অর্থবছর পরিবর্তন চান রওশন এরশাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:০৩ পিএম, ১১ জুলাই ২০১৯

অর্থবছর পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে বিরোধীদলীয় উপনেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, ‘যখন আমরা বাজেট পাস করি তখন থাকে ভরা বর্ষা। অর্থবছর পরিবর্তন করলে উন্নয়নে কাজে লাগবে। পৃথিবীর অনেক দেশ তাদের জলবায়ুর সঙ্গে মিল রেখে অর্থবছর পরিবর্তন করেছে। আপনারা যদি বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা করেন। আমার মনে হয় অর্থবছর পরিবর্তন করতে পারলে আমাদের উন্নয়ন আরও ভালো হবে।’

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের চলমান অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।

অসহায় শিক্ষকদের প্রতি মানবিক হোন

অসহায় শিক্ষকদের প্রতি মানবিকতার হাত বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, ‘এমপিওভুক্তি বঞ্চিত শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। তারা বেতন পাচ্ছেন না। এ অসহায় শিক্ষকদের প্রতি মানবিকতার হাত বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানাই। শিক্ষামন্ত্রীকে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার অনুরোধ।’

গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে জনগণকে রেহাই দিন

রওশন এরশাদ বলেন, ‘হঠাৎ গ্যাসের দাম কেন বাড়ানো হলো? আমরা উন্নয়ন চাই, কিন্তু গ্যাসের দাম বাড়াতে চাই না। এটা জনগণের কথা, আমার কথা না। যেদিন বাজেট পাস হলো সেদিন গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। গণশুনানির পর দেখা গেল গ্যাসের দাম বেড়ে গেল। আমরা যখন গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিলাম, তখন ভারতে গ্যাসের দাম কমিয়ে দিল। ঘরে রান্নার গ্যাসের দাম ১০০ টাকা কমিয়ে দিল।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের তো প্রাকৃতিক গ্যাস আছে। সেগুলো উত্তোলণের ব্যবস্থা আমরা করতে পারি। হয়তো ২/৩ বছর লেগে যাবে। গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে যদি কোনো কিছু করা যায়। অনেকে আছেন যাদের এত দাম দিয়ে গ্যাস কেনার সামর্থ নেই। জনগণকে একটু রেহাই দেয়া উচিত।’

বিরোধী দলীয় উপ নেতা আরও বলেন, ‘স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে আমাদের ছেলেমেয়েরা অন্যরকম জগত তৈরি করছে। এটার হাত থেকে যদি তাদের রক্ষা করা না যায় তাহলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নেতৃত্ব তারা কীভাবে দেবে? এটা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের রাস্তা খুঁজতে হবে।’

নবম ওয়েজ বোর্ড দ্রুত বাস্তবায়ন করুন

রওশন এরশাদ বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের সঙ্গে দিনরাত পরিশ্রম করে তথ্য সরবরাহ করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের উন্নয়নে কোনো সরকার গুরুত্ব দেয় না। যদিও বর্তমান সরকারের সময় গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণি করছি, সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড দ্রুত বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেবেন। ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নে তথ্যমন্ত্রীকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার জন্য অনুরোধ করছি।’

ডাক্তাররা সময় দেন না বলে বিদেশমুখী রোগীরা

তিনি বলেন, ‘ডাক্তার আছে, পর্যাপ্ত পরিমাণ যন্ত্রপাতি আমাদের দেশে আছে। কিন্তু ডাক্তাররা রোগীদের সময় দেন না। ডাক্তাররা সময় দেন না বলে বেশির ভাগ মানুষ দেশের বাইরে চলে যান।’

এ সময় অবিলম্বে মেয়াদোর্ত্তীণ ওষুধ যেন বাজারে বিক্রি করতে না পারে সে বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিরোধী দলীয় উপনেতা।

তিনি বলেন, ‘খাদ্যে ভেজাল এখনও বন্ধ হয় নাই। ওষুধ আর খাদ্য মানুষের অনেক বেশি মৌলিক উপাদান। এ দুটি উপাদান ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না, চলতেও পারে না। আমাদের ছোট ছোট শিশুরা যদি ভেজাল খাদ্য খায় তাহলে দেশ গড়ার কাজ করবে কীভাবে? বাচ্চাদের খাবারের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এ বাচ্চারাই ভবিষ্যতে এ দেশকে নেতৃত্ব দেবে।’

রওশন আরও বলেন, ‘ছোট ছোট বাচ্চাদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এ ধরনের শিশু নির্যাতন কেন গড়ে উঠেছে? বিশেষ করে স্কুলে-মাদরাসায় কোনো জায়গায় আমাদের বাচ্চারা সুরক্ষিত না, নিরাপদ না। যদি নিরাপদ না হয় তাহলে লেখাপড়া করবে কীভাবে? নুসরাতের মতো যদি জীবন দিতে হয়-এটা দুঃখজনক। আমাদের দেশে আইন আছে। আমি সরাসরি বলতে চাই, এদের মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে অনেক বেশি। কোনো জায়গাতে বাচ্চারা নিরাপদ না। এ ধরনের অবস্থা আগে ছিল না।’

এ সময় আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘তাদের দ্রুত শাস্তি দেয়া উচিত। মামলাগুলো ঝুলিয়ে না রেখে তাদের শাস্তি দেয়া উচিত।’

রওশন বলেন, ‘ধানের এ অবস্থা হলো কেন? এ রকম হলে তো কৃষক আর ধান চাষ করবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে কৃষকদের হান্ড্রেড পার্সেন ভর্তুকি দেয়। কৃষকদের হান্ড্রেড পার্সেন্ট ভর্তকি দিয়ে উৎসাহী করতে হবে। যাতে তারা ফসল উৎপাদন করে আমাদের খাদ্য সরবরাহ করতে পারে। প্রতিবার যদি কৃষকরা আগুন দিয়ে ধান পুড়িয়ে ফেলে তাহলে তো এ দেশ বাঁচবে না। কৃষকরা এ দেশটাকে বাঁচায়। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে।’

এইউএ/এনডিএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।