জঙ্গি হামলার ঝুঁকিতে চীন


প্রকাশিত: ০১:৫৮ পিএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের একটি কয়লা খনিতে হামলার অভিযোগে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী নভেম্বরে অভিযান চালিয়ে অন্তত ২৮ সন্দেহভাজনকে হত্যা করেছে। এছাড়া এ ঘটনায় দেশটির উইঘুর সম্প্রদায় জড়িত বলে সন্দেহ করছে চীন।  

চীন সরকার মনে করে, জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে উইঘুরের কোনো পার্থক্য নেই। তবে মানবাধিকার কর্মীদের মতে, দমনমূলক ধর্মীয় নীতি এবং অর্থনৈতিক প্রান্তিকীকরণ জিনজিয়াং পরিস্থিতিকে আরো বিশৃঙ্খল করে তুলছে। কেননা সম্পদে সমৃদ্ধ চীনের পশ্চিমাঞ্চল জিনজিয়াং সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান আবাসস্থল। এ প্রদেশে জাতিগত বিভক্তি রয়েছে।  

china

এদিকে বেইজিংয়ের অভিযোগ, উইঘুর ইস্যুতে বিশ্ব দ্বৈত নীতি দেখাচ্ছে। কেননা অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসী হামলা হলে যেভাবে সহানুভূতি দেখানো হয় চীনের ক্ষেত্রে তা ঘটে না।

বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং সিএনএনকে জানান, অন্য দেশের সহিংসতার ঘটনা সন্ত্রাস হিসেবে দেখা হলেও চীনের ক্ষেত্রে জাতিগত এবং ধর্মীয় ইস্যুকে টেনে আনা হয়।অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনকে সমর্থন করা হলেও চীনের ক্ষেত্রে তা হয় না।চীনের এ বিষয়টিকে বহিঃর্বিশ্ব তথাকথিত জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বলে মনে করে।  

china

আকসু শহরের ওই কয়লাখনিতে ১৮ সেপ্টেম্বরের হামলার খবর প্রথম প্রচারিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত  রেডিও ফ্রি এশিয়ায়। খবরে বলা হয়, ওই কয়লাখনিতে ছুরিকাঘাতে অন্তত ৫০ জন নিহত ও আরো ৫০ জন আহত হয়। রেডিও ফ্রি এশিয়ার অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীই হান  জাতিগোষ্ঠীর।

কিন্তু হতাহতের এ ঘটনা চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় ২০ নভেম্বর। তিয়ানসিয়ান ওয়েব পোর্টালের খবরে বলা হয়, কয়লাখনিতে একদল লোকের হামলায় পাঁচ পুলিশসহ ১৬ জন নিহত ও ১৮ জন আহত হয়েছে। ওই ঘটনার ৫৬ দিন পর ১২ নভেম্বর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কয়লাখনিতে হামলাকারীদের অবস্থান শনাক্ত করে একটি গুহায় অভিযান চালায়।  গুহার ভেতরে স্টান গ্রেনেড, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করা হলে ২৮ জন নিহত হয়। এ সময় একজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করে। স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে রেডিও ফ্রি এশিয়ার খবরে বলা হয়, অভিযানে সাত নারী ও শিশুসহ ১৭ জন নিহত হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে জিনজিয়াং প্রদেশের মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

china

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৩ নভেম্বর প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর  জিনজিয়াং প্রদেশে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছে চীন।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ইয়ি রয়টার্সকে বলেন, চীন সন্ত্রাসবাদের শিকার এবং পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্টের (ইটিআইএম) বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক লড়াই আরো তীব্র করা উচিত।

চীনে সহিংসতার পেছনে ইটিআইএম গোষ্ঠীর হাত রয়েছে বলে দাবি করে আসছে বেইজিং। টুইন টাওয়ারে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট  এ সংগঠনটিকে কালো তালিকাভূক্ত করলেও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা ইটিআইএমকে আল কায়েদা কিংবা আইএসের আদলে দেখতে নারাজ।

তাদের মতে, সুসংগঠিত জঙ্গিগোষ্ঠীর চেয়ে জিনজিয়াংয়ের আশপাশে অনেক ছোট গোত্র ও ব্যক্তিগত সহিংসতার ঘটনা বেশি ঘটছে।  এছাড়া এ অঞ্চলের সঠিক তথ্য  পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। কেননা চীনা সরকার এ প্রদেশে সাংবাদিক ও  বেসরকারি সংগঠনের কর্মীদের প্রবেশের ওপর কড়া নজরদারি রেখেছে।    

china

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের চীনের পরিচালক সোফি রিচার্ডসন বলেন, চীনের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে প্রাণহানির ঘটনায় বেইজিংয়ের কৌশল ও উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় রয়েছে। সত্যিই চীন যদি কোনো কিছু গোপন করতে না চায় তাহলে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, কূটনৈতিক এবং অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের ওই অঞ্চলে অবাধ প্রবেশের অনুমতি দেয়া উচিত। এর মাধ্যমে ওই অঞ্চলের আসল চিত্র জানা যাবে।    

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জিনজিয়াং প্রদেশে হাজারও মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই অঞ্চলটিতে বড় ধরনের হামলার আশঙ্কা করেছেন।  তবে সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে চীনের রাষ্টীয় ট্যাবলয়েড পত্রিকা দ্য গ্লোবাল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে আইএসের হয়ে সিরিয়া এবং ইরাকে ৩০০ চীনা নাগরিক যুদ্ধ করেছে। তারা চীনে ফিরলে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।  

এসআইএস/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।