একজনের আঙুলের ছাপ, ভোট অন্যের : অভিযোগ বিএনপি নেতার
চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট শুরুর পর থেকে নানা অভিযোগ আসছে। তবে এবার নতুন এক অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি নেতারা। চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘গতকাল রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকায় বোমাবাজি করে ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। এর পরও যারা ভোট দিতে আসছেন তাদের পছন্দমতো ভোট দিতে দেয়া হচ্ছে না। ভোটাররা শুধু তাদের ফিঙ্গারটাই দিচ্ছেন। এরপর তাদের ভোট দিচ্ছেন অন্যরা।’
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রামে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ইভিএমে ভোট কারচুপির সুযোগ কোথায় সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শাহাদাত বলেন, ‘গতকাল রাত থেকেই আমাদের এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়া হয়। এর পরও যারা সকালে এজেন্টের দায়িত্ব পালনের জন্য ভোট কেন্দ্রে গেছেন তাদের মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে। অনেককে কেন্দ্রে প্রবেশ করতেই দেয়া হয়নি।’
তিনি অভিযোগ করেন, ভোট কেন্দ্রে ভোটাররা গেলেও তারা গোপন কক্ষে গিয়ে নিজের ইচ্ছামতো ভোট দিতে পারছেন না। নিজেদের দখলে নেয়া কেন্দ্রগুলোতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা ভোটারদের ফিঙ্গার দেয়ার পর জোর করে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করছে। অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাই সেই ভোট দিয়ে দিচ্ছে।
ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে কিছু যুবকের শোডাউন
বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত বলেন, ‘আমরা জানতাম ভোট কেন্দ্রে সেনা সদস্যরা থাকবেন। তারা হয়তো ভোট ডাকাতি রুখে দেবেন। এ বিষয়ে যখন আমরা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামানকে জানালাম তিনি বললেন, সেনা সদস্যরা শুধু ইভিএমের কারিগরি দিকটি দেখবেন। নির্বাচনে ভোট গ্রহণে তাদের কোনো হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।’
বিএনপির এই নেতা জানান, এ পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্রে অন্তত ১০ বিএনপি নেতাকর্মীকে মারধর করেছে নৌকার সমর্থকরা। তাদের মধ্যে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলামের মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। আহত করা হয়েছে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ইসহাক ও যুবদল নেতা খোরশেদকে।
বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান পুনর্নির্বাচন দাবি করে বলেন, ‘নির্বাচনের ১৭০টি কেন্দ্র থেকে তার নির্বাচনী এজেন্ট ও কর্মী-সমর্থকদের বের করে দেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের লোকজন ভোটারদের ভোট নিজেরাই দিচ্ছে। গতকাল রাত থেকে নির্বাচনী এলাকায় বোমাবাজি করেছে নৌকার সমর্থকরা। অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে সাধারণ ভোটারদের আসতে দেয়া হয়নি। বরং ছাত্রলীগ-যুবলীগ নিজেরা লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখানে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। মানুষের সঙ্গে এমন প্রহসনের কোনো অর্থ নেই। তাদের ট্যাক্সের টাকা কেন এভাবে অপচয় হবে। আমি এ নির্বাচন স্থগিত ও পুনর্নির্বাচন দাবি করছি।’
এর আগে বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চান্দগাঁও থানার খাজা রোডে ভোটের শুরুতেই একদল যুবককে শোডাউন করেন। তাদের হাতে ছিল লাঠি ও কিরিচ। কারও কারও মুখ ছিল রুমাল দিয়ে বাঁধা। সবার বুকেই ছিল নৌকার প্রার্থীর স্টিকার। ভোট কেন্দ্রের সামনে মারমুখী যুবকদের এমন আচমকা অবস্থানে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বিএনপির সংবাদ সম্মেলন ও পুনর্নির্বাচন দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদের দাবি, ভুল বোঝাবুঝির কারণে সাময়িক উত্তাপ ছড়ালেও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। বর্তমানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে।
এদিকে একই সময়ে চান্দগাঁও এলাকার এনএমসি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধানের শীষের এক সমর্থককে পিটিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এরপর সেই সমর্থককে পুলিশ গাড়িতে তুলে দেন তারা। তখন ধানের শীষের ওই সমর্থককে বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাড়িয়ে নিতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ধানের শীষের ওই সমর্থককে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এ ছাড়া নগরের রাবেয়া বশর ইনস্টিটিউট ও আল হুমায়রা মহিলা মাদরাসায় বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাবেয়া বশর ইনস্টিটিউট ভোটকেন্দ্রের বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট সালাউদ্দিন শাহেদ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হচ্ছে। ধানের শীষ সমর্থিত ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। কেবল নৌকার সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে পারছেন।’
জেডএ/পিআর