ডাকসুতে হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে : কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৪০ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ডাকসু হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডাকসুতে যে হামলা হয়েছে তা নিন্দনীয়। হামলার সঙ্গে যারাই জড়িত হোক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দলের পক্ষ থেকে এ হামলায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক ইস্যুতে প্রেস ব্রিফিং এ তিনি এসব কথা বলেন।

রোববার দুপুরে ডাকসু ভবনের নিজ কক্ষে হামলার শিকার হন ভিপি নুর ও তার অনুসারীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডাকসু ভবনের মূল ফটক বন্ধ করে নুরের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করা হয়। এছাড়া বাইরে থেকেও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছোড়েন। হামলায় অন্তত ৩২ জন আহত হন।

নুরসহ আহত ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে ফারাবীকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। সকালে তা খুলে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে. ড. এ কে এম নাসিরউদ্দিন। এছাড়া আহত বাকিদের চিকিৎসা দিয়ে ঢামেক থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।

হামলার বিষয়ে কাদের বলেন, এ ধরনের ঘটনায় সরকার অবশ্যই বিব্রত হয়। তবে কোনো ঘটনাতেই সরকার নির্বিকার থাকেনি। ঘরের লোক দলের লোকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অনুপ্রবেশকারীরাও অনেক সময় অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটায়। সার্বিক বিষয়গুলো সিরিয়াসলি দেখা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সরাসরি আমাদের দলের সঙ্গে জড়িত নয়। মঞ্চের একজন ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত। এ ধরনের নিন্দনীয় ঘটনা যারা ঘটায় তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টা শেয়ার করেছি।

হামলার পর গতকাল সন্ধ্যায়ই আহত নুরকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নতুন প্রেসিডিয়াম সদস্য নানক ও নাছিম। তবে হাসপাতালে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়েন তারা। আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে সামনে পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে স্লোগানও দেয়া শুরু করেন অনেকে। এরপর তারা সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে যারা স্লোগান দিয়ে পরিবেশ নষ্ট করছে তারা কী উদ্দেশে এগুলো করছে, তা পুলিশ খতিয়ে দেখবে।

রাতে নুরকে দেখতে হাসপাতালে যান ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনিও শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন

নুরের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপিপন্থী শিক্ষকরাও হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভিন্ন মত প্রকাশের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে। ডাকসুর ভিপি আমাদের সমালোচনা করতে পারে, সরকারের সমালোচনা করার অধিকার তার আছে। এখানে অন্যান্য বহিরাগতরা আসে এসব কথা অনেকে বলে। যতকিছুই হোক যে হামলাটা হয়েছে এটা নিন্দনীয় এবং আমি এটার নিন্দা করি।’

‘এ ব্যাপারে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গতকাল আমাদের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম গতকালই হাসপাতালে গিয়েছিলেন তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য। নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন এ ঘটনার সাথে যারাই জড়িত, তারা যদি দলীয় পরিচয়েরও কেউ হন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এ ব্যাপারে প্রশাসিক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যারাই অপকর্ম করে থাকুক, প্রকাশ্যে এ ধরনের হামলা বিচার হওয়া উচিত। সাংগাঠনিকভাবে এবং প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে আমরা আমাদের পার্টির পক্ষে থেকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

ছাত্রলীগকে আপনি বারবার ভালো খবরে শিরনাম হতে বলেন কিন্তু হয় উল্টো- সাংবাদিকদের এমন কথার জবাবে তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে এগুলো হয়। এখানে আবার মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন জড়িত, তারা তো আর সরাসরি আমাদের দলের সঙ্গে জড়িত নয়। সেখানে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেউ কেউ জড়িত এটা রিপোর্টে এসেছে। এদের কেউ কেউ আগে ছাত্রলীগ করতে পারে।’

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতারও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা- এ বিষয়টা মন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি একজনকে তার অপকর্মের জন্য আগেই ছাত্রলীগ বহিষ্কার করেছে। বিতর্কিত বলে তাকে অনেক আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। কাজেই বহিষ্কৃত হয়ে গেলে বা দল থেকে চলে গেলে… সবাই ছাত্রলীগ করে..পরবর্তীকালে ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগই থাকে এমনতো বিষয় নয়। কারণ ছাত্রলীগের অনেকে অন্য দলেও গেছে। ছাত্রলীগের প্রথমসারির প্রভাবশালী নেতারও অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন দলে আছেন, থাকতে পারেন, এটা স্বাভাবিক।’

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকারের জায়গা, অথচ সেটাকে ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ মুঞ্চ এ ধরনের কাজ করছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে কেবিনেটে কথা বলেছি। এ ধরনের নিন্দনীয় ঘটনা যারা ঘটায়, তাদের বিষয়ে অবশ্যই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সিরিয়াসলি দেখা উচিত।’

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সেক্রেটারি আল মামুন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যেই হোক, আমি তো বলেছি যে পরিচয়েরই হোক, অপকর্মকারীকে আমরা অপকর্মকারী হিসেবেই দেখবো, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখবো। এখানে কোনো প্রকার ছাড় দেয়ার প্রশ্নেই আসে না।’

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো গাফেলতি ছিলে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নই। তারপরও আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

ডাকসুর ভিপি নুরের উপর এর আগেও আটবার হামলা হয়েছে, তার কোনো দৃশ্যমান বিচার দেখা যায়নি- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এবার ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টা কতটা বাস্তবায়ন হবে বাস্তবেই দেখুন।’

কাদের বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় সরকার অবশ্যই বিব্রত হয়। তবে কোনো ঘটনাতেই সরকার নির্বিকার থাকেনি। ঘরের লোক দলের লোকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বুয়েটেতো একজনকে মেরেছে, যারা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদেরও তো আমরা হারালাম। তারা ছাত্রলীগের কর্মী ছিল। সরকার তো এদের রেহাই দেয়নি। অনুপ্রবেশকারীরাও অনেক সময় অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটায়। সার্বিক বিষয়গুলো সিরিয়াসলি দেখা হচ্ছে।’

এমইউএইচ/এনএফ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।