ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মহাসড়কে ছিল মৃত্যুর মিছিল


প্রকাশিত: ০৯:৪৮ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫
ফাইল ছবি

ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ব্যস্ত এ দুই মহাসড়কে বছরজুড়েই ছিল মৃত্যুর মিছিল। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ আর গাড়ি চালকদের অদক্ষতার কারণে মহাসড়ক দুটির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অংশে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

এসব দুর্ঘটনায় মরছে সাধারণ মানুষ আর আহত হয়ে বাড়ছে পঙ্গুত্বের সংখ্যা। তাছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোনো ট্রমা সেন্টার না থাকায় দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না বলে অভিমত নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের।

চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অর্ধশতাধিকেরও বেশি সড়কে অন্তত ৪৭ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ।

জানা যায়, চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চিনাইরে ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মো. কামাল খন্দকার (৩০) নামে এক যুবক নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও দুই যুবক।

২৩ এপ্রিল বেলা ১১টায় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খাড়েরা এলাকায় পিকআপ ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ফরিদা খাতুন (৫৫) নামে এক গৃহবধূ নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও তিনজন।

২৫ মে দুপুর আড়াইটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকায় চলন্ত অটোরিকশায় ওড়না পেঁচিয়ে শিফা আক্তার (১৩) নামের এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়।

পরদিন ২৬ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বাড়িউরা এলাকায় ট্রাক্টর ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে হাজী আমির আলী (৫৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটানায় আহত হন আরও তিনজন।

৩ জুন সকাল পৌনে ৮টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রাধিকা এলাকায় মালবাহী ট্রাকচাপায় মো. ইয়াছিন মিয়া (৪৫) ও সাইদুর (৯) নামে দুই পথচারী নিহত হন।

১৩ জুন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার জারুইলতলা এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে আবুল কালাম (৩০) এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও চারজন।

২০ জুন রাত ৮টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নন্দনপুর এলাকায় যাত্রীবাহী অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ইব্রাহিম মিয়া (২০) নামে এক যুবক নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন অটোরিকশার তিন যাত্রী।

১ জুলাই সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার মালিহাতা এলাকায় যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানের ত্রিমুখি সংঘর্ষে বজলু মিয়া (৬০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও পাঁচজন।

৩ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার উচালিয়াপাড়া মোড়ে বালুভর্তি একটি ট্রাক উল্টে শাহবাজ আলী (৫০) নামে এক পথচারী নিহত হন।

৪ জুলাই ভোর ৪টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া এলাকায় নির্মাণ শ্রমিকবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে মনজুর (৩৫) নামের এক নির্মাণ শ্রমিক নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও ৯জন শ্রমিক।

১৫ জুলাই দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার শশই ও আমতলী এলাকায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত ও ২০ জন আহত হন।

১৬ জুলাই দুপুর পৌনে ১২ টায় আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার নূরপুর ও নারায়ণপুরের মাঝামাঝি স্থানে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা খাদে পড়ে নারী ও শিশুসহ একই পরিবারের ৩ জন নিহত হন।

২৩ জুলাই সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ইসলামাবাদ এলাকায় বাসচাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন সিএনজিচালিত অটোরিকশার আরও তিন যাত্রী। ২৫ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরে যাত্রীবাহী বাসচাপায় আবদুল আলীম (৭০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হন।

৩০ জুলাই দুপুর সোয়া ৩টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বিয়াল্লিশর এলাকায় বাসচাপায় খোকন (২৪) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। এ ঘটনায় মুন্না সূত্রধর (২৪) নামে আরেক যুবক গুরুতর আহত হন।

৩০ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাই উপজেলার বাড়িউরা এলাকায় বাসচাপায় জাহিদ মিয়া (০৮) নামে এক শিশু নিহত হয়। ১৪ আগস্ট রাত ৮টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার ডে-নাইট হাসপাতালের সামনে ট্রাকচাপায় পূর্ণতা (২০) নামে এক তরুণী নিহত হন।

