সরকার কি সিনহা হত্যার দায় এড়াতে পারবে, প্রশ্ন মান্নার
মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ হত্যার দায় কি সরকার এড়াতে পারবে, এমন প্রশ্ন রেখেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের উদ্যোগে খুন-গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং মেজর সিনহার হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এমন প্রশ্ন রাখেন।
মান্না বলেন, ‘সিনহা হত্যার ঘটনা কোনো বাহিনীর দায় কি-না, সেটা আমরা জানি না। সরকার কি এর দায় এড়াতে পারবে? কারা হাইকোর্টে রিট হওয়ার পরও তাকে পুরস্কৃত করল? কারা তাকে এতদিন ওইখানে ওসি রাখল? কারা তাকে ওইখানে খুনের রাজত্ব করার পারমিশন দিল? সেই মানুষগুলোর কাউকেই ছাড়া যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘এক মেজর হত্যা হয়েছে, তাই সারাদেশে এত বড় হুলুস্থুল। কিন্তু এ পর্যন্ত কতগুলো মানুষ হত্যা হয়েছে এই পশুশক্তির হাতে। আমি সবার প্রথম দাবি করব, যারা এই হত্যার জন্য দায়ী তাদের নাম প্রকাশ করা হোক। যতগুলো মানুষ এখন পর্যন্ত গুম হয়ে আছে তাদের তালিকা প্রকাশ করা হোক। কোন কোন বাহিনীর কোন কোন কর্মকর্তা এর সাথে জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের শাস্তি দেয়া হোক।’
মান্না বলেন, ‘অনেকের রক্ষীবাহিনীর কথা মনে আছে, অনেকের মনে নাই। নির্যাতনকারী বাহিনী হিসেবে প্রমাণিত হওয়ার পরে এটাকে বাতিল করা হয়েছে, রক্ষীবাহিনী এখন আর নাই। আমি পুলিশ বাহিনীকে বাতিল করতে বলব না, পুলিশ আমাদের লাগবে। কিন্তু আমরা ওই প্রদীপ দাসের পুলিশ বাহিনী মানব না। তাদেরকে যারা প্রশ্রয় দেয় সেই সরকার আমরা মানব না।’
“ওই কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের ডানে-বামে ২০৪ জন মানুষকে এক বছরে হত্যা করা হয়েছে। এই প্রদীপ মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেছে ‘আমি যাকে মনে করব দোষী তাকেই ক্রসফায়ার করব। অন্যায়ভাবে কাউকে মারলে আমাকে বলবেন’। কিন্তু একটার পর একটা মানুষ তিনি যখন হত্যা করেছেন তখন তার কাছে মনে হয়েছে, যত মানুষই আমি মারি কেউ কিছু করতে পারবে না। কিন্তু আজ এতদিন পরে উনি ধরা পড়েছেন। উনি ধরা পড়ার পর এক এক করে ওনার সকল কাহিনী বের হয়ে আসছে।”
মান্না বলেন, “এই পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে হাজারের উপরে মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই পর্যন্ত হাজারও মানুষ গুম হয়ে আছে, এই প্রেস ক্লাবে ‘মায়ের ডাকে’ অনুষ্ঠানে আমি বহুবার এসেছি। মায়েরা কানতে কানতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপন মানুষ হারানোর ব্যথা আপনি জানেন। আমাদের পিতা, আমাদের পুত্র, আমাদের স্বামী তাদেরকে খুঁজে পাই না, আমরা পুলিশের কাছে যাই, তারা বলে জানি না। আমরা অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার কাছে যাই, তারা বলে জানি না, তাহলে করব কি?’ এক নারী আমার কাছে টকশোতে ফরিয়াদ করেছিলেন, আমার স্বামী আজ পাঁচ বছর যাবৎ নাই, তার জন্য দোয়া করতে পারি না; কারণ জীবিত মানুষের জন্য তো দোয়া মাহফিল হয় না। উনি জীবিত কি-না মৃত, সেই কথা বলতে পারি না। এজন্যই বললাম, দিনে দিনে অনেক দেনা হয়ে গেছে। মনে করেছিলেন, একটার পর একটা মারতে পারবেন? কেউ কিছু করতে পারবে না। পরেরদিন অ্যাপ্লিকেশন করলেন, আপনি অসুস্থ, চলে গেলেন চট্টগ্রামে। ভেবেছেন কেউ ধরতে পারবে না। কিন্তু পরে আপনারা তো দেখতে পারলেন।”
ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, ‘সাতজনকে রিমান্ডে নেবেন, দুজনকে রিমান্ডে নেয়া হলো না কেন? কার নির্দেশে রিমান্ডে নেয়া হলো না, তার ইতিহাস অদ্যপান্ত জানতে চাই। নির্দেশদাতাকে আদালতের সামনে আনা হোক, সেটা আমাদের দাবি। বিচার হবে, বিচার হতে হবে। বিচার যদি তারা না করে ইশরাক যে কথা বলেছে, আমরা বিচার করব। দরকার হলে এই প্রেস ক্লাবের সামনে গণআদালত বসবে।’
তিনি বলেন, ‘বিচার তো ওরা করবে না, কারণ এই পুলিশকে দিয়েই দুই বছর আগে ভোটের আগের রাতে ওদেরকে ঘুষ দিয়ে জনগণের ভোট ডাকাতি করিয়েছে, ওরা ডাকাত। তারা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে ভোট ডাকাতি করো, তারাই পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন, তোমাদের নিজের মতো যা খুশি ইচ্ছা তাই করো, আমরা কিছু বলব না। আর সরকার যদি কিছু বলতো তাহলে আপনারাই বলেন, একজন থানার ওসি এক এক করে ২০৪ জনকে নিজের সিদ্ধান্তে গুলি করে হত্যা করতে পারে? আমাদের লড়াই কিন্তু পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে নয়, আমাদের লড়াই সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নয়, আমাদের লড়াই কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে নয়। আমাদের লড়াই যারা দুর্বৃত্তায়ন করিয়েছে, এদের দ্বারা যারা খুন করিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে।’
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ভিপি নুরুল হক নুর প্রমুখ।
কেএইচ/এমএআর/পিআর