২২ বছর পর খুলতে যাচ্ছে কৃষক দলের জট
দীর্ঘ ২২ বছর পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের পূর্ণাঙ্গ নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হতে যাচ্ছে। আর এর মাধ্যমেই সংগঠনটি সৃষ্ট জটিলতার অবসান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল নেতারা।
দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির অন্যতম অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দল। দীর্ঘদিন পর গত মার্চে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সম্মেলন হলেও কমিটি গঠন হয়নি এখনো। সম্মেলনে বিশৃঙ্খলাকে কেন্দ্র করে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছেন না। জাতীয় সম্মেলনে এক শীর্ষ নেতার ‘বিতর্কিত’ কর্মকাণ্ডে এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হযেছে বলে জানা যায়।
বহিরাগতদের দিয়ে শোডাউন, পক্ষপাতিত্ব, মারামারি ও কাউন্সিল করা নিয়ে অনিয়মসহ নানা অভিযোগ ওঠে। নতুন করে কোন্দল ও বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় সংগঠনটির নেতৃত্ব বাছাই নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিএনপি।
কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জটিলতা প্রকট আকার ধারণ করায় জাতীয়তাবাদী কৃষক দল এখন অনেকটাই স্থবির। দীর্ঘ ২২ বছর পরে গত ১২ মার্চ অনুষ্ঠিত সংগঠনটির সম্মেলনের প্রথম পর্বেই কমিটি ভেঙে দেয়া, কাঙ্ক্ষিত যোগ্য নেতা না পাওয়াকে কেন্দ্র করে এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর সমাধানও করতে পারছে না বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এ কারণে সম্মেলনের দেড় মাসের বেশি সময় পার হলেও কৃষক দলের কমিটি এখনো ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি।
সম্মেলনের দিন দ্বিতীয় অধিবেশনে গুলশান কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা যোগ দিতে গেলে কার্যালয়ের গেটে থাকা লোকজন তাদের বাধা দেন। তারা জানান, তাদের কেউ কেন্দ্রীয় কমিটির কাউন্সিলর নন; তাই ভেতরে ঢুকতে দেয়া হবে না। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা কাউন্সিলর হবেন না এটা তো আজগুবি ব্যাপার। এ নিয়ে একপর্যায়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে বিএনপি মহাসচিব বিষয়টি সুরাহা করবেন এমন আশ্বাস দেয়া হয় এবং তাদের বাইরেই অপেক্ষা করতে বলা হয়। কিন্তু সুরাহা না হওয়ায় একপর্যায়ে সারাদেশ থেকে আসা নেতারা অনেকে যে যার মতো চলে যান।
দলের একটি সূত্র জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের নাম ভাঙিয়ে সংগঠনের সদস্য সচিব (সদ্য বিলুপ্ত কমিটি) হাসান জাফির তুহিন মূলত প্রতারণা করেছেন। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে তিনি পাবনা থেকে বাস বোঝাই করে সম্মেলনে লোক নিয়ে আসেন।
কৃষক দলের একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, সম্মেলনে সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের সিদ্ধান্ত ছিল- অনুষ্ঠানে শুধু খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে স্লোগান হবে। কিন্তু সংগঠনের সদস্য সচিব তুহিন নিজ এলাকা পাবনা থেকে চারটি বাসে নেতাকর্মী সম্মেলনস্থলে নিয়ে এসে তার নামে স্লোগান দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এতে দলের অন্য নেতারা বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হন।
দলের একটি সূত্র জানায়, এতদিনেও কমিটি না হওয়ার পেছেনে বিএনপির প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার ভূমিকাও রহস্যজনক। এই নেতারা নিজেদের মতো করে কমিটি ভাগাভাগি করে নিতে চেয়েছিলেন বলেই এই ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপরসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানকে কৃষক দলের দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন। তবে জানা যায় মো. শাহজাহান এখন আর কৃষক দলে রাজি নন। সম্মেলনের পর ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু তিনিও দলের দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। ফলে কৃষক দলের কমিটি গঠন নিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয।
তবে আরেকটি সূত্রের দাবি, গত দুই দশক ধরে যারা কৃষকদলের অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছিলেন তাদের কারণেই কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। আগে কৃষক দলের কর্মসূচিতে হাতেগোনা কয়েকজন লোক থাকতেন। তাদের নিয়ে নামমাত্র নিজস্ব কর্মসূচি এবং বিএনপির কর্মসূচিতে গড় হাজিরা দেয়া হতো। সর্বশেষ কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর সংগঠনের নেতাকর্মীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে এবং কর্মসূচিতে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছেন। এটা অনেকের সহ্য হচ্ছে না তাই তারা চক্রান্ত করছেন এবং দায়িত্বশীল নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কমিটি নিয়ে নতুন নতুন চিন্তা ভাবনা চলছে। কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু ও সদস্য সচিব তুহীনকে রেখে বা উভয়কেই বাদ দিয়ে কমিটি করার কথা ভাবা হচ্ছে। দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকরা কৃষক দলকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর চিন্তা করছেন।
তবে কৃষক দলের সৃষ্ট জটিলতার জন্য যাকে দায়ী করে ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন জাগো নিউজের কাছে তার বিরুদ্দে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট তথ্য গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছে। মূলত কৃষক দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতেই এসব করা হয়েছে।’
কবে নাগাদ কৃষক দলের নতুন কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হবে জানতে চাইলে হাসান জাফির তুহিন বলেন, ‘এই মুহূর্তে গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে গোটা বাংলাদেশের মানুষ ভাবছেন। করোনা মহামারির কারণে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া গঠনতন্ত্র মোতাবেক এবং আমাদের যে কাউন্সিল হয়েছে সেই কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেয়া হয়েছে। তিনি যখনই উপযুক্ত সময় মনে করবেন তখনই আমাদের কমিটি উপহার দেবেন, আমরা অপেক্ষায় আছি।’
তবে কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘ঈদের আগে কমিটি হয়তো সম্ভব হবে না, ঈদের পরে আশা করি নতুন কমিটি আমরা পাব।’
কেএইচ/এমআরআর/এমকেএইচ