মুরাদকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেন ইশরাক
সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন বিএনপির কূটনৈতিক উইং নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।
তিনি বলেছেন, কয়েক দিন আগে আমাদের দলীয় একটি সভা হচ্ছিল ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে। সেখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে আমি একপর্যায়ে আমার আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। সেখানে আমি রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত অশালীন কিছু শব্দ ব্যবহার করেছি সদ্য বহিষ্কৃত একজন প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। যারা আমার বক্তব্যগুলো নিয়মিত দেখেন, আমাকে পছন্দ করেন- আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী যে আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আগামীতে চেষ্টা করবো এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) রাতে এক ভিডিও বার্তায় অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার বড় ছেলে ইশরাক হোসেন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি নিজেও খুব লজ্জিত ছিলাম, মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আমার পিতৃতুল্য ও অভিভাবক বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আরও সিনিয়র নেতারা ছিলেন, তাদের মধ্যে ডাকসুর সাবেক ভিপি ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামসহ দর্শক সারিতেও অনেক মুরব্বিরা ছিলেন।
ইশরাক আরও বলেন, আমি এটা কোনো অজুহাত হিসেবে বলতে চাচ্ছি না। শুধু প্রেক্ষাপটটা বলতে চাচ্ছি। আমি ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে সেই ব্যক্তির (ডা. মুরাদ হাসান) একটা ভিডিও শুনছিলাম। যেখানে আমাদের কারাবন্দি নেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে স্পর্শকাতর অবস্থায় বিএনপির নেতাকর্মীরা রয়েছি। সেই মুহূর্তে এ কথাগুলো আমাদের খুবই আঘাত করে এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। এটি কোনোভাবে কাম্য নয়।
তিনি বলেন, আমরা নতুন প্রজন্ম যারা রাজনীতিতে আসছি, আমরা এটি বার বার বলে আসছি যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত। একে অপরের প্রতি সহনশীল এবং শ্রদ্ধা নিয়ে কথা বলা উচিত। ওইদিন আমার বক্তব্য শেষ করার পর আমি নিজেই বিব্রতবোধ করছিলাম, যে এতগুলো মুরব্বি এবং টিভি ক্যামেরার সামনে আমি এই শব্দ ব্যবহার করেছি। তখন আমি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করি। আমি বাসায় ফেরার পরে আমার মা আমাকে বলেন, এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর ভুল হয়েছে আমার দ্বারা। আমরা ভাই বোনরা যখন বড় হয়েছি, তখন আমার মা আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন কখনও অশালীন শব্দ না ব্যবহার করার জন্য, পরিস্থিতি যাই হোক।
বিএনপির এ নেতা বলেন, পরে আমি আমাদের দলীয় মহাসচিবসহ অন্য নেতাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। আজকে এই ভিডিওর মাধ্যমে দর্শকশ্রোতা যারা রয়েছেন, বিশেষ করে যাদের আমার প্রতি একটা প্রত্যাশা রয়েছে যে একটি সুস্থ ধারার রাজনীতি হয়তোবা আমরা সূচনা করতে পারি। তাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আপনারা আমাকে এই একটি ভুলের জন্য ক্ষমা করে দেবেন। এটিকে দিয়ে আমার সার্বিক কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন না করার জন্য আমি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। আগামীতে আপনাদের আশা ভঙ্গ হবে না সে ধরনের কাজই করে যাবো ইনশাল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, আর দ্বিতীয় যে কথাটি বলে যাচ্ছি, উনি (ডা. মুরাদ) কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন সেটা ভাবার বিষয়। কারণ তার আরও একটি অডিও বের হয়েছে, যেখানে তিনি রাষ্ট্রীয় পাঁচটি বাহিনীর নাম ব্যবহার করে এক নারীকে অপহরণ করে ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছেন। এর মধ্যে দিয়ে তিনটি প্রশ্ন জাগতে পারে। প্রথমত, তিনি কিসের ভিত্তিতে তাদের নাম ব্যবহার করে এই হুমকি দিলেন। যে প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম বলা হয়েছে, তারা কোনো ব্যক্তি নন, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান, তাদের মধ্যে লুকায়িত কিছু দুষ্ট চরিত্রের লোক থাকতে পারে, যারা এই ধরনের লোকদের সহায়তা করে থাকতে পারেন। তিনি দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন। তাকে প্রতিটি বাহিনীর নিজস্ব রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত ছিল বলে আমি মনে করি। যদি এই বাহিনীগুলোর ভিতরে এ ধরনের লুকায়িত সদস্যরা থাকেন, যারা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, এই লোকের মতো আরও যদি রাজনীতিবিদরা রাষ্ট্র পরিচালনার মধ্যে থাকেন, তাদেরও শনাক্ত করার জন্য এটি দরকার ছিল।
ইশরাক আরও বলেন, আমাদের গণমাধ্যম যে এই রকম মেরুদণ্ডহীন হয়ে গেছে এটা দুঃখজনক, লজ্জাজনক এবং শঙ্কার কারণ। আমরা দেখেছি যে বিভিন্ন সত্য নিউজ ঘটনা যেগুলো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সেগুলো অতি বিলম্বে এখানে ছাপানো হয়েছে। অথবা কোনো কোনো নিউজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অতএব গণমাধ্যম যে নিয়ন্ত্রিত, সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো কালো আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সেটি স্পষ্ট। এর বাইরেও আপনারা দেখেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বিদেশি সহযোগী সংস্থা বিবৃতি দিয়েছে যে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায়।
আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে দাঁড়িয়েছি। আমাদের আন্দোলন বৃথা যেতে দেবো না। গণতন্ত্র রক্ষা এবং পুনরুদ্ধারে যতগুলো আন্দোলন হয়েছে, মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে কারও রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। ইনশাল্লাহ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আবারও একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো। ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনবো এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের যারা রাষ্ট্র পরিচালনায় রয়েছেন তাদের জনগণের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসবো।
কেএইচ/কেএসআর/জিকেএস