শিবিরের নেতা নির্বাচনে স্থান পাচ্ছেন মেধাহীনরা


প্রকাশিত: ০১:৪৪ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নিবন্ধন বাতিল হওয়া রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির ক্রমেই মেধাহীনতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। ‘মেধাবীদের’ সংগঠন হিসেবে পরিচিতি থাকলেও বর্তমানে মামলাবাজদের সংগঠনে পরিণত হয়েছে শিবির।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ ছাত্র সংগঠনটি নিজস্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হলেও বর্তমানে চিত্র ব্যতিক্রম।গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে অছাত্র ও অযোগ্যরা সংগঠন পরিচালনা করছে। খুব শিগগিরই গঠিত হতে যাওয়া কেন্দ্রীয় কমিটিতেও অছাত্ররাই নেতৃত্বে আসতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছে বলেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

যদিও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো অছাত্র এ সংগঠনে থাকার নিয়ম নেই। কিন্তু বর্তমানে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা অনেক আগেই ছাত্রত্ব শেষ করেছেন। শুধু সাধারণ সদস্য নয়, সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সেক্রেটারিয়েটেও রয়েছে অছাত্রদের দৌরাত্ম।

সূত্র জানায়, শিবিরের বর্তমান সভাপতি আবদুল জাব্বার ও সেক্রেটারি জেনারেল আতিকুর রহমান  ছাত্রজীবন শেষ করেছেন অনেক আগেই। শুধু সভাপতি ও সেক্রেটারির পদে থাকার জন্য তারা রাজধানীর একটি নৈশ্যকালীন ল’কলেজ থেকে এলএলবি করেছেন।  

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ, হত্যা, গাড়িতে আগুন, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ, জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এবং আদালতের রায় অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন বাতিলসহ নানা ইস্যুতে প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে শিবিরের মুরুব্বি সংগঠন জামায়াত। তাই আন্দোলন-সংগ্রামসহ রাজপথের শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয় শিবির।

স্বাধীনতাযুদ্ধে দেশবিরোধী অবস্থানের জন্য তৎকালীন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রসংগঠন ‘ছাত্রসংঘ’ পরবর্তীতে (১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি) ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’ নামে অবির্ভূত হয়।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন বর্তমানে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী।

এ ছাত্রসংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি বছর প্রত্যেক সদস্যের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হবার কথা থাকলেও এখন এ নিয়ম আর মানা হচ্ছে না।

জানা গেছে, বর্তমানে কয়েকজন জামায়াতের নীতি নির্ধারণী নেতা এবং শিবিরের কয়েকজন সাবেক নেতা সারা দেশের সকল সদস্যের মতামতকে উপেক্ষা করে সভাপতির নাম ঘোষণা করেন। গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে এভাবে নেতা নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূলে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

খুব শিগগিরই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নেতা নির্বাচনে লবিংয়ের জোরে সভাপতির পদে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক সেক্রেটারি আতিকুর রহমান এবং সেক্রেটারির জন্য সেক্রেটারিয়েট সদস্য ইয়াসিন আরাফাত।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, আতিকুর রহমান এবং ইয়াসিন আরাফাতের ছাত্র জীবন শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এছাড়া এ দুইজনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মোস্ট ওয়ানটেড আসামি। এদের দুইজনের বিরুদ্ধেই ৭০টির অধিক মামলা রয়েছে।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের জন্য সভাপতি নির্বাচন বুধবার হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচিত সভাপতিই সেক্রেটারি মনোনয়ন দেবেন। এছাড়া সারা দেশের সদস্য শাখাসহ সাংগঠনিক হিসেবে মোট ৩২ কিংবা তারও বেশি সেক্রেটারিয়েট সদস্যের নাম ঘোষণা করার কথা রয়েছে। বর্তমানে এ ছাত্রসংগঠনটির সদস্যদের গড় বয়স ৩৫ পার হয়েছে।


দলীয় সূত্র জানায়, দলের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে কয়েক বছর ধরে পছন্দের ব্যক্তিদের সদস্য পদও দেয়া হচ্ছে। অথচ আগে অনেক নিয়ম মেনে, বই পড়িয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথমে সমর্থক, তারপর কর্মী ও সাথী বানানোর পর কেন্দ্রীয় সভাপতির অনুমতি নিয়ে এ সদস্যপদে শপথ করানো হতো।

এক প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক কেন্দ্র্রীয় সভাপতি বলেন, অনেক সময় দলকে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করানোর জন্যই অভিজ্ঞ নেতৃত্ব দরকার হয়।

তবে শিবিরের প্রচার সহকারী মো. জামাল উদ্দিনেএ বিষয়ে সরাসরি উত্তর না দিয়ে জাগো নিউজকে মোবাইলফোনে বলেন, গত ২৭ ডিসেম্বর থেকেই নির্বাচন শুরু হয়েছে। আগামী এক দুই দিনের মধ্যে অধিবেশনের মাধ্যমে সভাপতির নাম ঘোষণা করা হবে। তবে কোথায় এ নির্বাচন হচ্ছে তা জানতে তিনি রাজি হননি।

যদিও সূত্র মতে, কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে ঢাকার অদূরে কোনো এক স্থানে এ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সারা দেশে পৌর নির্বাচনকে ঘিরে পুলিশ প্রশাসন ব্যস্ত থাকবে। আর এ জন্যই এই দিনটিকে বেছে নিয়েছে শিবির।

এএম/একে/এএইচ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।