শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে হামলা : রায় প্রত্যাহারের দাবি বিএনপির
১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে গুলিবর্ষণ ও হামলা চালানোর মামলাকে মিথ্যা বলে আখ্যা দিয়েছে বিএনপি। মামলায় পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ৯ জনের ফাঁসি, ২৫ জনের যাবজ্জীবন ও ১৩ জনের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের ঘোষণাকে ফরমায়েশি রায় উল্লেখ করে দলটির পক্ষ থেকে তা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।
রায়ের পর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গণমাধ্যামে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলা ছিল সম্পূর্ণরূপে বানোয়াট ও সাজানো। পরিকল্পিতভাবে নিজদলীয় লোকদের দিয়েই ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়ে রাজনৈতিক ইস্যু সৃষ্টি করা হয়েছিল, যা সর্বজনবিদিত। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে আওয়ামী লীগের জুড়িমেলা ভার। দীর্ঘ ২৪ বছর পর এই রায় ঘোষণায় প্রমাণ হয় যে, সরকারের ক্রমপ্রসারমান ফাঁসির দড়ি এখন বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলমত নিশ্চিহ্নকরণে নাৎসিবাদী আয়োজনের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ আজকে সরকারের নির্দেশে পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রায়।’
ফখরুল তার বিবৃতিতে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের ওপর অব্যাহত জুলুমের পরও বিএনপিকে নিস্তেজ তো করা যায়ইনি বরং জনসমর্থনের বিপুল বৃদ্ধিতে সরকারের হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়েছে। কাণ্ডজ্ঞান লোপ পেয়ে এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের বিভিন্ন কায়দায় দুনিয়া থেকে নির্মূলে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘২৪ বছর আগের ট্রেনে গুলি-বোমা হামলার সাজানো ঘটনায় আজকে আদালত কর্তৃক রায়ের মাধ্যমে একটি বিষয় সুষ্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ভোগ-লালসায় অস্থির সরকার তাদের গদি টিকিয়ে রাখতে নানা ধরনের সর্বনাশা নীলনকশা প্রণয়ন করে রেখেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই একের পর এক সরকারের হিংস্র রূপের প্রকাশ ঘটছে, মানবিক বিবেচনাগুলো পদদলিত করা হচ্ছে। আজকে পাবনার আদালতের রায়ে সরকারের নিষ্ঠুর দানবীয় রূপের আরও একটি নতুন চেহারা দেখা গেল।’
ফখরুল বলেন, ‘দেশব্যাপী আদিম সহিংসতা, নারী ও শিশু নির্যাতন ও তাদের আগুনে নিক্ষেপ, স্ত্রীর সামনে স্বামীকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা, কিশোরীকে নির্যাতনের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দৃষ্টান্ত শুধুমাত্র এই সরকারের আমলে সর্বত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং সরকারি দলের লোকদের দ্বারাই এই সমস্ত রক্তাক্ত অনাচার দেশব্যাপী সংঘটিত হচ্ছে। দেশব্যাপী অত্যাচার, নিপীড়ন, লুণ্ঠন, দখল এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এগুলোকে আড়াল করতেই ২৪ বছরের পুরনো একটি সাজানো মিথ্যা মামলায় বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের জড়িয়ে আদালতকে ব্যবহার করে এই নির্দয় রায় দেয়া হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার ক্ষমতাসীন হয়েই নিম্ন আদালতকে কব্জায় নিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে যে নির্মূলের নীতি অবলম্বন করেছে, আজকের রায় সেটিরই ধারাবাহিকতার অংশ। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছর পর এই রায় ঘোষণার ঘটনা শুধু হাস্যকরই নয়, এটি একটি সুদূরপ্রসারী মাস্টারপ্ল্যানেরই অংশ। আমি আজকের এই রায়ের বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি। অবিলম্বে এই ফরমায়েশি রায় প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
কেএইচ/বিএ