বিএনপির একদিকে ফুল অন্যদিকে অশ্রু!
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে নতুন দুই সদস্য বেগম সেলিমা রহমান এবং ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু নিযুক্ত হওয়ার ঘোষণার পর একদিকে তারা যেমন ফুলের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে এই পদ ঘিরে আলোচনায় থাকা যারা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ক্ষমতাসীন জোটের ঘনিষ্ঠদের দিয়ে বিএনপির নীতি নির্ধারণী গোপনীয়তা রক্ষা হবে তো? ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে ২ সদস্যের পদ ফাঁকা রেখে স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন> বিএনপি ছাড়তে চান শাহজাহান ওমর!
যার মধ্যে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পদাধিকার বলে স্থায়ী কমিটির সদস্য রয়েছেন। পরবর্তীতে ৩ জন সদস্য মারা যাওয়ায় স্থায়ী কমিটিতে ৫টি পদ শূন্য হয়। বিএনপির ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলের পর থেকেই নেতা-কর্মীদের দাবি ছিল শূন্যপদ পূরণের জন্য।
আর এসব পদে যারা আলোচনায় ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, এম মোরশেদ খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাবুব হোসেন, আব্দুল আউয়াল মিন্টু প্রমুখ।
দলীয় সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অন্ধকারে রেখে গঠনতন্ত্র মোতাবেক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একক সিদ্ধান্তে স্থায়ী কমিটির নতুন দুই সদস্য নিযুক্ত করা হয়েছে। দলের সর্বোচ্চ ব্যক্তির সিদ্ধান্তের কারণে স্থায়ী কমিটির অন্যান্য সদস্যরা ক্ষুব্ধ হলেও এ নিয়ে তারা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করছেন না। তবে দলীয় অনুসারীদের কাছে প্রচণ্ড ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেছেন।
নতুন দুই সদস্য নিযুক্তের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই, গণমাধ্যমের মাধ্যমে খবর পেয়েছি স্থায়ী কমিটিতে দুইজন যুক্ত হয়েছেন।’
নতুন দুইজন সম্পর্কে তার মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একজন নারী হিসেবে বেগম সেলিমা রহমান স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই পাবেন এটা সবার অনুমেয়। অন্যদিকে ইকবাল হাসান মাহামুদ একটা সময় ছাত্রলীগে ছিলেন, জাতীয় পার্টিতে ছিলেন পরবর্তীতে বিএনপিতে যুক্ত হয়ে আজ স্থায়ী কমিটিতে এলেন এখন দেখা যাক নতুন দুইজন নেতা-কর্মীদের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পারেন।’
স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, নতুন দুইজন ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন, আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই এবং আ.লীগ মিত্র বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বোনকে দিয়ে দলের নীতি নির্ধারণী গোপনীয়তা কতটুকু রক্ষা হবে?
বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, ‘আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ব্যারিস্টার শাহাজাহান ওমর, খন্দকার মাহাবুব হোসেনদের বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদের যথার্থমূল্যায়ন করতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি যদি নিজেকে দলের মালিক আর বাকিদের কর্মচারী মনে করেন তাহলে দল হয়তো থাকবে, কিন্তু সেই দল দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার বা খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। দলীয় হাইকমান্ডের সর্বশেষ এই সিদ্ধান্তের ফলে সিনিয়র অন্তত অর্ধশত নেতা নাখোশ হয়েছেন। অনেকে হয়ত দল ত্যাগ না করলেও রাজনীতি করার মানসিকতা হারাবেন।
স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে আলোচনায় থাকা ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার দ্বারা সম্ভবত এ দল আর করা হবে না।’
স্থায়ী কমিটি শূন্যপদে আলোচনায় থাকা আরেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাবুব হোসেন বলেন, ‘দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভালো। কিভাবে নিয়েছে এ নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’
এদিকে দলের মূল্যায়ন পেয়ে সারা দেশের নেতা-কর্মীরা খুশি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থায়ী কমিটিতে নবনিযুক্ত দুই সদস্য। বেগম সেলিমা রহমান ‘সারা বাংলাদেশ থেকে কর্মীরা আমাকে উইশ করছেন। নেতা-কর্মীদের রেসপন্স ভালোই হবে,
এটা স্বাভাবিক কথা, কারণ আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিতে আছি। আমাদের যে কাজ আছে তা নিয়ে আমরা সামনে আগানো মানেই তো কর্মীদের উৎসাহ।’
আপনাদের পদায়ন বা দলের মূল্যায়নটা আরও আগে হওয়া উচিত ছিল কিনা-দেরি হয়ে গেলো কিনা জানতে চাইলে মৃদু হেসে তিনি বলেন, ‘দেখুন যে কোনো কর্মেরই একটা ফল আসে। কোন সময় আসবে সেটাতে কেউ বলতে পারে না।’
ইকবাল হাসান মাহামুদ টুকু বলেন, ‘নেতা-কর্মীরা খুশি, আমার সিরাজগঞ্জের মানুষ খুশি, আমি বগুড়াতে আছি, বগুড়ার নেতারা খুশি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি বড় দল, কখন পদায়ন হয় সেটা তো হিসেবে করে বলা যায় না। রাজনীতিতে কখন কার কি হয় এটা বলা কাঠিন।’
কেএইচ/এমআরএম