সাঈদ হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক রোববার


প্রকাশিত: ০১:৪৮ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৫

সিলেটে শিশু আবু সাইদ হত্যা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ তিনজনের সাক্ষ্য নেয়ার মধ্যদিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার চাঞ্চল্যকর এই মামলায় মাত্র ছয় কার্যদিবসে ২৮ জনের সাক্ষ্য নেয়ার পর আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করে।

এরপর বৃহস্পতিবার বিকেলে এ মামলায় ফৌজধারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারা মোতাবেক আসামিদের দোষ স্বীকারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এ সময় আসামিরা নিজেদের নিদোষ দাবি করেন।

আগামী রোববার আলোচিত এ মামলার যুক্তিতর্কের জন্য তারিখ ধার্য রেখেছেন সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আব্দুর রশিদ। মঙ্গলবার রায় ঘোষণা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাড. মো. আব্দুল মালেক।

বৃহস্পতিবার সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সর্বশেষ সাক্ষী দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) মো. মোশারফ হোসেন, কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তারেক মো. মাসুদ ও সাঈদের মরদেহ বহনকারী কোতোয়ালী থানার কনস্টেবল দেলোয়ার হোসেন।

সাক্ষগ্রহণ উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৯টায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেদিয়ে পুলিশ এ মামলায় অভিযুক্ত এসএমপির এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ কনস্টেবল (বরখাস্ত) এবাদুর রহমান পুতুল, সিলেট জেলা ওলামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম রাকিব, প্রচার সম্পাদক মুহিবুর রহমান ওরফে মাহি হোসেন মাসুম ও র্যাব পুলিশের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

তাদের উপস্থিতিতে তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও আসামি পরীক্ষার পর বিকেলে পুলিশ কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাড. মো. আব্দুল মালেক জাগো নিউজকে জানান, আলোচিত এই মামলায় ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্য নেয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করেন আদালত।

তিনি আরো জানান, বিকেল ফৌজধারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারা মতে আসামি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী রোববার মামলার যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর অাগামী মঙ্গলবার মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য হওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে।

এর আগে ১৯ নভেম্বর মামলার বাদী সাঈদের পিতা মতিন মিয়া, মামা আশরাফুজ্জামান, প্রতিবেশি ফিরোজ আহমদ, ওলিউর রহমান ও শফিকুল ইসলামের সাক্ষ্য দেয়ার মধ্যদিয়ে সাক্ষগ্রহণ শুরু হয়।

২২ নভেম্বর দ্বিতীয় দিনে সাক্ষ্য দেন, সাঈদের মা সালেহা বেগম, সাঈদের আরেক মামা জয়নাল আবেদীন, তার শ্যালক সৈয়দ হিলাল, এয়ারপোর্ট থানার ওসি গৌছুল হোসেন, এসআই সমরাজ মিয়া ও কনস্টেবল কাশেম।

তৃতীয় দিনে ২৩ নভেম্বর সাঈদদের সাত প্রতিবেশি সাক্ষ্য দেন। এরা হলেন, মো. সেলিম আহমদ, মো. আজির উদ্দিন, আবুল হোসেন, আব্দুস কুদ্দুস, মোক্তাদির আহমদ, দেলোয়ার হোসেন ও আব্দুল আহাদ তারেক।

এর আগে গত ২৪ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন, সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী-১) মো. সাহেদুল করিম, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট (আমলী-২) মোচ্ছা. ফারহানা ইয়াসমিন, সিলেট সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক শামিমুর রহমান পীর ও আসামি এবাদুর রহমান পুতুলের সঠিক নাম-ঠিকানা যাচাইকারী এএসআই রতন লাল দেব।

২৩ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন, মো. সেলিম আহমদ, মো. আজির উদ্দিন, আবুল হোসেন, আব্দুস কুদ্দুস, মোক্তাদির আহমদ, দেলোয়ার হোসেন ও আব্দুল আহাদ তারেক। ২২ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন, সাঈদের মা সালেহা বেগম, সাঈদের আরেক মামা জয়নাল আবেদীন, তার শ্যালক সৈয়দ হিলাল, এয়ারপোর্ট থানার ওসি গৌছুল হোসেন, এসআই সমরাজ মিয়া ও কনস্টেবল কাশেম।

১৯ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন, সাঈদের বাবা মতিন মিয়া, মামা আশরাফুজ্জামান, প্রতিবেশি ফিরোজ আহমদ, ওলিউর রহমান ও শফিকুল ইসলাম।

গত ১৭ নভেম্বর পুলিশের এক কনস্টেবলসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুর রশীদ।

এর আগে গত ২৯ অক্টোবর সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক সাহেদুল করিম চার্জশিট আমলে নিয়ে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নথিপত্র স্থানান্তর করেন।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্রটি দাখিল করেন মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) আবদুল আহাদ চৌধুরী। এর আগের দিন ২২ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মোশাররফ হোসাইন এসি প্রসিকিউশনের কাছে মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) হস্তান্তর করেন।

গত ১১ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর রায়নগর থেকে স্কুলছাত্র আবু সাঈদকে (৯) অপহরণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৩ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুলের কুমারপাড়াস্থ ঝরনারপাড় সবুজ-৩৭ বাসার ছাদের চিলেকোঠা একটি ঘর থেকে আবু সাঈদের অর্ধগলিত মরদেহ সাতটি পলিথিনের বস্তার মধ্যে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় এয়ারপোর্ট থানার কনস্টেবল এবাদুর, পুলিশের সোর্স গেদা ও ওলামা লীগ নেতা রাকিবকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর এই তিনজনই ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

নিহত আবু সাঈদ নগরের রায়নগর শাহমীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ও রায়নগর দর্জিবন্দ বসুন্ধরা ৭৪ নম্বর বাসার আব্দুল মতিনের ছেলে। মতিনের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার খাশিলা গ্রামে।

ছামির মাহমুদ/এআরএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।