জামায়াতের জালে কল্যাণ পার্টি, এড়িয়ে চলছে বিএনপি!
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। বুধবার দলটির এক যুগপূর্তি হলো। এ উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি অনুষ্ঠানে যাননি। সেখানে যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ছিলেন বিএনপির একমাত্র প্রতিনিধি।
গুঞ্জন উঠেছে, বিএনপিকে কোণঠাসা করতে জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০ দলের শরিকদের নিয়ে ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’ গঠন করা হয়েছে। কল্যাণ পার্টি ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চে’ যুক্ত থাকায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনুষ্ঠানে আসেননি।
তবে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার জামিন-সংক্রান্ত কাজে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্যস্ত থাকায় অনুষ্ঠানে সময়মতো উপস্থিত হতে পারেননি। আমরা তার অপেক্ষায় আছি।’
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে ইবরাহিম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের নয়টি মাসের প্রতিটি দিন আমাদের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গেছে। আজ আপনারা মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে কাছে পাচ্ছেন, রেদোয়ানকে কাছে পাচ্ছেন, ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, আজাদ মাহমুদ, নজরুল ইসলামকে কাছে পাচ্ছেন। ১০ বছর পরে তো পাবেন না। তখন আফসোস হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বাঙালি, আমি মুক্তিযোদ্ধা, আমি বাংলাদেশি, অতঃপর আমি রাজনৈতিককর্মী। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ৪ তারিখ আমি ২২ বছর নয় মাস বয়সের একজন তরুণ। লেফটেন্যান্ট ইবরাহিম। আখাউড়া রেলওয়ে শহরের উত্তরে আজমপুরে, রেলস্টেশনের দক্ষিণে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের নিয়ে আক্রমণরত ছিলাম।’
সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, ‘৪ তারিখ দিবাগত রাত্রে চূড়ান্ত যুদ্ধ হয়। পাঁচদিন চার রাতের অর্থাৎ ৫ ডিসেম্বর সকালবেলা ফজরের আজানের সময় আখাউড়া জেলায় যেসব পাকিস্তানি ছিল তারা আত্মসমর্পণ করে, পলায়ন করে, নিহত হয়। তখন আখাউড়া আমাদের দখলে চলে আসে। আমার ব্যাটালিয়ন ৩৩ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মরদেহ একখানে করেছি।’
তিনি বলেন, ‘সেদিন ৪০ জনের অধিক পাকিস্তানি সৈন্য পানিতে ডুবে মারা যায়। বেশকিছু সৈন্য আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে যায়। আখাউড়ার দক্ষিণে ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটালিয়ন। আখাউড়ার পূর্বে ছিল ৩ নম্বর সেক্টরের সৈনিকগণ। সম্মিলিত যুদ্ধ পাঁচ দিন চার রাত চলেছিল।’
অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমাদের রাজনীতির সংগ্রামমুখর চলার পথে জেনারেল ইবরাহিম অগ্রনায়ক, অগ্রসেনানী। জেনারেল ইবরাহিমের নেতৃত্বে কল্যাণ পার্টির যে সংগ্রাম, জাতীয় রাজনীতিতে যে অবদান, তা এ দেশের রাজনীতিকে অনেক দূর এগিয়ে নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
কল্যাণ পার্টির যুগপূর্তি অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে মেজর জেনারেল ইবরাহিমকে অভিনন্দন জানান গোলাম পরওয়ার। তিনি আরও বলেন, ‘কল্যাণ পার্টি এক যুগ পাড়ি দিয়েছে। আজ এখানে এসে তার দলের সাংগঠনিক শক্তি ও নেতৃত্বের দক্ষতা এবং তার ঐতিহ্য ও যোগ্যতায় আমি অভিভূত। উদ্বোধনী বক্তব্যে সৈয়দ ইবরাহিম তার দল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে চিন্তার কথা বলেছেন, টক শো, টেলিভিশনে তার যে মূল্যবোধের পরিচয় পাই, তিনি যে চিন্তা-চেতনাকে লালন করেন, তার দলের মধ্যও সেই চিন্তা ধারণ করেন।’
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমি মনে করি, একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে। সৈয়দ ইবরাহিমের দলের বিকশিত নীতির মধ্যে তিনি সেটাই উল্লেখ করেছেন। কল্যাণ পার্টি যে সময়টা পার করেছে, সেটা একটা সংগ্রামমুখর যুগ। অনেক কষ্ট, বাধা-বিপত্তি পাড়ি দিয়ে কল্যাণ পার্টিকে এগোতে হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম, জাগপার মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ প্রমুখ।
কেএইচ/এসআর/এমএআর/এমএস