বিশিষ্টজনদের চোখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের চার দশক
আজ মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। হিসাবে তার বয়স ৭৪ বছর। পঁচাত্তরে একদল বিপথগামী সৈন্যের হাতে তার পরিবারের সবাই নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। সেসময় বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। এরপর দীর্ঘদিন বিদেশে নির্বাসিত থাকার পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে দলের দায়িত্ব নেন তিনি।
সেই থেকে টানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা। নেতৃত্বের হিসাবে সেটা চার দশক। এই স্বল্প সময়ে আন্তর্জাতিক ২৬টি পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। সম্মানিত হয়েছেন ক্রাউন জুয়েল বা মুকুট মণি, মাদার অব হিউম্যানিটি, কওমী জননী, গণতন্ত্রের মানসকন্যা বা দেশরত্নসহ নানা উপাধিতে। পেয়েছেন অগণিত নেতাকর্মীর অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একক দৃষ্টান্ত; যাকে জীবন দিয়ে সুরক্ষা দিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সময়ের প্রধানমন্ত্রী ও এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের চার দশক কেমন ছিল? এ বিষয়ে প্রশ্ন ছিল বিশিষ্টজনদের কাছে। জবাবে তারা বলেছেন, পিতার আদর্শ ও দর্শন অনুসরণ করে সোনার বাংলা গড়ার যাত্রায় অগ্রগামী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনা; পাশাপাশি রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে রাষ্ট্রের মর্যাদা ও উন্নয়ন; এ দুটি ধারণ করে তিনি এগিয়ে চলেছেন। এটি খুবই ইতিবাচক। বিশিষ্টজনরা এ যাত্রায় তার সফলতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্ব নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘শেখ হাসিনা গত চার দশকে তার বাবা ও আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং দর্শন মেনে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্বপালন করেছেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপালন করে চলেছেন। সবক্ষেত্রেই আমরা দেখেছি, তার মূল চালিকাশক্তি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন। আজ স্বাধীন বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত তিনি। সেখানেও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের বিষয়টিই মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।’
বাবা-মা ও পরিবারের সঙ্গে শেখ হাসিনা
তিনি বলেন, ‘তার চার দশকের নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। যে কারণে আজ জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) তাকে এসডিজি অগ্রযাত্রা পুরস্কার দিয়েছে। এটি একটি বিরল সম্মান। এখানেই বাংলাদেশের সার্বিক যে অগ্রগতি হয়েছে—গণতন্ত্র, সমাজব্যবস্থা, শিক্ষা-সংস্কৃতি; সবক্ষেত্রেই এটি একটি বৈশ্বিক স্বীকৃতি। এর আগেও আমরা দেখেছি, শেখ হাসিনাকে এবং বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।’
ঢাবির সাবেক এই উপাচার্য আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘তার (প্রধানমন্ত্রী) এই জন্মদিনে তিনি নতুনভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে আমাদের নেতৃত্ব দেবেন। আমি তার সুস্থ ও সফল জীবন কামনা করি। দীর্ঘদিন তিনি বাংলাদেশের মানুষকে নেতৃত্ব দিন, এ আশা ব্যক্ত করি।’
শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা এখন যেই বাংলাদেশ দেখছি, এটা দুই দশক আগেও কল্পনা করিনি। সবাই উন্নয়নের বিষয়টা গুরুত্ব দেন। উন্নয়ন যে হয়েছে সেটা সমালোচকরাও স্বীকার করেন এবং এটি আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। সেই উন্নয়নের ভাগটা একেবারেই সাধারণের কাছে কতটুকু পৌঁছেছে, সেটা গবেষণার বিষয়। তবে আমরা মনে করি, বৈষম্যটা বেড়েছে। হয়তো পুঁজিবাদের এরকম উত্থানে বৈষম্য বাড়ে। এখন সরকারের প্রধান চেষ্টা হবে বৈষম্য কমানো।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের যে হুমকি ছিল। জঙ্গিবাদ, করোনা, হেফাজত ইত্যাদি। এসব তিনি (শেখ হাসিনা) কোনো না কোনোভাবে মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। রোহিঙ্গাদেরও এখন পর্যন্ত আমরা (বাংলাদেশ) রাখতে পারছি। ছোট একটা দেশ। জনসংখ্যা বিশাল। তারপরও মানুষ কমপক্ষে দু’বেলা খেতে পারছে। চলাফেরা করতে পারছে। আমি মনে করি, এটা একটা বিশাল ব্যাপার।’
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে দলের নেত্বত্ব নেন শেখ হাসিনা
মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘এখন কাজ হবে করোনা নিয়ন্ত্রণে আনা ও করোনার ক্ষয়ক্ষতি সামলে ওঠা। বৈষম্য হ্রাস করা। শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে জিডিপি বাড়ানো। এই জিডিপি হ্রাস পেয়েছে।’ উন্নয়নের পাশাপাশি এটাতেও জোর দেওয়া বাঞ্ছনীয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে এনেছেন। গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে এনেছেন। পাশাপাশি একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে রাষ্ট্রের মর্যাদা ও উন্নয়ন; এ দুটি সামনে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। এটিকে আমি খুবই ইতিবাচকভাবে দেখি।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে বাংলাদেশের উল্টোযাত্রা শুরু হয়েছিল; পাকিস্তানের পথে বা স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিদের দর্শনের দিকে। ১৯৮১ সালে যখন তিনি ফিরে আসেন তার আগমনেই বাংলাদেশ সঠিক পথের দিশা পায়। তখনই বাংলাদেশকে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনেন। এটি ছিল তার প্রথম অর্জন। দ্বিতীয় অর্জন হলো—বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা বদল। কারণ, পঁচাত্তরের পর দীর্ঘদিন সামরিক শাসন ছিল। বেসরকারি লেবাসে বা অন্য বেশে সামরিক শাসন। তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার কাজটি করেন শেখ হাসিনা।’
