স্বাধীনতা নিয়ে সাবেক চিফ হুইপ ফারুকের ক্ষোভ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক অনেকদিন ধরে রাজনৈতিক আলোচনার বাহিরে। বিরোধীদলে থাকাকালীন হরতাল সমর্থনের মিছিলে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে পুলিশি প্রহারে পড়েন এ বিএনপি নেতা। সাধারণত তারপর থেকেই অনেকটা আড়ালে চলে যান তিনি। সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছিলেন জাগো নিউজের সঙ্গে। কথা হয় জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মানিক মোহাম্মদ-এর সঙ্গে।
জয়নুল আবদিন ফারুক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে উদ্দীপনা নিয়ে যৌবনকালে অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আজকে বলবো, ৪৪ বছর পরেও বহু মুক্তিযোদ্ধা কষ্টে জীবনযাপন করছেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পরেও আমার এই ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় আমি মনে করি বাক স্বাধীনতা, সত্যিকারে স্বাধীনতার অর্থ নিজেরাই বুঝি নাই।
জাগো নিউজকে তিনি বলেন, অনেকে বলবে আপনার দলও তো ক্ষমতায় ছিল? আপনি তো কয়েকবার এমপিও হয়েছেন? আমি এইটুকু তফাৎ করবো, বিএনপি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের দল। আওয়ামী লীগ খুব পুরানো দল, কিন্তু আওয়ামী লীগের মাধ্যমে আমরা আন্দোলন-সংগ্রামে গিয়েছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম স্বাধীনতার সপক্ষের দল বলে, কিন্তু স্বাধীনতার সপক্ষের কাজ করে কী না?
তিনি আরো বলেন, আজকে দেখেন দীর্ঘদিন তারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায়। আজকের দৃশ্যটা দেখেন, বের হতে পারছি না, চারদিক বন্ধ। এটা কী স্বাধীনতা? এটা কী গণতন্ত্র?
আমি মনে করি সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতার সপক্ষের লোকরাই গণতন্ত্রের ওপর বেশি আঘাত হেনেছে। আমাদেরও ভুলত্রুটি হয়েছে। সেটা অস্বীকার করবো না- যোগ করেন জয়নুল আবদিন ফারুক।
বিএনপি এই নেতা বলেন, ৪৪ বছর পর উচিত সকল দলের ঐকমত্য। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) উচিত বলবো না, আমি অনুরোধ জানাবো যে দুই নেত্রী ও আরো রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার।
ভারতের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সোনিয়া গান্ধী সরাসরি মোদির বাসায় চলে গেলো। আমার মনে হয় এগুলো আমাদের শেখা উচিত। হ্যাঁ, অনেকে বলবেন শেখ হাসিনাও তো আসছিলো। তবে তখনকার প্রেক্ষাপটটাও দেখতে হবে। আমি মনে করি এসব প্রেক্ষাপট বা সমালোচনা ভুলে সত্যিকারে স্বাধীন বাংলাদেশ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গণতান্ত্রিক স্বাধীন দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, যারাই উগ্রপন্থী জন্ম দিচ্ছে তারাই উগ্রপন্থী ধ্বংসের জন্য নেমে পড়েছে। ইসরায়েল, ফিলিস্তিনির মতো রাষ্ট্রের ওপর এতো অত্যাচার। জাতিসংঘ কী করছে? বৃহৎ শক্তিগুলো কী করছে? কিছু করতে পারছে না। সেখানে বাংলাদেশ এখনও অনেক ভালো আছে। আমাদের সরকারের সময়ে উগ্রপন্থীদের বিচার করা হয়েছে। বিচারের আওতায় এনে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারও চেষ্টা করছে, আবার বলছে জঙ্গিবাদ নেই। আবার কখনো বলে জঙ্গিবাদ, জঙ্গিবাদ। এমন পরিস্থিতিতে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এ নেতা।
জামায়াত সম্পর্কে সাবেক চিফ হুইপ বলেন, ১৯৯১ সালে আমরা ৫ দলীয় জোটকে বলেছিলাম তারা কিন্তু আমাদের সমর্থন করেনি। সে কারণে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে সরকার গঠন করতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেন, শেখ হাসিনা বলছেন উগ্রপন্থী চরমপন্থীদেরকে আমরা পতাকা দিয়েছি, মন্ত্রী বানিয়েছি, জামায়েত ইসলামীকে সমর্থন দিয়েছি, মানবতাবিরোধীদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু এই মানবতাবিরোধীদের সঙ্গে জোট করে তারা (আওয়ামী লীগ) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে নাই?
তিনি আরো বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা বিরোধী দলে ছিলাম। আওয়ামী লীগ তখন তাদের (জামায়াতে ইসলামীর) নিবন্ধন বাতিল করলো না কেন? তাহলে তো আজকে তারা আমাদের জোটে আসতে পারতো না।
আমরা মনে করেছি দেশ এখন অগ্রগতির দিকে, এগিয়ে যাবে। ভেদাভেদ ভুলে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি দেশ পরিচালনা হবে- বলেন বিএনপির এ নেতা।
এমএম/আরএস/জেডএইচ/আরআইপি