ড. মোর্শেদকে চাকরিচ্যুতি আইনের লঙ্ঘন : রিজভী
অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরিচ্যুতি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ভঙ্গ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ড. মোর্শেদকে চাকরিচ্যুতি আইনের লঙ্ঘন।
একইসঙ্গে বর্তমান সরকারকে কাপুরুষ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এই সরকার ভিন্নমতকে সহ্য করতে পারে না। তাদের দলীয় লোক অন্যায় করলেও পার পেয়ে যাচ্ছে।
শনিবার (১০ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান অ্যাপোলোকে অব্যাহতির প্রতিবাদ ও পুনর্বহালের দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিক্ষক সমন্বয় কমিটি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের মার্চে একটি জাতীয় দৈনিকে নিবন্ধ লেখেন ড. মোর্শেদ হাসান খান। প্রকাশিত নিবন্ধে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার অভিযোগ এনে গত ৯ সেপ্টেম্বর তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ‘মুজিববর্ষে তিনি সুন্দর জীবন উপহার দেবেন’। আমি বলব- প্রধানমন্ত্রী আল্লাহর দোহাই লাগে আর সুন্দর দোহাই দিয়েন না। আপনি শুধু আর্তনাদের জীবন দিয়েছেন। আজ সিলেট থেকে নোয়াখালী শুধুই নারীর আর্তচিৎকার। আল্লাহর দোহাই পদত্যাগ করুন। আপনি পদত্যাগ করলে জনগণ স্বস্তিতে থাকতে পারবে।
‘কারও দয়ায় সরকার ক্ষমতায় নেই’ ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, ঠিকই বলেছেন ওবায়দুল কাদের। কারণ তারা জনগণের দয়ায় নেই। কেননা জনগণ তো তাদের দয়া করেনি। তারা অন্য কোনো দেশের দয়ায় ক্ষমতায় আছেন। আজ সাড়ে ১২ বছরে সারাদেশে জনপদের পর জনপদে খুন, গুম, ধর্ষণ আর মানুষের আহাজারি। তারা ধর্ষণের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। মাদকের উন্নয়ন ঘটিয়েছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, মাদক তো মন্ত্রিসভা পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন- ট্রাম্প নাকি আমাদের মতো সেবা পাচ্ছেন! এটা হয় মাদকের প্রভাব নয়তো গঞ্জিকার প্রভাব। অপদার্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে তিনি বলেন, ড. মোর্শেদ একজন মেধাবী শিক্ষক। তাকে ভিন্নমতের কারণে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কারণ তিনি জিয়াউর রহমানের নামে প্রবন্ধ লিখেছেন। এ জন্যই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
রিজভী আরও বলেন, আসলে সরকার কাপুরুষ। তারা ভেবেছিল এই লেখার ঢেউ তাদের গদিকে নড়বড়ে করে দেবে। ড. মোর্শেদকে চাকরিচ্যুত করার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ভঙ্গ করেছে। যাকে বলা হয়- ‘ইউনিভার্সিটি অব ল ব্রেকিং’। অথচ সরকারদলীয় শিক্ষকরা এমফিল-পিএইচডি থিসিস জালিয়াতি করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ সংক্রান্ত খবর গণমাধ্যমে বেরিয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভিসির কাছে কোনো নৈতিক শিক্ষা পাওয়া যায় না। তিনি নৈতিকস্খলনের জন্য দায়ী। তার গলায় গামছা দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে আনা দরকার। আজ শুধু শেখ হাসিনার কৃপাভাজন হওয়ার জন্য তিনি নীতি বিসর্জন দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজকে ন্যায়সঙ্গত দাবিতে আন্দোলন করতে হবে।
রিজভী অবিলম্বে অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান অ্যাপোলোকে চাকুরিতে পুনর্বহালে দাবি জানান।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব সেলিম ভুইয়ার পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শিক্ষক সমন্বয় কমিটির মহাসচিব বেলাল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক লুৎফর রহমান, সাদা দলের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবদুল করিম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান, অধ্যাপক সোহেল রানা, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, যুবদলের সেক্রেটারি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, যুগ্ম সম্পাদক সাদরেজ্জামান, এসএম জিলানী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সেক্রেটারি ইকবাল হোসেন শ্যামল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান প্রমুখ।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কালাম সরকার, দাউদ খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক সরদার নূরুজ্জামান, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মামুন বিল্লাহ, যুগ্ম সম্পাদক শামসুল আলম রানা, মহিলা দলের মমতাজ হোসেন লিপি, মজিবর রহমান, মোর্শেদ আলম, ছাত্রদলের সাবেক নেত্রী আরিফা সুলাতানা রুমা, নাদিয়া পাঠান পাপনসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী।
কেএইচ/বিএ/এমএস