এক দশকেও সম্মেলন নেই ঢাকা মহানগর যুবলীগে
টেন্ডার দখল থেকে ক্যাসিনোকাণ্ড। গত এক যুগে এসব নিয়ে শিরোনামে ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ। বেশিরভাগ সময় নেতিবাচক এসব শিরোনামে যুবলীগকে সামনে এনেছে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর শাখা। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, খুন ও সবশেষ ক্যাসিনোকাণ্ডে অগ্রগামী এ শাখার সম্মেলন ও নেতৃত্ব নিয়েও রয়েছে নানান বিতর্ক।
দীর্ঘ একদশক হতে চললেও যুবলীগের এ শাখায় কোনো আভাস নেই সম্মেলনের। ফলে নতুন নেতৃত্বও আসছে না। অপরাধী ও বিতর্কিতদের বাদ দিলেও তাদের অনুসারীদের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়ায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে যুবলীগের ঢাকা মহানগরের দুই শাখা।
ভারপ্রাপ্ত এসব নেতৃত্ব রুটিন ওয়ার্কের বাইরে কোনো কাজ করে না। সে কারণে সংগঠনের গতিশীলতাও নেই। সম্প্রতি ঢাকায় প্রতিকূল পরিবেশ হলেও গুরুত্বপূর্ণ এই সংগঠনের অংশগ্রহণ ছিল নামমাত্র।
যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস হয় ২০১২ সালের ১৪ জুলাই। তারও আগে ৩ জুলাই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও ৮ জুলাই ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সম্মেলন হয়। এতে মহানগর উত্তরে মাইনুল হোসেন খান নিখিল সভাপতি ও ইসমাঈল হোসেন সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর দক্ষিণে ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট সভাপতি ও ওয়াহিদুল আলম আরিফ সাধারণ সম্পাদক হন।
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই টেন্ডার নিয়ে দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যাকাণ্ডের পর গা ঢাকা দেন দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম আরিফ। তার পরিবর্তে যুগ্ম-সম্পাদক এইচএম রেজাউল করিমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা রেজাউলকেও টিকাটুলি এলাকার রাজধানী সুপার মার্কেটে চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০১৫ সালে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এরপর ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার হন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। ২২ অক্টোবর সেখানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় সহ-সভাপতি মাইনুদ্দিন রানাকে।
এরপর নানান নাটকীয়তা শেষে ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস হয়। সেখানে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশকে চেয়ারম্যান ও ঢাকা উত্তর শাখার সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সেদিনই উত্তরে সহ-সভাপতি জাকির হোসেন বাবুলকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়।
প্রায় এক দশক আগের সম্মেলনে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের দায়িত্ব পান মাইনুল হোসেন খান নিখিল ও ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট; এর মধ্যে প্রথমজন এখন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, দ্বিতীয়জন ক্যাসিনোকাণ্ডে কারাগারে
যুবলীগ নেতারা বলছেন, কেন্দ্রীয় কংগ্রেসের (সম্মেলন) আগে মহানগর সম্মেলন হয়। কিন্তু ক্যাসিনোকাণ্ডসহ নানান বিতর্কে এবার সেটি হয়নি। এ কারণে এখন পর্যন্ত যুবলীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি শাখা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্ব দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে তারা শুধু রুটিন ওয়ার্ক করছেন। এর বাইরে কমিটি গঠন, ভাঙা বা অন্য কোনো সাংগঠনিক কাজে তারা নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বারবার নেতাদের প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক ভঙ্গুরতা সত্ত্বেও গেল প্রায় এক দশকে সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়নি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগ। গতিশীল ও পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব তৈরিতেও নেই শাখা দুটির মনোযোগ। পুরনো নেতাদের অনুসারীদের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে দায়সারাভাবে চলছে সংগঠন। হাতে গোনা কয়েকজন নেতা সম্মেলনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করলেও প্রকাশ্যে এ নিয়ে তারাও কথা বলেন না। দায়িত্বে থাকা নেতারাও সম্মেলনে উদ্যোগী নন। সবাই ওপরের নির্দেশনা পেলে কাজ করার পক্ষে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সব সংগঠনের মতো আমাদেরও কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে মহানগর সম্মেলন হয়। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম হয়েছে। সাবেক কমিটি নিয়ে বিতর্ক উঠেছে বলে কমিটি হয়নি। তবে যে কোনো মুহূর্তে হয়ে যাবে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনুদ্দিন রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সম্মেলনের বিষয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান-সাধারণ সম্পাদক কোনো নির্দেশনা দেননি। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পেলেই আমরা সম্মেলনের আয়োজন করব।’
যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। যুবলীগের সম্মেলন তো এভাবে হওয়ার কথা ছিল না। তৎকালীন চেয়ারম্যান-সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কিছু নেতা ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকায় সব কমিটি ভেঙে দিয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করে দেয়া হয়। সে কমিটির আহ্বায়ক করা হয় আমাকে। সে সময় তো নগর যুবলীগের কমিটি করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। আমাদের দায়িত্ব ছিল শুধু কেন্দ্রীয় সম্মেলন করে দেয়া, আমরা তাই করে দিয়েছি। এখন নিশ্চয়ই নতুন কমিটি মহানগর কমিটি করবেন।’
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। (যুবলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক ও আওয়ামী লীগ সভাপতি) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি। এ কারণে সে ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে আজ হোক, কাল হোক, সম্মেলন তো করতেই হবে। করবো, ইনশাআল্লাহ।’
এসইউজে/এমএইচআর/এইচএ/এমএস