সবাইকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান খালেদার


প্রকাশিত: ১০:১০ এএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫

আসন্ন পৌর নির্বাচনে সবাইকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৮০ ভাগ ভোট পেয়ে ধানের শীষের প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন।’ রোববার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান (বার অ্যাসোসিয়েশন) মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) আয়োজিত কাউন্সিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল ও নির্বাচন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংগঠনটি। দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে এ কাউন্সিল অনুষ্ঠানে যোগ দেন খালেদা জিয়া।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, সারাদেশে এখন দখল উৎসব চলছে। মানুষের ভোট দেয়ার অধিকার দখল হয়ে গেছে। এখন কষ্ট করে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়া লাগে না। এর আগেই বাক্স ভরে দেয়া হয়। কত সহজ করে দিয়েছে সরকারি দল! এই হলো দেশের সত্যিকারের অবস্থা।

তিনি বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে উৎসাহ- উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রমনা। প্রতিটি মানুষ অপেক্ষায় বসে আছে তারা ভোট দেবে। মানুষ ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য বসে আছে। আওয়ামী লীগ যতই মিথ্যা জরিপ করুক লাভ হবে না। আমার কাছের সঠিক জরিপ আছে তাদের ভড়াডুবি হবে। নিজেদের অপকর্ম হালাল করার জন্য মিথ্যা জরিপ চালাচ্ছে।

রকিব-হাসিনার অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না তা প্রমাণ করে দিন
খালেদা জিয়া বলেন, ‘রকিব-হাসিনার অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না এবং রকিব-হাসিনা মার্কা নির্বাচন জনগণ গ্রহণ করে তা আপনারা প্রমাণ করে দিন।’

তিনি বলেন, ধানের শীষের বিজয় হবে। এই জন্যই বিএনপিকে নিয়ে তাদের ভয়। বারবার কৌশল নেয় বিএনপি যাতে নির্বাচনে না আসতে পারে। কিন্তু এবার তারা (আওয়ামী লীগ) কৌশলে একটু ভুল করে ফেলেছে। প্রতীক দিয়ে নির্বাচন দিয়ে তারা মনে করেছিল বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেবে না। কিন্তু নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি প্রমাণ করেছে নির্বাচনমুখী দল। বিএনপি নিরপেক্ষ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে বিশ্বাস করে, একদলীয় নির্বাচন নয়।     

খালেদা জিয়া বলেন, ‘বর্তমানে নিকৃষ্ট স্বৈরশাসন জগদ্দল পাথরের মত বাংলাদেশর মানুষের উপর চেপে বসেছে। স্বাধীনতার চেতনা ও গণতন্ত্র গলা টিপে হত্যা করেছে। সুশাসন নির্বাসনে চলে গেছে। মৌলিক মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভুলুন্ঠিত করা হয়েছে। সমাজের কোথাও ন্যায় বিচার নেই। প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। গুম, খুন মামলা, হামলা, নির্যাতনের মাধ্যমে কায়েম হয়েছে ত্রাসের রাজত্ব।

ক্ষমতাসীনরা তাদের নিজ দলের বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল ও ভিন্ন মতের অস্তিত্ব রাখতে চায় না এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপির মত বড় রাজনৈতিক দলের মহাসচিবকে (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলমা আলমগীর) ৬ বার কারাগারে নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৮৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

বিএনপি প্রধান বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গণমাধ্যমের উপর নেমে এসেছে তোড়জোর। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর গণমাধ্যমের উপর আরো দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের অপশাসনের সমালোচনা করলেই তাদের রোষানলে পড়তে হয়। সরকারের অপকর্ম তুলে ধরার অপরাধে দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভিসহ অনেক গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে হাজার হাজার সাংবাদিক বেকার হয়ে গেছে। দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন।’

সম্প্রতি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগযোগের সবগুলো মাধ্যম বন্ধ করে দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, ‘ঘরে বাইরে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নেই। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ ২৪ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সত্য তুলে ধরার অপরাধে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে তিন বছর কারাগারে রাখা হয়েছে। একুশে টিভির চেয়ারম্যান আবদুস সালামকে কারাগারে রেখে সু-কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে চ্যানেলটি দখল করা হয়েছে।’

অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধনের নামে কালাকানুন
খালেদা জিয়া বলেন,  ‘অনলাইন গণমাধ্যমকে নিবন্ধনের নামে কালাকানুন করে সরকার গণমাধ্যম বন্ধ করার পাঁয়তারা করছে। যারাই এই কালাকানুনের বিরুদ্ধে সমালোচনা করছে তাদেরই হয়রানি করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সম্পাদক পরিষদের দেয়া বিবৃতিও আমলে নেয়া হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘সরকার প্রেস ক্লাবকেও ন্যাক্কারজনকভাবে দখল করে নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় মেধাবী সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে কারাগারে নেয়া হয়েছে।’

সকল বন্ধ গণমাধ্যম ও কারাগারে আটক সকল সাংবাদিকদের মুক্তির দাবি জানান খালেদা জিয়া।

সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রের ভেতরে থাকার অনুমতির দাবি
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমরা অতীতে দেখে আসছি নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য সাংবাদিকরা ভোট কেন্দ্রের ভেতরে যেত। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে সাংবাদিকরা নাকি ভোট কেন্দ্রের ভেতরে যেতে পারবেন না। এর লক্ষ্য আরো পরিষ্কার। কারণ, চুরি করার জন্য। সেজন্য অবশ্যই সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে।

সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা ভোটকেন্দ্র্রের ভেতরে যাবেন। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে কি হচ্ছে, না হচ্ছে সব আপনারা তুলে ধরবেন।’
 
বিএফইউজের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- সাংবাদিক নেতা এম এ আজিজ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, রুহুল আমিন গাজী, কবি আব্দুল হাই শিকদার, জাহাঙ্গীর আলম প্রধানসহ সংগঠনের সারাদেশের সাংবাদিক নেতারা।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আব্দুল মান্নান, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া প্রমুখ।

এফএইচ/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।