নওগাঁয় সুষ্ঠু পৌর নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা
দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনের আমেজ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কনকনে শীত উপেক্ষা করে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ছুটে যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। প্রার্থীদের সঙ্গে ছুটছেন কর্মীরাও। ভোটারদের কাছ থেকে দোয়া আর্শীবাদ চাচ্ছেন, দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
নওগাঁর রাস্তাঘাট, অলিগলি ছেঁয়ে গেছে পোস্টারে পোস্টারে। যেন কোথাও একটুও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। প্রার্থীরা চায়ের দোকানে, রাস্তাঘাটে ভোটারদের কাছে লিফলেট বিতরণ করে ভোট চাইছেন। প্রচারণা চালাতে গিয়ে তারা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীনও হচ্ছেন। সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরাও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারাও ভোটারদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
নওগাঁ পৌরসভার পিরোজপুর গ্রামের সবেজান বিবি বলেন, ভোটের সময় হলেই শুধু ভোট চাইতে আসেন। ভোট হয়ে গেলে আর কোনো খোঁজ খবর নাই। রাস্তা-ঘাটে যে হারে পোস্টার লাগিয়েছে সেভাবে তো পৌরসভার উন্নয়ন হয় না। পৌরকর দেয়া হয় কিন্তু রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন, লাইটিং ও পানির ব্যবস্থা নাই।
একই গ্রামের সাত্তার হোসেন বলেন, ভোটের আগে বিভিন্ন জন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। কিন্তু নির্বাচন হয়ে গেলে সেসব কথা আর মনে থাকে না। পৌরসভার কোনো উন্নয়ন না করে নিজেদের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এবার দেখে শুনে যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দিবেন বলে জানান।
বর্তমান পৌর মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নজমুল হক সনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা করার সময় কর্মীদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো, রাতের অন্ধকারে দড়িতে টানানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছেন বিরোধী দলের কর্মীরা। নির্বাচনের কোনো নিয়ম কানুন না মেনে গায়ের জোরে সবকিছু করছে। তিনি মৌখিকভাবে বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন বলে জানান।
নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণ বলেন, বিএনপি কর্মীরা যে অপপ্রচার চালাচ্ছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে কুয়াশা ও বাতাসের কারণে পোস্টার ছিঁড়ে যেতে পারে। আমার পোস্টারগুলো ছিঁড়ে যাওয়ায় নতুন করে আবার সেগুলোতে লাগানো হচ্ছে। ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়ায় তারা ভোট দিতে ইচ্ছে পোষণ করছেন। ভোটাররা নতুন প্রার্থীকেই দেখতে চাইছেন। তিনি আশা করছেন নির্বাচিত হবেন।
বর্তমান প্যানেল মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল ওয়াহাব বলেন, প্রতিপক্ষ যে দু’দল আছে তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে কালো টাকার মাধ্যমে জনগণকে প্রভাবিত করে ভোটারদের কাছ থেকে ভোট নেয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, জনগণ আজ সচেতন হয়েছে। তারা ভোটের মূল্য বুঝতে শিখেছে। এই গণতান্ত্রিক যুগে ভোটাররা অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিয়েছে একজন যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করার। জনগণ তাকে নির্বাচিত করবেন বলে তিনি আশাবাদী।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-মেয়র প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হবে কিনা তা নিয়ে তিনি আশঙ্কায় রয়েছেন। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কাছে তিনি অনুরোধ করেছেন এটা যেন গত ৫ জানুয়ারির মতো না হয়। গণতান্ত্রিক যুগে যেন জোরপূর্বক ভোট আদায় ও ব্যালট বাক্স ছিনতায়ের ঘটনা যেন না ঘটে।
জেলা রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিরুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর কাছ থেকে নির্বাচনী নীতিমালা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এছাড়া কোনো প্রার্থীর সঙ্গে অসদাচরণ ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনের জন্য জেলা অবজারভেশন টিম গঠন করা হয়েছে এবং তারা সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে টিম আছে তারাও কাজ করছেন।
তিনি আরও বলেন, নওগাঁ পৌরসভার ৪০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৪টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৬টি কেন্দ্র সাধারণ। আর নজিপুর পৌরসভার ৯টি কেন্দ্রর মধ্যে ৫টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সব কেন্দ্রগুলোকে সমানভাবে প্রাধান্য দেয়া হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে যাতে ভোটারা ভোট কেন্দ্রে নিবিঘ্নে ভোট দিতে পারেন।
নওগাঁ পৌরসভায় চারজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৬ জন এবং ৩টি সংরক্ষিত (মহিলা) কাউন্সিলর পদে ১৪ জন।
অপরদিকে, পত্নীতলা নজিপুর পৌরসভার মেয়র প্রার্থীরা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রেজাউল কবির চৌধুরী বাবু, বর্তমান পৌর মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী। ৯টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৬ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১২ জন।
আব্বাস আলী/এসএস/এমএস