শর্ত সাপেক্ষে রোজিনার জামিনকে ফরমায়েশি রায় বললেন ফখরুল
অফিসিয়াল সিক্রেটস মামলায় প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের শর্ত সাপেক্ষে জামিনের বিষয়টিকে ফরমায়েশি রায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (২৩ মে) গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভার বিষয়ে জানাতে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনির্বাচিত আওয়ামী সরকারের দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে বেআইনিভাবে পাঁচ ঘণ্টা আটক ও শারীরিক, মানসিকভাবে নির্যাতন এবং তথ্য চুরির মামলা দিয়ে গ্রেফতার এবং জামিন না দেয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভা মনে করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকতাদের অবিলম্বে বরখাস্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অতীত ঐতিহ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমবিরোধী দল। ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে সকল পত্রিকা বন্ধ করে বাক স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা হরণ করে ছিল। সেই সময়ে পত্রিকা বন্ধ হওয়ার কারণে অসংখ্য সংবাদকর্মী বেকার হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমস, আমার দেশসহ অনেকগুলো পত্রিকা, চ্যানেল ওয়ান, ইসলামিক টিভি, দিগন্ত টেলিভিশনসহ অনেক চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে। ত্রাশ ও ভীতির সন্ত্রাস তৈরি করে সত্য প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে।’
‘প্রকৃতপক্ষে, গণমাধ্যমকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান, আবদুস সালাম, কনক সারওয়ার, মুনির হায়দার, ওলিউল্লাহ নোমানসহ অনেক বরেণ্য সাংবাদিক নির্যাতীত হয়ে কারাভোগ করেছেন। দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। সম্পাদক আসাদ, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমীন গাজীসহ অনেক সাংবাদিক মিথ্যা মামলায় এখনও কারাগারে।’
তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমকে শৃঙ্খলিত করেছিল। একইভাবে মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, খুন, গুম, সাগর-রুনিসহ প্রায় ৪২ জন সাংবাদিক হত্যা এই সরকারের মুক্ত সাংবাদিকতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট চরিত্র উন্মোচিত করেছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেই এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে বলে মনে করা হয়। সরকারের তথ্যমন্ত্রী গোয়েবলসীয় কায়দায় আবারও মিথ্যাচার করছে এবং চিরাচরিতভাবে কল্পিত ষড়যন্ত্রের কাহিনী প্রচার ও হুমকি প্রদান অব্যাহত রেখেছে।’
ফখরুল বলেন, ‘সভা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ সকল পত্রিকা বন্ধ করে বাকস্বাধীনতা হরণ করেছিল। অন্যদিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সকল পত্রিকা চালু করে কথা বলার স্বাধীনতা ও লেখার স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করেছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা আরও বিকশিত হয়েছিল। বিবিসি, সিএনএনসহ আন্তর্জাতিক চ্যানেলগুলো অনুমোদন পেয়েছিল।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩ এর প্রয়োগ, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন মুক্ত সংবাদিকতাকে ধ্বংস করছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সংকুচিত করেছে। সভায় অবিলম্বে সকল প্রকার কালো আইন বাতিলের দাবি জানানো হয় এবং আসাদ, রুহুল আমিন গাজী ও রোজিনা ইসলামসহ সকল আটক সাংবাদিকদের মুক্তির দাবি ও মামলা প্রত্যাহার দাবি জানানো হয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকল বিভক্তি ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য সাংবাদিকদের আহ্বান জানানো হয়।’
কেএইচ/ইএ/জেআইএম