জিম্বাবুয়ের সঙ্গে হোয়াইটওয়াশ অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকাও
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ যে ফেভারিট এটা অনুধাবনের জন্য প্রয়োজন পড়ে না বিশেষজ্ঞ হওয়ার। তবে ক্রিকেটে প্রত্যাশিত ফল পাওয়াটাও একটা চ্যালেঞ্জ। আর সে কারণে বছরের পর বছর ধরে ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করা দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার, ফাইনালের নাগালই পায়নি আজ অবধি। ক্রিকেটে অনিশ্চয়তা আছে বলেই ১৯৮৩ এর বিশ্বকাপ ফাইনালে ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা দল ওয়েস্টইন্ডিজকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। কিংবা ১৯৯২ বিশ্বকাপে রাউন্ড রবিন লিগে কোনো রকমে টলতে টলতে টিকে যাওয়া পাকিস্তান গৌরব অর্জন করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। ক্রিকেটে প্রত্যাশিত ফল মিলবেই এই নিশ্চয়তা দিতে পারে না কেউই। আর তাই ফেভারিট হওয়ার মর্যাদা ধরে রাখাটা খুব বড় এক চ্যালেঞ্জ। টানা তিন ম্যাচ জিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই চ্যালেঞ্জে সহজেই জিতেছে মাশরাফি মর্তুজারা। তবে এবারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজটি হোয়াইটওয়াশ এর চেয়েও বেশি কিছু। মাঠে মাশরাফিরা সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ করেছে আর অতীতের ধারাবাহিকতায় নিরাপদে -নির্বিঘ্নে সিরিজ সম্পন্ন করে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যানেজম্যান্ট।
নিরাপত্তার অজুহাত তুলে বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছে অস্ট্রেলিয়া। এটা অনেক পুরনো খবর। কিন্ত এমন অভিযোগ ওঠে কিভাবে বড় হয়ে উঠেছে এই প্রশ্নটাই। বছরের পর বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আয়োজন বিশেষত ক্রিকেট আয়োজনের সুনাম ক্রিকেটে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় পুঁজি। সেই সুনামের ওপর সরাসরি কালিমা লেপে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। একই পথে হেঁটেছে দক্ষিণ আফ্রিকাও। তাদের নারী ক্রিকেট দলকে পাঠায়নি তারা। এ যেন বাংলাদেশে ক্রিকেটের ওপর এক ধরনের ‘আন্তর্জাতিক অবরোধ’। বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের আয়োজনের সাফল্যকে এক বিবৃতি দিয়েই মাটি চাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে অস্ট্রেলিয়া। আর অন্ধভাবে তা অনুসরণ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর তাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজটি শুধু সীমাবদ্ধ থাকেনি মাঠের মধ্যেই। আয়োজনে সোনায় মোড়ানো অতীতকে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়ার বড় চ্যালেঞ্জও নিতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
আন্তর্জাতিক আসরের জন্য বাংলাদেশ অনিরাপদ এটা প্রমাণের দায় এখন অস্ট্রেলিয়ার। কেননা বাংলাদেশ নিরাপদ এটা যাচাই বাছাইয়ের ধার না ধেরে অনুসিদ্ধান্ত টেনেছে তারা। এদিকে বিশ্বকাপ বাছাই ফুটবলে অংশ নিতে বাংলাদেশ সফরে আসার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে অস্ট্রেলিয়া ফুটবল ফেডারেশন। আগামী ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে স্বাগতিক বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে সকারুরা। এখানে খেলতে আসাটা অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল দলের জন্য কতটা নিরাপদ, এটা জানতে- বুঝতে এমুহূর্তে সেদেশের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দল এখন অবস্থান করছে বাংলাদেশে। এখানকার নিরাপত্তা ব্যাবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে তারা। একই সঙ্গে ম্যাচের ভেন্যু পরিদর্শন করেও সন্তোষ প্রকাশ করেছে অসি পর্যবেক্ষক দল। তাহলে কি বলা যায়? অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দল নিরাপদ কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল নিরাপত্তা ঝুঁকিতে?
