাজে লাগুক, স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে বিধৌত হোক নতুন প্রজন্মের বিবেক ও চেতনা। অনাগত প্রজন্মের লড়াই হোক সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে, সকল অশুভ শক্তিকে পেছনে ফেলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে, দেশ গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ৬৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে এই হোক আমাদের শপথ।

শুভ জন্মদিন
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক: মোঃ সাইফুর রহমান সোহাগ, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

এসএইচএস/এএইচ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।