দলের ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত করেছে বিএনপি

খালিদ হোসেন
খালিদ হোসেন খালিদ হোসেন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৪২ এএম, ০৬ অক্টোবর ২০২১

কেন্দ্রীয় নেতাদের ধারাবাহিক মতবিনিময় সভায় দলের ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত করেছেন বিএনপি নেতারা। আগামী আন্দোলন-সংগ্রাম সফল করতে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছে বিএনপির হাইকমান্ড।

দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের দুই দফা ছয়দিনের মতবিনিময় সভায় মূলত সুনির্দিষ্ট এজেন্ডার ওপর মতামত দিয়েছেন নেতারা। যার মধ্যে ছিল- খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন, সাংগঠনিক পরিস্থিতি ও জোট রাজনীতি।

দলীয় সূত্র জানায়, ছয়দিনের বৈঠকে মাঠ পর্যায়ের নেতারা তাদের বক্তব্যে দলের ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরার পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে মতামত দিয়েছেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া অধিকাংশ বিএনপি নেতা আন্তর্জাতিকবিষয়ক (ফরেন উইং) উপ-কমিটি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতায় ফেরার পর এ অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিতে যে প্রভাব পড়েছে তা কাজে লাগাতে অভিজ্ঞ কূটনীতিক নিয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জোট রাজনীতি নিয়েও অধিকাংশ নেতা হতাশা প্রকাশ করেছেন। জামায়াত ইস্যুতে বিএনপি আন্তর্জাতিক মহলে কোণঠাসা রয়েছে বলে মনে করেন অনেক নেতা। ২০ দলীয় জোট বা ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি কার্যত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব জোট নিষ্ক্রিয় করার পক্ষে অনেকেই মতামত দিয়েছেন। অতীতে গঠিত সব জোট নিষ্ক্রিয় করে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। যেকোনো জোট গঠন হলে তার নেতৃত্বে থাকবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এছাড়া কোনো ব্যক্তি বা দলের নেতৃত্বে জোট হলে সেখানে যেন বিএনপি না থাকে।

ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি বাণিজ্য নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন বিএনপি নেতারা। তারা দলীয় হাইকমান্ডের কাছে অভিযোগ করেন, এসব সংগঠনের বিভিন্ন কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেন এবং স্বজনপ্রীতি হয়েছে। বিশেষ করে জেলার আওতাধীন ইউনিটগুলো রয়েছে সেগুলোর কমিটি জেলার পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। কিন্তু সেগুলো কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দেওয়ায় চেইন অব কমান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রাম সফলের জন্য দলের চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনা দরকার। ১/১১ এরপর থেকেই মূলত বিএনপি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এ প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করার তাগিদ দেন নেতারা।

সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক ইস্যুতে দলের পক্ষ থেকে হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে বিক্ষিপ্ত আন্দোলন বা শুধু দলের নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন না করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশনসহ জন ইস্যুতে কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। কোনোভাবেই অপরিকল্পিত কর্মসূচি ঘোষণা করা যাবে না। দলের স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির বেশকিছু পদ শূন্য এগুলো পূরণের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া নেতাদের ভালো কাজের পুরস্কার এবং খারাপ কাজের তিরস্কারের বিধান চালু করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি এক নেতার এক পদ, দলের যে নিয়ম রয়েছে সেটা কার্যকর করতে বলা হয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবি আদায়ে মাঠে নামবো।

বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, গত তিন বছরে এই প্রথম বিএনপি মাঠপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বসেছে এবং ভবিষ্যতে দলের রাজনীতি কী হবে, সে বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, ভুলত্রুটি শুধরে বিএনপি একটি কার্যকরী ও গঠনমূলক ভাবনা নিয়ে হাজির হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ভবিষ্যতে আমরা যে কর্মসূচিই নেই না কেন, সে বিষয়ে মতামত নিলাম। অনেক সময় কথা ওঠে, কর্মসূচি চাপিয়ে দেওয়া হয়, সেটা নিরসন হলো।

তিনি বলেন, নেতাদের যে মতামত এসেছে, তাতে কিছু কৌশলগত দিক ছাড়া মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। সবার মতামত হচ্ছে, দলীয়প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তি আর গণতন্ত্রের মুক্তি একই সূত্রে গাঁথা। নেত্রীর মুক্তিই হচ্ছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলের কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষ হয়েছে। এতে নেতা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সাংগঠনিক বিষয়ে নিজেদের মতামত দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনার পর কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হবে। সময়মতো আমরা এ বিষয় জানাবো।

তিনি বলেন, বিএনপির ভেতর গণতন্ত্রের চর্চা আছে এবং থাকবে। দলের হাইকমান্ড মাঠ পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্য বিবেচনায় নিয়েই দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যা যা করার, তা করবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, জামায়াতে ইসলামীর বিষয়সহ অনেক বিষয়ই মতামত দিয়েছেন নেতারা। দলের সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না।

কেএইচ/এমএএইচ/এসএইচএস/জেআইএম

জামায়াতে ইসলামীর বিষয়সহ অনেক বিষয়েই মতামত দিয়েছেন নেতারা। দলের সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

গত তিন বছরে এই প্রথম বিএনপি মাঠপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বসেছে এবং ভবিষ্যতে দলের রাজনীতি কী হবে, সে বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, ভুলত্রুটি শুধরে বিএনপি একটি কার্যকরী ও গঠনমূলক ভাবনা নিয়ে হাজির হবে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।