১৬ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল উপজেলার শান্তিনগর এলাকায় প্রাইভেটকার চাপায় তানিয়া আক্তার (১৮) নামে এক কলেজছাত্রী নিহত হন। ২৯ আগস্ট রাত পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার আলীনগর এলাকায় গাড়িচাপায় অজ্ঞাত (১৫) এক কিশোরী নিহত হয়।

৩ সেপ্টেম্বর দুপুর সোয়া ২টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে যাত্রীবাহী বাসচাপায় ফেরদৌস (০৮) নামে এক শিশু নিহত হয়। ৪ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহ্বাজপুরে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে অজ্ঞাত (২৬) মাইক্রোবাস চালক মারা যান। এ ঘটনায় একই পরিবারের ৫ জন আহত হন।

১৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের সোহগাপুরে অটোরিকশা চাপায় রাকিবুল হাসান সানি (০৪) নামে এক শিশু নিহত হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার শশই এলাকায় ট্রাকচাপায় রোকেয়া বেগম (৩০) নামে এক গৃহবধূ নিহত হন।

২০ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় তেলবোঝাই ট্যাংক লরি ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে আনোয়ার আলী (৩৫) ও জাবেদ আলী (৫৫) নামে দুই সবজি ব্যবসায়ী নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও তিনজন।

২৩ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড়টার দিকে ভিজিএফ কার্ডের চাল আনতে গিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার গোগদে বাসচাপায় শামছুন্নাহার বেগম (৪২), আজিজা বেগম (৪৫) ও আছিয়া বেগম (৪৫) নামে ৩ নারী নিহত হন। এ ঘটনায় বাসে থাকা অন্তত ১০ যাত্রী আহত হন।

১৩ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবড়িয়ার সরাইল উপজেলার বেড়তলায় যাত্রীবাহী বাসচাপায় মনোয়ারা বেগম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হন। একই দিন বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণাবড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুর বাজার এলাকায় যাত্রীবাহী বাসচপায় হাকিম (১২) নামে এক শিশু নিহত হয়।

১ নভেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শান্তিনগরে মালবাহী ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার ১ যাত্রী নিহত ও ৩ যাত্রী আহত হন। ৩ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বিরাসার এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাক্টরের মুখোমুখি সংঘর্ষে জালু মিয়া (২৮) নামে একজন নিহত হন।

৮ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় মো. কামাল হোসেন সরকার (২৬) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। ১৫ নভেম্বর দুপুর ২টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বেতবাড়িয়ায় যাত্রীবাহী বাসচাপায় অজ্ঞাত (১৪) এক শিশুর মৃত্যু হয়।

৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা সিএনবি পাড়ায় ধান বোঝাই ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে সুরাইয়া বেগম (৩৩) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ নিহত হন। ৯ ডিসেম্বর দুপুরে বিজয়নগরে পিকআপ ভ্যানের চাপায় মো. সাইফুল ইসলাম (৩০) নামে পুলিশের এক সোর্স নিহত হন।

১০ ডিসেম্বর সরাইল উপজেলার শাহ্বাজপুর পোস্ট অফিস পাড়ায় ট্রাক্টরচাপায় মো. তোফায়েল মিয়া (০৫) নামে এক শিশু নিহত হয়। ১৭ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের গোকর্ণ রোডে ট্রাকচাপায় তাহমিনা আক্তার রুমি (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়। সর্বশেষ গত ১৯ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার রামপুরে যাত্রীবাহী বাস ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে অজ্ঞাত (৩৫) এক ব্যক্তি নিহত হন।

এসব দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা দায়ী করছেন গাড়ি চালকদের অদক্ষতা আর যাত্রী/পথচারীদের সচেতনার অভাবকেই। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় ঘাতক চালকদের কোনো বিচার না হওয়ায় মহাসড়কগুলোতে ক্রমেই মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে বলেও মনে করছেন তারা।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি পীযূষ কান্তি আচার্য জাগো নিউজকে বলেন, বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই চালকদের অদক্ষতার কারণে হয়ে থাকে। তাই চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার কমাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি ট্রমা সেন্টার স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।

এসএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।