১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা
‘এরপর সরকারে থাকাকালীন অর্জন হলো—আমাদের মতো দেশে সীমিত সম্পদ, বিশাল চাহিদা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় নানা চক্রান্ত তো আছে। এই দুটি ক্ষেত্রে তিনি খুব ভারসাম্যমূলকভাবে এগিয়ে চলেছেন। সীমিত সম্পদের সমন্বয় করে দেশকে অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নের ধারায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। সম্পদ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের জায়গায় নিয়ে গেছেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন দারুণভাবে। এটি অসামান্য অর্জন’ মনে করেন বুলবুল।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জরিপ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ অন্য রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় ভালো ছিল। কোভিডে দেশের মানুষকে লকডাউনে যেতে হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি কিন্তু লকডাউনে ছিলেন না। তিনি গণভবনে বসে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এটি রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার বড় অর্জন। আরও কিছু অর্জন রয়েছে—যেমন পদ্মা সেতু; এটি কেবল একটি সেতু নয়। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠী বাংলাদেশকে শতভাগ দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছিল। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। সেখানে দুর্নীতি হয়নি প্রমাণ করেছি। খরচ ও সময় বাড়লেও আমরা নিজ উদ্যোগে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান করেছি। মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেল দৃশ্যমান। এখানেও তার (শেখ হাসিনা) একটা বড় সফলতা যে, উন্নতির সূচকে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া।’
বিএফইউজের সাবেক এই নেতা বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী বড় দুটি দেশ ভারত ও চীন। ভারত ও চীনের মধ্যে আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। তার মধ্যে দুটি দেশকেই বন্ধু ও উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে পাশে রেখে তিনি (শেখ হাসিনা) ভারসাম্যমূলক কূটনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এসডিজিতেও আমাদের ঈর্ষান্বিত অর্জন আছে এবং আমরা তার (শেখ হাসিনা) নেতৃত্বে রোহিঙ্গা সমস্যার মতো বড় সংকট মানবিকভাবে মোকাবিলা করছি।’
১৯৮১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সারথি ছাত্রলীগ সভাপতি থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিষয়ে বলেন, ‘দেশের রাজনীতিতে পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জীবন যে রাজনীতিকের, তার নাম শেখ হাসিনা। বারবার ষড়যন্ত্রের রাজনীতির শিকার তিনি। তার জীবনের ওপর বারবার আঘাত করা হয়েছিল। অন্তত ২০ বার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে তাকে। এখনো ষড়যন্ত্রের বুলেট তার পিছু ছাড়েনি। কিন্তু শেখ হাসিনা ভয়কে জয় করেছেন। পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো ভয়কে জয় করে স্মিতহাস্যে সব ষড়যন্ত্র মাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, অকুতোভয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।’
১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মধুমতি নদীবিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার নিভৃত পল্লীতে শেখ হাসিনার জন্ম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার প্রথম সন্তান তিনি। শেখ হাসিনা গ্রামবাংলার ধুলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সঙ্গেই বেড়ে উঠেছেন।
টুঙ্গিপাড়ার পাঠশালা থেকে শিক্ষাজীবনের শুরু, এরপর টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়, আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়, বকশীবাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ শেষ করেন। কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভানেত্রীও (ভিপি) ছিলেন তিনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনা বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তাদের দুই সন্তান।
চারবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশ সরকার চালাচ্ছেন শেখ হাসিনা
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কতিপয় বিপথগামী সৈন্যের হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সবাই। পড়াশোনার জন্য বিদেশে অবস্থানের কারণে কেবল বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। সেই থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার তিনি সরকার গঠন করেন। মাঝে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে গেলেও ২০০৯ সাল থেকে টানা বাংলাদেশ সরকার চালাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তার গণমুখী কার্যক্রমের কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বরাবরই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক প্যালেসে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। গতিশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ।
এসইউজে/এআরএ/এইচএ/জিকেএস