সালিশে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা
নওগাঁর মহাদেবপুরে সালিশে সুমন (৩০) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে থানায় অবশেষে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য পুলিশ, হাসপাতালের চিকিৎসকের সহযোগিতায় জোর প্রচেষ্টা শুরু হয়। উপজেলায় আলোচিত এ হত্যার ঘটনায় ঘটনার পর তিনদিন পার হলেও কোনো আসামি গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
শুক্রবার হত্যার ঘটনাটি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন। নিহত সুমনের স্ত্রীর ভগ্নিপতি মামলার বাদী আব্দুল মালেককে মুঠোফোনে সন্ধ্যায় পুলিশ থানায় ডেকে এনে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ আটজনের নাম উল্লেখ ও আরো অজ্ঞাত ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় ও নিহতের স্বজনরা।
মামলার আসামিরা হলেন, ইউপি সদস্য ইউনুস আলী, ভোদর আলী, গুলজার হোসেন, আরিফুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক, ফিরোজ হাসান ও ময়েজ উদ্দিন। এ ছাড়াও আরো অজ্ঞাত নামা ৬/৭ জন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁর মহাদেবপুরে উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের রোনাইল আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা আজিজার রহমানের ছেলে সুমন রহমান। প্রায় এক মাস আগে প্রতিবেশি ভোদর আলীর কাছ থেকে একটি গরু ২১ হাজার টাকায় ক্রয় করেন। গরু বিক্রির টাকা ভোদর আলীকে না দিয়ে বাড়ি থেকে সুমন রহমান পালিয়ে যান।
হঠাৎ করে গত বুধবার সন্ধ্যায় সুমন রহমান তার আবাসন প্রকল্পের বাড়িতে আসেন। এ খবর পেয়ে গরুর মালিক ভোদর আলীসহ তার লোকজন সুমনের বাড়িতে এসে তাকে আটক করে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউনুস আলীকে খবর দেন। ওই দিন রাতে ইউপি সদস্য ইউনুস আলী তার সহযোগী গুলজার হোসেন, আরিফুল ইসলাম ও নিজামসহ ১৫/২০ জন লোক এসে তার স্বামী সুমনকে বাড়ি থেকে বের করে সালিশ বসান। সালিশে সুমনকে টাকা দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।
সুমন টাকা দিতে না পারায় ইউপি সদস্য ইউনুস আলী ও তার লোকজন লাঠি দিয়ে সুমনকে মারপিট করেন। মারপিটে সুমন অসুস্থ হয়ে পড়লেও টাকা আদায়ের জন্যে ঘরে বন্দী রেখে পাহার দেন ইউপি সদস্য ইউনুস আলী, স্থানীয় মাতব্বরদের মধ্যে গুলজার হোসেন, আরিফুল ইসলাম ও নিজাম উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে ইউনুস আলীসহ তার লোকজন হঠাৎ করে সুমনকে ভ্যানযোগে মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। পথিমধ্যে সুমনের মৃত্যু হয়।
নিহতের স্বজনরা আরো অভিযোগ করে বলেন, ঘরের মধ্যে বন্দি থাকা অবস্থায় কিভাবে সুমন বিষপান করলো? আর কেনই বা তাদের না জানিয়ে হাসপাতালে নেয়া হলো। বিয়ষটি রহস্যজনক। এদিকে ইউপি সদস্য ইউনুস আলীগং অপপ্রচার করেন সুমন বিষপানে আত্মহত্যা করেছে।
মামলার বাদী আব্দুল মালেক জাগো নিউজকে জানান, মামলা দায়ের করা হলেও ন্যায় বিচার পাবেন কি না এ নিয়ে তাদের শঙ্কা রয়েছে।
খাজুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, মারপিটে সুমনের মৃত্যু হয়েছে বলে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) নাজমুল হক বৃহস্পতিবার রাতে সত্যতা স্বীকার করলেও ইউডি মামলা দায়ের করা হয়। এদিকে একটি মহল সুমনকে হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্যে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে বলে অপপ্রচার করছে। হত্যাকারিদের সঠিক বিচার দাবি করেন তিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লালবুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, মারপিটের আঘাতের চিহ্ন সুমনের শরীরে পাওয়া গেছে। নিহতের শরীরে কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
মহাদেবপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) নাজমুল হক জাগো নিউজকে জানান, নিহতের মৃতদেহ উদ্ধার করে শুক্রবার বিকেলে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিহতের শরীরে কীটনাশক জাতীয় কিছু পাওয়ায় একটি সার্টিফিকেট দিয়েছেন।
মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. আব্দুল জব্বার জাগো নিউজকে জানান, নিহত সুমনকে হাসপাতালে নেয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল থেকে থানায় এ ধরনের কোনো সার্টিফিকেট দেয়ার কোনো নিয়ম নেই।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পশ্চিম) মুহাম্মদ রাশিদুল হক জাগো নিউজকে জানান, প্রাথমিকভাবে মারপিটে মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে আসামিরা পলাতক থাকায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। অপর প্রশ্নে তিনি আরো বলেন, বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রকৃত ঘটনা উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমজেড