সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়েছে চাটখিলে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:৫২ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০১৫

বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী নোয়াখালীর চাটখিলে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও নতুন ৩০ হাজার পরিবারের মধ্যে বিদ্যুৎসংযোগ প্রদানের লক্ষে প্রায় সাড়ে কোটি টাকা ব্যয়ে দীর্ঘ লাইন ও ৩৩/১০ এমভিএ ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি নতুন উপকেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন পর নিরবিচ্ছিন্ন ও কাঙ্খিত বিদ্যুৎ পেয়ে এলাকাবাসী খুশী।

নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, শ্যামল শোভার পল্লীতে, সমৃদ্ধি আসুক বিদ্যুতে এ স্লোগানে ১৯৮৬ সালে ১১টি এলাকা নিয়ে নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুত সমিতির যাত্রা শুরু হয়। এর মধ্যে ১৯৯২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি চাটখিল উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের বার্যক্রম শুরু হয়।

১৪৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে জোনাল অফিসের আওতায় ১১টি ইউনিয়নও ১টি পৌরসভা রয়েছে। স্থানীয় হালিমা দীঘির পাড়ে ১৫ এমভিএ ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি উপকেন্দ্র থেকে প্রায় ৪৯ হাজার গ্রাহকের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষকে সব সময় হিমশিম খেতে হতো। তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে প্রায়ই সময় অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়া ও হাজার হাজার পরিবারের মাঝে নতুন সংযোগ দেয়া সম্ভব হতো না।

 বছরে পর বছর বিদ্যুতের জন্য আবেদন করে সংযোগ না পেয়ে মানুষ হতাশায় ভুগছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করলে তার ছোঁয়া চাটখিলেও এসে পড়ে।

নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উদ্যোগে চাটখিলের নয়নপুর ১.৮ এমসিপি প্রকল্পের আওতায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৩/১০ এমভিএ ধারণক্ষমতা সম্পন্ন চাটখিল-২ নামে আরো একটি নতুন উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এর আগে প্রায় ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬.৬৭ কিলোমিটার বিদ্যুতের লাইন নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়।

Noakhali
এদিকে গত ১৩ নভেম্বর উক্ত উপকেন্দ্র ও প্রথম ধাপে ৫২৮ পরিবারের মধ্যে বিদ্যুৎসংযোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি। এসময় মন্ত্রী এলাকায় আরো দুটি উপ-কেন্দ্র ও ১০০ কিলোমিটার নতুন লাইন নির্মাণের ঘোষণা দেন।

সরজেমিনে নতুন বিদ্যুৎসংযোগ পাওয়া বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে দীর্ঘদিন পর বাড়িতে বিদ্যুৎ পেয়ে তাদের চোখে-মুখে আনন্দ। কথা হয় গৃহবধূ পারভীন আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, আবেদন করার প্রায় ৫ বছর পর বিদুৎসংযোগ পেয়েছেন।

বিদ্যুৎসংযোগ পাওয়ায় শিক্ষার্থীরাও খুশী। চাটখিল কলেজের শিক্ষার্থী নিলুফার ইয়াসমিন জানান, আগে হারিকেন দিয়ে লেখাপড়া করতে হতো। বেশি সময় পড়া-লেখা করা যেতো না। এখন নিজের পাশাপাশি ছোট ভাই বোনদের নিয়ে দিনে ও রাতে অনেক সময় পড়ালেখা করা যাবে।

নোয়াখোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির উদ্দিন জানান, এ সরকার কথায় নয়, কাজেই বিশ্বাসী। নির্বাচনী ওয়াদা অনুসারে এলাকায় বিদ্যুৎসংযোগ দেয়ায় তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।

নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার শংকর লাল দত্ত জাগো নিউজকে জানান, নতুন এ উপকেন্দ্র নির্মাণের ফলে চাটখিল-সোনাইমুড়ীর গ্রাহকরা এখন থেকে সরসরি ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে দিনে-রাতে ২৫ থেকে ২৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবে। যা আগে ছিলো ১৫-১৬ মেগাওয়াট ।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, শতভাগ বিদ্যুৎসংযোগ নিশ্চিত করার লক্ষে আগামী ১৬-১৭ অর্থ বছরের মধ্যে ৫০ কিলোমিটার লাইন মেরামত করাসহ আরো কিছু পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

এসময় তিনি আরো জানান, প্রতিমাসে ৩ লাখ গ্রাহকের মাঝে নতুন বিদ্যুৎসংযোগ প্রদান করা হচ্ছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সরকারের মহাপরিকল্পনা অনুসারে দুই ভাগে এ কাজ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের মধ্যে ৯০ ভাগ এবং ২০২১ সালে শতভাগ বিদ্যুৎসংযোগ দেয়া হবে। গ্রাহকরে অতিরিক্ত বিল সর্ম্পকে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ইলেকট্রোমিকানিক্যাল বা ট্রেডিশনাল মিটারের পরিবর্তে বর্তমানে প্রি-প্রেইড বা ডিজিটাল মিটার লাগানো হচ্ছে। এটি লাগানো হলে এ অভিযোগ আর থাকবে না গ্রাহকের।

এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।