খালেদার বিলম্বে অস্বস্তি সরকারে


প্রকাশিত: ০৪:২৬ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০১৫
লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফিরতে বিলম্ব হওয়ায় সরকার এবং সরকার দলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগের মধ্যে অস্বস্তি কাজ করছে। দেশে ফেরার তারিখ কয়েক দফা পেছানোর ঘটনাকে খালেদা জিয়ার কৌশলগত ষড়যন্ত্র মনে করছে সরকার।

খালেদা জিয়া লন্ডন সফরের পর দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ড এবং হত্যাকাণ্ড পরবর্তীতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সতর্কতা জারির ঘটনাকে সরকার পক্ষ খালেদা জিয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করছেন।

এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘খালেদার বিদেশ সফর নিয়ে প্রথম থেকেই রহস্যের জন্ম দিয়েছে। তিনি বিদেশ যেতেও বহুবার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন, ঠিক একইভাবে দেশে ফিরতেও দফায় দফায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছেন। তার (খালেদার) রাজনীতি মানেই ষড়যন্ত্র। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পোক্ত করতেই তিনি বারবার সফর স্থগিত করছেন। তবে তার কোনো সফরই সফল হবে না।’

১৬ সেপ্টেম্বর চোখের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান বিএনপি চেয়ারপারসন। গত ১ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা থাকলেও চোখে অস্ত্রোপচারের কারণে তা দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এরপর ৮, ১৫ ও ১৯ অক্টোবর দেশে ফেরার টিকিট বুকিং দেয়া হলেও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়।

সর্বশেষ আগামী ২ নভেম্বর বিমানের টিকিট বুকিং দিয়েছেন তিনি। এর আগে ২৭ অক্টোবর যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি একটি সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা করছে। সেখানে খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সমাবেশের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাননি খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়ার এই সফর নিয়ে আগে থেকেই নানা ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়। লন্ডন সফরের আগে একের পর এক বিদেশ সফরের সিদ্ধান্ত বাতিল হতে থাকে। সৌদি আরবের পর লন্ডন সফর স্থগিত করায় সরকারের পক্ষ থেকে তখন নানা ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে সমালোচনা করা হয়।

সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে খালেদা জিয়া লন্ডন সফরে গেলে তখনও সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা একে ষড়যন্ত্রের সফর বলে আখ্যা দেয়। দুই বিদেশি নাগরিকের হত্যাকাণ্ডের পর সরকার পক্ষ খালেদা জিয়ার সফর এবং ষড়যন্ত্রের হিসাব-নিকাশ শক্তভাবে করতে শুরু করে। ওই হত্যাকাণ্ডের পেছনে খালেদা জিয়ার ষড়যন্ত্র আছে এমনটি দাবি করে সরকারের মন্ত্রীরা সরাসরি বক্তব্য দিয়ে আসছেন।

বিদেশি নাগরিক হত্যার পরপরই স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছিলেন, ‘তিনি (খালেদা) লন্ডনে থাকা অবস্থায় দেশে পরপর দুজন বিদেশি নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে বসেই তিনি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। এ হত্যার ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

একইভাবে অভিযোগ তোলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ‘দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত। এ হত্যার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের সম্পৃক্ততার কিছুটা প্রমাণ পাওয়া গেছে।’

গত বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) কুড়িগ্রাম সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি (খালেদা) বিদেশে বসে  দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন।’

তবে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, চিকিৎসার জন্য ম্যাডাম লন্ডনে রয়েছেন। দেশে না ফেরার এটিই অন্যতম কারণ। এখানে রহস্য বা ষড়যন্ত্রের কিছুই নেই।’

রিপন বলেন, ‘সরকারের পায়ের তোলার মাটি সরে গেছে বলেই সব জায়গায় ষড়যন্ত্র খুঁজছে। বিএনপি নেত্রী বিদেশে গিয়ে কী ষড়যন্ত্র করছেন, তা সরকার পরিষ্কার করলেই তো হয়।’

এএসএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।