জনসংহতির আন্দোলনে সবাইকে শামিল হওয়ার আহ্বান সন্তু লারমার


প্রকাশিত: ১১:৫৮ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৫

পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী প্রথাগত নেতৃত্ব সার্কেল চিফ, হেডম্যান ও কারবারিসহ জুম্ম জনগণ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে চলমান অসহযোগ আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্রি বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা।

মঙ্গলবার রাঙ্গামাটিতে আয়োজিত মৌজা ও গ্রামপ্রধান নারী হেডম্যান-কারবারি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা এ আহ্বান জানান। আয়োজকরা জানান, তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির নারী হেডম্যান ও কারবারিদের নিয়ে এবারই প্রথমবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী হেডম্যান-কারবারি সম্মেলন।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রাঙ্গামাটি শহরের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দু’দিনব্যাপী আয়োজিত এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। আজ (বুধবার) বিকেলে দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলন শেষ হবে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দিপনায় তিন পার্বত্য জেলার মৌজাপ্রধান ১২ নারী হেডম্যানসহ প্রায় দুই শতাধিক গ্রামপ্রধান নারী কারবারি সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।

"
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথাগত নেতৃত্বে নারী সমাজকে সম্পৃক্ত করায় চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়সহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, নারীদের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ ছাড়া তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। পার্বত্য চট্টগ্রামের সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এবং শাসকগোষ্ঠীর অবহেলা, শোষণ-বঞ্চনার কারণে এ অঞ্চলের নারীসমাজ যুগযুগ ধরে চরম বৈষম্যের শিকার। এছাড়া ধর্মীয় দৃষ্টিতেও কোনো ধর্মই নারীদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এ জন্য নিজেদের অধিকার পেতে হলে নারীদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে হবে। আর সেই রাজনীতি হতে হবে সাম্যবাদী, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক।

শাসকগোষ্ঠীর তীব্র সমালোচনা করে সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যে শাসনব্যবস্থা চলছে তা উপনিবেশিক কায়দায়। পার্বত্য চুক্তির দীর্ঘ ১৮ বছর পরও এখানে সেনাশাসন অব্যাহত। এছাড়া ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধির বদৌলতে ডিসিরা উপনিবেশিক শাসনকার্য পরিচালনা করছেন। পার্বত্য চুক্তির আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ শাসনব্যবস্থার জন্য আইন প্রণীত হয়েছে কিন্তু তা আজও অকার্যকর।

সন্তু লারমা বলেন, জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার উত্তরণে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলন সফল করতে জুম্ম জনগণ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে শামিল হতে হবে।


সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সভাপতি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, এএলআরডির উপ-নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মণি, বরকল উপজেলা চেয়ারম্যান মণি চাকমা, ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ প্রকল্পের উপ-পরিচালক প্রসেনজিত চাকমা ও নারী হেডম্যান-কারবারিদের পক্ষে শান্ত্বনা চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা।

বুধবার দ্বিতীয় দিন সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সমাজের সমস্যা ও প্রথাগত নারী নেতৃত্বের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং বিকেলে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত নারী নেতৃত্বের সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা।

সুশীল প্রসাদ চাকমা/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।