নিরাপত্তা শব্দটা যে কতটা বহুরপী সেটা বুঝার জন্য একটি তথ্যই যথেষ্ট। বাংলাদেশ সফর বাতিল করার পর অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল বলেন- ‘যত সহজে বাংলাদেশ সফর বাতিল করা সম্ভব হয়েছে একই রকম পরিস্থিতিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ বাতিল করাটা ততটা সহজ হতো না।’ নিরাপত্তাবোধ সরলরৈখিক নয়। বাস্তবতার চাপে বদলে যায় নিরাপত্তার ধারণা। যেহেতু বিশ্বকাপ ফুটবল বাছাইপর্বে নাজুক অবস্থায় অস্ট্রেলিয়া। আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে কোন নিরপেক্ষ ভেন্যুতে ম্যাচ খেলার জন্য এফসি-ফিফাকে রাজিও করাতে পারেনি, তাই অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দলকে এখানে আসতে হচ্ছে। বাস্তবতার কারণেই ভারতের বিপক্ষে সিরিজ বাতিল করার দুঃসাহস দেখাবে না অস্ট্রেলিয়া।
গত এক বছর ধরে রুপকথার মত একটা সময় পার করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলে ক্রিকেট বিশ্বের উঠতি শক্তি হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে টাইগাররা। ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবারের মত টানা পাঁচটি সিরিজে জিতেছে মাশরাফি ব্রিগেড। জিম্বাবুয়েকে দু’দফায় হোয়াইটওয়াশ করা ছাড়াও টাইগাররা একে একে শিকারে পরিণত করেছে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এর মধ্যে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবিয়েছে পাকিস্তানকে। এ বছরের গোড়ার দিকে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার কৃতিত্ব দেখিয়েছে মাশরাফিরা। র্যাংকিংয়ে সাত নম্বরে উঠে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। মনে রাখতে হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা করে নিতে পারেনি ক্রিকেটের কুলীন দল ওয়েস্টইন্ডিজ। তাদেরকে পেছনে ফেলে সেরা আটে জায়গা করে নেয়ার সুবাদে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ পাচ্ছে পাকিস্তান। বলা বাহুল্য র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান পাকিস্তানের ওপরে। সাংগঠনিক সক্ষমতা, সুনামের সঙ্গে মাঠের এই পারফরম্যান্স একটা ভিন্ন উচ্চতায় তুলে এনেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে। এমন একটি অবস্থায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের ওপর বিনা মেঘে বজ্রপাত! সফর বাতিল করলো অস্ট্রেলিয়া। স্বপ্নের বেলুনটা চুপসে গেল অনেকটাই। নতুন করে গৌরব ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে নামতে হল বাংলাদেশকে।
অস্ট্রেলিয়া সফর বাতিল করায় আনা হল জিম্বাবুয়েকে। ২০১৫ সালের ক্রিকেট ক্যালেন্ডারে এটাই বাংলাদেশের শেষ সিরিজ। জিম্বাবুয়ে এই সফরে না আসলে বছরের শেষ পাঁচ মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেলেই কাটাতে হত বাংলাদেশকে। ইনফর্ম একটা দলকে টানা পাঁচ মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে রাখার সব আয়োজনই চূড়ান্ত করে ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের মধ্য দিয়ে সেই যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। হোয়াইটওয়াশ মিশন সফল করার পথে মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরী, সাকিব আল হাসান- মুস্তাফিজুর রহমানের ৫ উইকেট প্রাপ্তি, কিংবা তামিম ইকবাল- ইমরুল কায়েসের উদ্বোধনী জুটি জমে যাওয়া, যেন দিয়ে দিল অনেক প্রশ্নের উত্তরই। মাঠের ভেতরে বাংলাদেশের জার্সি নিরাপদ রাখার জন্য নিজেদের সবটুকু জবিনীশক্তি উজাড় করে দিচ্ছেন টাইগাররা। আর নিরাপদ-নির্বিঘ্নে ক্রিকেট তথা ক্রীড়া আয়োজন করার পুরনো গৌরব বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরছে বাংলাদেশ।
এইচআর/আরআইপি