সিফাত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন


প্রকাশিত: ১২:৩১ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাত হত্যা মামলায় ত্রুটিপূর্ণ তদন্তের অভিযোগে রাজশাহী সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা এনামুল হককে শোকজ করেছে পুলিশ হেড কোয়ার্টার। তার পরিবর্তে মামলার তদন্তভার দেয়া হয়েছে নওগাঁর সিআইডি এএসপি আহমেদ আলীকে।

রাজশাহী বিশেষ পুলিশ সুপার (সিআইডি) শাহরিয়ার রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, মামলার বাদীর অনুমতি না নিয়ে আসামিপক্ষের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে আদালতে মরদেহের তৃতীয় ময়নাতদন্তের আবেদন করেন তিনি। কিন্তু আদালত তার আবেদন খারিজ করে দেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি পুলিশ হেড কোয়ার্টার জানতে পারলে সিআইডি কর্মকর্তা এনামুলকে কার অনুমতি নিয়ে তৃতীয় ময়নাতদন্তের আবেদন করা হয়েছে জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয়া হয়। কারণ দর্শনোর নোটিশ সন্তোষজনক না হলে সিআইডি কর্মকর্তা এনামুল হক চাকরিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।

সিআইডি কর্মকর্তা এনামুল হক মামলার তদন্তভার গ্রহণ করার পর থেকে নানা বিতর্কের জন্ম দেন। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলার প্রধান আসামি স্বামী আসিফ ওরফে পিসলিকে রিমান্ডে নেয়ার জন্য আদালত পাড়া থেকে মোটরসাইকেলের পিছনে বসিয়ে সিআইডি অফিসে নেন তদন্ত কর্মকর্তা এনামুল হক। তিন দিনের রিমান্ডের আসামিকে মাত্র একদিন রিমান্ডে নিয়ে তিনি আবারো বিতর্কের জন্ম দেন।

আসামিপক্ষের যোগসাজসের প্রমাণ তিনি একের পর এক দিয়েই চলেছেন বলে অভিযোগ করেন সিফাতের পরিবার। সর্বশেষ সিফাতের পরিবারকে অবগত না করে তৃতীয় দফা ময়নাতদন্তের জন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন এনামুল। গত ১৯ নভেম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোকশেদা আসগর সিআইডি কর্মকর্তার এ আবেদন খারিজ করে দেন।

বাদিপক্ষের আইনজীবী দিল সিতারা চুনি জানান, ময়নাতদন্তের আবেদন করবেন বাদী পক্ষ। অথচ তদন্তকারী কর্মকর্তা বাদীপক্ষের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে আসামিপক্ষের সঙ্গে যোগসাজসে মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যে অসৎ উদ্দেশ্যে তিনি এ আবেদন করেন। আসামিপক্ষ মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যে প্রথম থেকেই একের পর এক সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি আরো জানান, আসামিরা সিফাতকে হত্যা করে পুলিশ না ডেকেই নিজেরাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ময়নাতদন্তে থাকা চিকিৎসককে প্রভাবিত করে মরদেহের গায়ে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও আত্মহত্যার উল্লেখ করে সেই দিনই রিপোর্ট তৈরি করে দেন ময়নাতদন্তের চিকিৎসক।

পরে বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে সিফাত আত্মহত্যা করেছে-এমন কোনো আলামত পায়নি চিকিৎসকরা। তাকে হত্যা করা হয়েছে- এমন তথ্য উঠে আসে।

তিনি আরো জানান, মামলার প্রধান আসামি পিসলী হাজতে থাকলেও তাকে প্রথম থেকেই জেলখানার হাসপাতালে রাখা হয়েছে। আসামিরা জেল কর্তৃপক্ষের হাত করে হাসপাতালে রাখার অবৈধ ব্যবস্থা করেছেন।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার (সিআইডি) শাহরিয়ার রহমান জানান, তদন্তে গাফেলতি এবং ক্রটিপূর্ণ তদন্ত করায় এনামুল হক শোকজ করা হয়েছে। তিন দিন আগে তাকে রাজশাহী থেকে পঞ্চগড়ে বদলি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নওগাঁর সিআইডি আহমেদ আলীর কাছে তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

উল্লেখ্য, গত ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় অ্যাড. মোহাম্মদ হোসেন রমজানের বাড়িতে রহস্যজনক মৃত্যু হয় গৃহবধূ রাবি গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক ছাত্রী ওয়াহিদা সিফাতের।

শাহরিয়ার অনতু/এআরএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।