বন্ধু রাষ্ট্ররা কী করল, রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রশ্ন ফখরুলের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৪১ পিএম, ২৯ আগস্ট ২০১৯
ফাইল ছবি

>> ‘সরকার মিয়ানমারের ফাঁদে পড়েছে’
>> নেতাকর্মীদের মেয়ের ‘খুদেবার্তা’ পড়ে শোনালেন ফখরুল
>> ‘ভারসাম্যহীন’ হয়ে গেছেন ওবায়দুল কাদের : বিএনপি মহাসচিব

সরকার মিয়ানমারের ফাঁদে পড়েছে উল্লেখ করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান বিএনপির সরকারই করতে পেরেছিল বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, ‘দেখুন, কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেবকে মনে হচ্ছে, তিনি খুব বিব্রত, কিছুটা বলা যেতে পারে ভারসাম্যহীন হয়ে গেছেন। তিনি (ওবায়দুল কাদের) বলছেন, রোহিঙ্গাদের সমস্যা না কি আমরা করেছি…. কী বলবেন? হাসিও পায় তার কথা শুনে।’

তিনি বলেন, ‘এখন উনারা পারছেন না, দে আর ফেইলিং। আমরা পেরেছিলাম। ১৯৭৮ সালে এই রোহিঙ্গারা এসছিল, একইভাবে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অতি অল্প সময়ের মধ্যে মিয়ানমারকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তাদের পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কেন পেরেছিলেন পাঠিয়ে দিতে? সেই শক্তি তার ছিল। তিনি কক্সবাজারে ক্যান্টনমেন্টই তৈরি করে ফেললেন ওই সময়ে, পুরো গ্যারিশন নিয়ে চলে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আইদার ইউ টেইক ব্যাক অর ইউ উইল ফেইস।’

খালেদা জিয়ার শাসনামলের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আমলে ১৯৯২ সালে একই ঘটনা ঘটেছিল। প্রায় ২ লাখ ৪৪ হাজার রোহিঙ্গা এসেছিল সেই সময়ে। তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) সরাসরি বললেন যে, তুমি (মিয়ানমার) কি ফেরত নেবে, না কি আমি অন্য ব্যবস্থা নেব। তারা ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।’

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আজকে এই সরকার মিয়ানমারকে একবারের জন্য বকাবকিও করে নাই খেয়াল করে দেখবেন। একটা স্টেটমেন্ট নাই যে, সেখানে বলেছে যে, মিয়ানমার জেনোসাইড করেছে, মিয়ানমার এথনিক ক্লিনজিং (জাতিগত নিধন) করছে, হত্যা করছে, নির্যাতন করছে-বিবৃতির কোথাও দেখবেন না।’

‘বারবার করে তাদেরকে বলছে, ভাই নিয়ে যাও, নিয়ে যাও। এগ্রিমেন্ট সই করেছে, সেই এগ্রিমেন্ট সই করার মতো নয়। ওর মধ্যে কোনো কিছুই নাই, মিয়ানমার যা বলেছে তাই করতে হবে এবং তা করছেও তারা। সরকার ওদের ট্র্যাপে পড়ে গেছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে এমন কূটনৈতিক অবস্থা যে, একটা দেশও বাংলাদেশের পক্ষে নেই এখন। আপনার চীন, ভারত, জাপান, রাশিয়া-সব মিয়ানমারের পক্ষে। তাহলে বাংলাদেশের পক্ষে কে? এতদিন ধরে, দুই বছর ধরে কী করলেন? অথচ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সুউচ্চ ভারত সঙ্গে, চীনের সঙ্গে। তাহলে বন্ধুরা কী করল?’

‘আর পররাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয় তো জানেনই না এত বিরাট সমাবেশ কি করে হলো? আর আরেকজন বলেছেন, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভারতের সঙ্গে। কী বলব বলেন! আমাদের ওই কবি নজরুল ইসলামের কবিতার মতো বলতে হয়, আমরা ওই দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যা আসে কই মুখে, সেই অবস্থা দাঁড়িয়েছে’-যোগ করেন তিনি।

দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। আজকের আওয়ামী লীগ তো সেই আওয়ামী লীগ নেই। যে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে সংগ্রাম করেছে গণতন্ত্রের জন্য সেই আওয়ামী লীগ এখন নেই। এই আওয়ামী লীগ হচ্ছে সেই দল যাদের নিজেদের কোনো কিছুই নেই। তারা ফ্যাসিস্ট, গণবিরোধী। মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং তাদের হাত আজকে মানুষের রক্তে রঞ্জিত।’

‘তাদেরকে পরাজিত করতে এখন যেটা দরকার তা হচ্ছে সাহস, শক্তি, মনোবল এবং এক লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া। আমরা জানি, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, যিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা করেছিলেন, তখন বেশিরভাগ লোকই কিন্তু পালিয়ে গিয়েছিলেন, ছিল না। তিনি (জিয়া) স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘোষণা করে গোটা জাতিকে যুদ্ধে নামিয়ে দিয়েছিলেন।’

গণতন্ত্রের জন্য কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ত্যাগের কথা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

অস্ট্রেলিয়ায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত জ্যেষ্ঠ কন্যা মির্জা সামারুহর পাঠানো একটি খুদেবার্তা (এসএমএস) পড়ে শুনিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি যখনই একটু মন-টন খারাপ করি, তখন আমরা মেয়ে ২-৩টা এসএমএস পাঠায়। আজকে সকালেই আমাকে একটা ম্যাসেজ পাঠিয়েছি সে। আমি তা জানাতে চাই আপনাদেরকে। এটা খুব দরকার। নেলসন ম্যান্ডেলার ছোট্ট একটা কথা সে কোড করে পাঠিয়েছে- ‘দ্য গ্রেটেস্ট গ্লোরি ইন লিভিং, রাইজ নট ইন ফেভার ফেইলিং, বাট ইন রাইজিং এভরি টাইম উই ফল’। অর্থাৎ আমরা যখন পড়ে যাই তখন উঠে দাঁড়ানোটাই হচ্ছে গ্লোরি (গৌরব)। আর কোনো দিন পড়ি না-এটার মধ্যে গ্লোরি নাই। আমরা পড়ছি আবার উঠে দাঁড়াতে হবে-এটার মধ্যেই আমাদের গ্লোরি।”

এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজকে চতুর্দিকে অন্ধকারে আমরা আক্রান্ত হয়েছি, আমাদের জাতিসত্তা আক্রান্ত হচ্ছে। একে রক্ষা করতে হলে, আমাদের মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে এবং আমাদের জনগণকে সংগঠিত করতে হবে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে, দেশকে উদ্ধার করতে হবে।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের উদ্যোগে কাজী নজরুল ইসলামের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

জাসাসের সভাপতি অধ্যাপক মামুন আহমেদের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন রোকনের পরিচালনায় এই আলোচনা সভায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল হাই শিকদার, জাসাসের সাবেক সভাপতি রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, মো. নাসিম আহমেদ, জাসাসের সাধারণ সম্পাদক হেলাল খান, কেন্দ্রীয় নেতা এহসানুল হক চৌধুরী, সানাউল হক, শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা, জাহাঙ্গীর আলম রিপন, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

কেএইচ/এসআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।