বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- বাঘা যতীনদের সংগ্রাম আমরা সম্পন্ন করেছি
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, ‘বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান দুই ধারা- মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন অহিংস অসহযোগ আন্দোলন এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের সশস্ত্র সংগ্রামের ধারার সমন্বয় করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় বিজয় অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সাফল্যের যেমন কোনো দ্বিতীয় নজির নেই; তেমনি প্রবল পরাক্রমশালী পাকিস্তানি নৃশংস বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন করাও ছিল বিশ্বের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের এক অতুলনীয় ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন- বাঘা যতীন, সূর্য সেনরা স্বাধীনতার যে সংগ্রাম আরম্ভ করেছিলেন, আমরা তা সম্পন্ন করেছি।’
বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান শহীদ বাংলাদেশের কৃতি সন্তান অগ্নিযুগের বিপ্লবী বাঘা যতীনের ১০৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৭৯-১৯১৫) বাঘা যতীন নামে খ্যাত। তার জন্ম কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া গ্রামে। ছাত্রজীবনেই তিনি অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন এবং দেশমাতৃকার মুক্তির শপথ গ্রহণ করেন। ১৯১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তিনি ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে উড়িষ্যার বালাশোরে শহীদ হন। বিপ্লবী বাঘা যতীনের জীবনের মূলমন্ত্র ছিল ‘আমরা মরব, দেশ জাগবে’। মাতৃভূমির মুক্তির জন্য তার মহান আত্মত্যাগ যুগে যুগে স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত করেছে বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষের তরুণ সমাজকে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তরুণদের এই আত্মদান অনিবার্য করেছে নৃশংস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় বিজয়ে।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের বৃটিশরা এমনকি অনেক গান্ধীবাদী ‘ঐতিহাসিক সন্ত্রাসী’ বলেছেন। অথচ তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য তরুণদের অকাতরে জীবনদানে উদ্বুদ্ধ করেছেন। বাঘা যতীনদের দেশপ্রেম ও মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করার সংগ্রামে তরুণ সমাজকে আলোকিত করার আহ্বান জানান বক্তারা।
‘বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন শাহরিয়ার কবির। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন- শহীদ বাঘা যতীনের পৌত্র ইন্দুজ্যোতি মুখোপাধ্যায় (পশ্চিমবঙ্গ), বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম, গবেষক অরিন্দম মুখোপাধ্যায় (মহাসচিব, ইনস্টিটিউট অব সোশাল অ্যান্ড কালচারাল হিস্ট্রি, ভারত), ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল এবং সংগঠনের আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শাখার নেতৃবৃন্দ।
অন্যদিকে আজ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া গ্রামে শহীদ বিপ্লবী বাঘা যতীনের জন্মভিটায় কয়া মহাবিদ্যালয়ে নির্মূল কমিটির কয়া শাখা ও বাঘা যতীন থিয়েটার যৌথভাবে শহীদ বিপ্লবী বাঘা যতীনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভার আয়োজন করেছে।
পিডি/এফআর