৪৪ বছর পর কলঙ্কমুক্ত ফরিদপুরবাসী


প্রকাশিত: ০৪:১৩ এএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫

ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণের পরেও মুক্তির স্বাদ উপভোগ করতে পারেনি ফরিদপুরবাসী। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর ফরিদপুরে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণের পরে শত্রুমুক্ত হয় ফরিদপুর জেলা। মুক্তিযোদ্ধাদের রাইফেলের ফাঁকা গুলি ফুটিয়ে আনন্দ-উল্লাস করে সেদিন মুক্তিযোদ্ধাসহ আপামর জনগণ।

স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী কাদের মোল্লা ও মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেল জেলাবাসী।

একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতের পর দেশের সমস্ত জেলার মতো ফরিদপুরেও শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাস যুদ্ধের পর পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের সবগুলো জেলা শত্রুমুক্ত হলেও ফরিদপুর মুক্ত হয় ১৭ ডিসেম্বর। পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগী বিহারিরা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত  তাদের পরাজয় স্বীকার না করে বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ চালিয়ে যায়।

অবশেষে মুক্তিবাহিনীরা ১৭ ডিসেম্বর সকালে ফরিদপুরে অবস্থানরত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর যশোর ক্যান্টনমেন্টের রিজিওনাল হেড কোয়ার্টারের প্রধান ব্রিগ্রেডিয়ার মঞ্জুর জাহানজের আরবারের কাছে আত্মসর্পণের জন্য বার্তা পাঠান। কিন্তু তিনি ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করবেন বলে তার পক্ষ থেকে জানানো হলে ১৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় চার্লি সেক্টরের অধীনে ঝিনাইদহ, মাগুরা, ফরিদপুর অঞ্চলের মিত্র বাহিনীর অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার ব্রজেন্দ্রনাথ ফরিদপুরে আসেন। স্থানীয় ময়েজ মঞ্জিলে পাকিস্তানী বাহিনীর কর্মকর্তারা বেলা ১১টায় সমবেত হন। এসময় পাকিস্তানী ব্রিগেডিয়ার ভারতীয় ব্রিগেডিয়ারের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। এরপর পাকিস্তানী সেনারা একে একে অস্ত্রসমর্পণ করে। পরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা সার্কিট হাউসে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বিজয়ের উল্লাস করেন।

মুক্তিযোদ্ধা পি.কে সরকার জাগো নিউজকে বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা আজ অনেক কিছু থেকে মুক্ত হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের স্বাদ পেয়েছিলাম একাত্তরের ১৭ ডিসেম্বর। আর ৪৪ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের মধ্য দিয়ে এবার কলঙ্ক মুক্ত হলাম। ফরিদপুরের কুখ্যাত রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর প্রধান এবং জামায়াত ইসলামীর সেক্রেটারি জেনালের আলী আহসান মোহম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে ২০১৫ সালের বিজয়ের মাস ইতিহাসের আরো একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে বলেও তিনি বিশ্বাস করি।

জেলার নারী নেত্রী শিপ্রা গোষ্মামী জাগো নিউজকে জানান, ফরিদপুরের এই মাটিতে জন্ম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। আবার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে অভিযুক্ত প্রথম সারির কয়েকজনের বাড়ি এই জেলায় হওয়ায় জেলাবাসী আজ লজ্জিত ও কলঙ্কিত। আর তাই কাদের মোল্লা ও মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এখন বাকি আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার ও খোকন রাজাকারকে ধরে এনে রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে আমরা সম্পূর্ণ মুক্ত হতে চাই।

ফরিদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল ফয়েজ শাহ নেওয়াজ জাগো নিউজকে জানান, আমরা একাত্তরে দেশ স্বাধীনের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। দেশ স্বাধীন হয়েছিল কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে কেউ খেয়াল রাখেনি। একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সম্পদ ও জাতির গর্ব। কিন্তু তাদের ভাগ্য উন্নয়নের কথা কোনো সরকার ততটা গুরুত্ব দেয়নি। দেশ স্বাধীনের পরেও রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সুযোগ করে দিয়েছে অনেক সরকার।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা যায়, জেলায় সর্বমোট ভাতা ভোগী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৩ হাজার ৮শ` ৯০ জন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১০৭ জন। ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত এক জরিপে তিন হাজার ১শ` চারজন মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে আছেন। যাদের অনেকেই আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয়।

মুক্তিযোদ্ধারা চিরদিন বেঁচে থাকবে না, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে তাদের আত্মত্যাগ দেশ ও জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করুক এমন দাবি করেন ফরিদপুর জেলার মুক্তিযোদ্ধারা।
 
এস.এম. তরুন/এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।